Friday, October 27, 2017

কম খরচে ঘুরে আসুন মালয়েশিয়া

ভ্রমণ কাহিনী-৩
কম খরচে ঘুরে আসুন মালয়েশিয়া

কাজী রিপন :

জীবন একটাই। কখন চলে যাবে কেউ জানে না। এই ছোট্ট জীবনে একটু সময় করে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী এই সুন্দর জগতটা একটু ঘুরে দেখুন। জীবনটাকে উপভোগ করুন। আর তাই আমার সকল বন্ধুদের জন্য কম খরচে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করার বিষয়ে তথ্য জানার জন্য আমার ক্ষুদ্র প্রয়াশ : এ পর্যায়ে উত্তর-পূর্ব এশিয়ার উন্নত দেশ মালয়েশিয়ার কথা। এত অল্প সময়ে কিভাবে এই দেশটা এত উন্নত হলো। তাহা না দেখলে অনুমান করা যাবে না। আবার লাখ লাখ বাংলাদেশী এই দেশে এসে নানারকম কাজ করছে। তাই অনেকের কাছে মালয়েশিয়া স্বপ্নের দেশ। এখানে বিশ্বখ্যাত কিছু স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান আছে। যাহা দেখার জন্য প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লাখে লাখে পর্যটক আসে মালয়েশিয়াতে। বিশেষ করে কুয়ালামপুর সিটির এক সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ বিল্ডিং “টুইন টাওয়ার”, গ্যাংটিং হাইল্যান্ড ও জগৎখ্যাত পর্যটন দ্বীপ লংকাউই আইল্যান্ড অন্যতম। তাই কম খরচে কিভাবে এগুলো দেখা যায় তার কাহিনী এবার বলছি।   

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে আমরা মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। আমাদের বিমান ছিল মালিন্দো এয়ারলাইন্সের। যাওয়ার পথে ঢাকা থেকে আমাদের বিমান ছেড়েছিল রাত সোয়া ১০টায়। আমরা পরের দিন ভোরে মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালাম। বিমানবন্দরে পৌছানোর পর আমরা যে বিষয়ের মুখোমুখি হলাম। তাহা দুঃখজনক হলেও সত্য। সেটি হচ্ছে, যেহেতু আমরা বাংলাদেশী। আর আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ মালয়েশিয়ায় গেছে কাজ করার জন্য। আবার অনেকে চোরা পথে মালয়েশিয়ায় গেছে। আবার কেউ আদম বেপারীদের খপ্পরে পড়ে সেখানে ভাল কাজ না পেয়ে পালিয়ে অন্য স্থানে কাজ করে, কেউবা বেড়ানোর জন্য ভিসা নিয়ে অথবা পড়া-লেখা করার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে পালিয়ে কাজ করে ইত্যাদি কারণে আমাদের বাংলাদেশীদের মালয়েশিয়ান পুলিশ, ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ এয়ারপোর্টে ভাল চোখে দেখে না। ঐ বছর বাংলাদেশ থেকে যে কোন এয়ারলাইন্সের বিমান এলেই,তারা ঘিরে ধরতো বিমান থেকে নামার পরই। যাহোক, আমাদের বিমানটি এয়ারপোর্টে পৌছানোর পর আমরা গেট দিয়ে নেমে আসার পরই আমাদের থামিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ। তারা ফ্লাইটের সমস্ত বাংলাদেশী যাত্রীদের টার্মিনালের একপাশে নিয়ে লাইন করে দাঁড় করালেন। যেমন টুরিস্ট ভিসা, কাজের ভিসা, ছাত্র ভিসা, বিজনেস ভিসা, চিকিৎসা ভিসা আর ট্রানজিট ভিসা ইত্যাদি করে লাইন করালেন। এরপর শুরু হলো জিঙ্গাসাবাদ। শেষে প্রথমে নারী ও শিশুদের ছেড়ে দিলেন, এরপর পর্যায়ক্রমে সবাইকে। আর যাদের বিষয়ে সন্দেহ হলো তাদেরকে তারা আলাদা স্থানে নিয়ে গেলো। যাহোক, আমরা এরপর ইমিগ্রেশনে এসে সবাই এক রকম ইন্টারভিউ দিয়ে, দেশে ফেরার এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং এর কাগজপত্র এবং কে কত ডলার এনেছি তাহা দেখিয়ে পাসপোর্টে সিল পেলাম অর্থাৎ ছাড়পত্র পেলাম। পরে টার্মিনালের ব্যাগেজ বেল্ট থেকে লাগেজ নিয়ে কাস্টমস্ এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে অবশেষে এয়ারপোর্টের বাহিরের টার্মিনালে এলাম।


এখানে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি, আমাদের ঐ বিমানে প্রায় ১৫/১৬ জন যাত্রী ছিল। যারা রংপুর অঞ্চল থেকে এসেছিল। এরা সবাই অশিক্ষিত এবং মনেহয় ক্ষেতমজুর। তারা ইংরেজী তো দুরের কথা ভাল করে বাংলাও বলতে পারেন না। তারা মালয়েশিয়া এসেছে ট্রানজিট নিয়ে লিবিয়া যাবে। এরা যখন আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন মালয়েশিয়ান পুলিশ বার বার তাদেরকে চরম অপমান করে বলছিল যে, তোরা লিবিয়া যাবি পশ্চিম দিকে। এই পূর্ব দিয়ে মালয়েশিয়া আইসো কেনো। তারা তো কোন কথার উত্তর দিতে পারছে না। তখন তাদেরকে নিয়ে আমাদের সামনে নানারকম অপমান ও তামাসা করতে লাগলো। আমরা এ ঘটনায় খুবই লজ্জা পাচ্ছিলাম। পুলিশরা ওই লিবিয়াগামীদের ইশারায় বলতে লাগলো, তোরা কি লিবিয়ায় যুদ্ধ করতে যাবি অথবা এইদেশে পালাবি ইত্যাদি। একপর্যায়ে পুলিশরা আমাদেরকে বললো, দেখুনতো উনারা যাবে লিবিয়া অথচ কেনো মালয়েশিয়া এসেছে ট্রানজিট নিতে। উনাদের দালাল বা এজেন্ট কোথায়, তাদেরকে জিঙ্গেস করুন। পরে আমাদের এক বন্ধু ওদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু তারা পরিস্কার কিছু বলতে পারলো না। তাই আমরাও আর কথা না বাড়িয়ে চলে এসেছিলাম ইমিগ্রেশনে। এ ঘটনা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কিছু আদম বেপারীর খপ্পরে পড়ে এদেশের সহজ-সরল অনেক মানুষ বিদেশের এয়ারপোর্টে এমন ঘটনা ঘটায়। আর তার জন্য আমরা পুরা দেশের মানুষ বিদেশী এয়ারপোর্টে কিছুক্ষেত্রে অবহেলিত হই। তবে দিন এখন অনেক পাল্টে গেছে, গত কয়েক মাস আগে মালয়েশিয়া হয়ে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ঘুরে এলাম। এবার কিন্তু ওই আগের অবস্থা দেখিনি। 

যাহোক, আমরা এয়ারপোর্টের বাহিরে এসে কুয়ালামপুর যাওয়ার জন্য প্ল্যান করলাম। প্রসঙ্গত: কুয়ালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালামপুর সিটির দুরত্ব প্রায় ৮৭ কিলোমিটার। টাঙ্গাইল থেকে প্রায় ঢাকার সমান দুরত্ব। যাওয়ার জন্য বাস, ট্রেন, মেট্রোরেল, টেক্সিসহ নানারকম গাড়ি আছে। তবে সবচেয়ে কম খরচ হবে ট্রেনে। এরপর বাসে গেলে। আমরা যেহেতু গ্রুপে ৬ জন ছিলাম। তাই আমরা একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করলাম। অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে, এই ৮৭ কিলোমিটার দুরত্ব যাওয়ার জন্য আমাদের মাত্র পৌনে এক ঘন্টা সময় লেগেছিল। আমাদের মাইক্রোবাসের ভাড়া ছিল ১৫০ রিঙ্গিত। আমরা কুয়ালামপুরের সকেট এলাকায় জালান রাজা রোডের থ্রি স্টার হোটেল সান্দারে উঠেছিলাম। হোটেলটি আমরা আগেই বুকিং করেছিলাম। ডাবল বেডের সুপিরিয়র রুমের ভাড়া ছিল ১২০ রিঙ্গিত। এই হোটেলটি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা রিসোর্টের মালিকের ছিল। আর সকেট এলাকা হচ্ছে কুয়ালামপুরের বিভিন্ন দেশের দুতাবাস এলাকা। অর্থাৎ ঢাকার গুলশান-বারিধারা-বনানীর মতো। আশে-পাশে সবকিছুরই একটু দাম বেশি। যাহোক, আমরা হোটেলে দুইদিনের জন্য উঠেছিলাম। হোটেল কাউন্টারে একজন বাংলাদেশী বন্ধুর সাথে পরিচয় হলো। তিনি জানালেন যে, যেহেতু আমরা বাংলাদেশ থেকে বুকিং নিয়ে এসেছি তাই তিনি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমাদের হোটেল ভাড়ায় ডিসকাউন্ট দিতে পারলেন না। বুকিং করে না আসলে ভাল ডিসকাউন্ট দিতে পারতেন। আমরা যথারীতি হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে ঘুরাঘুরির জন্য বের হয়ে পড়লাম। বের হয়েই একটি মোবাইল সিম কিনলাম ৪জি নেটওয়ার্ক এর ইন্টারনেটসহ।

এবার ঘুরাঘুরি পালা : আমরা প্রথমেই টুইন টাওয়ার দেখার জন্য চলে গেলাম কেএলসি এলাকায়। সেখানে টুইন টাওয়ার, কেএলসি টাওয়ার ইত্যাদি ঘুরে দেখলাম। এখানে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য টুইন টাওয়ার বা প্রেট্রোনার্স টাওয়ার। যা দেখার জন্য প্রতিদিন অগণিত দশনার্র্থী আসে। পরের দিন আবার পুর্তজায়া, মেনেরা ইত্যাদি এলাকা ঘুরে দেখলাম। উঠলাম মেট্রোরেলে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতেই হয় যে, মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুর সিটিতে সরকারি বাসে কোন ভাড়া লাগে না। তাই  এই সরকারি বাসে ঘুরলে কোন টাকা খরচ হবে না। আর এই বাসে উঠে দেখলাম, মালয়েশিয়ান লোকের চেয়ে বিদেশী যাত্রীই বেশি উঠে আছে। এছাড়া এই বাসগুলি এসি বাস। আবার সাথে আছে ফ্রি ৪জি নেটওয়ার্কের ওয়াইফাই ইন্টারনেট। কাজেই বাসে ভাড়া নেই আবার ফ্রি ইন্টারনেটও ব্যবহার করতে পারবেন। এতেই ভাবুন, ওরা আমাদের চেয়ে কত উন্নত। বাসগুলি কিছুদুর পর পর বিভিন্ন স্টপসে গিয়ে থামছে। দরজা খুলে যাচ্ছে। যাত্রী নামছে আবার উঠছে। বাসে শুধু ড্রাইভার আছে। কোন হেলপার বা কনট্রাকটর নাই। তবে বেসরকারি কোম্পানীর গাড়িও আছে। সেখানে ভাড়া লাগে।
 

যাহোক, পরের দিন আমরা চললাম সেই বিশ্বখ্যাত পর্যটন দ্বীপ লংকাউই আইল্যান্ড এর উদ্দেশ্যে। আমরা আগেই দেশ থেকে একসাথে রিটার্নসহ কুয়ালামপুর টু ঢাকা এবং কুয়ালামপুর টু লংকাউই আইল্যান্ড এর এয়ার টিকেট কিনেছিলাম। এখানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, বন্ধুবর সাংবাদিক, বর্তমানে ঢাকাতে একটি টেলিভিশনের নিউজ এডিটর রনজক রিজভী ভাইয়ের প্রতি। তিনি আমাদের কম দামে সবগুলো এয়ার টিকেট কিনে দিয়েছিলেন। যাহোক, আমরা হোটেলের এর বুফেতে সকালের ফ্রি নানারকম নাস্তা খেয়ে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা হলাম। কুয়ালামপুর আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট যেতে আমাদের মাইক্রোবাসে ভাড়া লাগলো ১২০ রিঙ্গিত। আমরা মালিন্দো এয়ারের বিমানে করে মাত্র এক ঘন্টায় পৌছে গেলাম সেই স্বপ্নের দ্বীপ লংকাউই আইল্যান্ডে। ছোট-বড় শতাধিক দ্বীপ নিয়ে লংকাউই আইল্যান্ড। এটি বর্তমানে মালয়েশিয়ার শাসনাধীন একটি জেলা। আন্দামান সাগরের মাঝে প্রায় একশত ছোট-বড় দ্বীপ দিয়ে লংকাউই আইল্যান্ড। এক সময় ব্রিটিশদের শাসনে, পরে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের শাসনে আর এখন মালয়েশিয়ার শাসনে আছে।


যাহোক, লংকাউই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। আন্দামান সাগরের মাঝে প্রায় একশত ছোট-বড় দ্বীপ দিয়ে লংকাউই আইল্যান্ড। একমাত্র এই আইল্যান্ডের এয়ারপোর্ট থেকে আপনি অতি নিকটে বিমান দেখতে পাবেন এবং বিমানের নিকটে তাড়াতাড়ি ছবিও উঠাতে পারবেন। যাহা অন্য কোন এয়ারপোর্টে সম্ভব নয়। আমরা মালিন্দো এয়ারের একটি বোয়িং ৭৩৭ থেকে এয়ারপোর্টে নেমেই ছবি তুলেছি। এরপর আমরা একটি মাইক্রোবাস নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে পানতাই চেনাং বিচের সবচেয়ে ভাল ভিউ এলাকার এবি মোটেল এর দোতলার একটি ফ্যামিলি ফ্লাটে উঠলাম ৩ রাত থাকার জন্য। এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে যে, যারা মালয়েশিয়া গিয়ে লংকাউই আইল্যান্ড দেখেন নাই তাদের ট্যুর অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কারণ এই দ্বীপে এতো সুন্দর সুন্দর ঘুরার স্পট রয়েছে যে, যাহা না দেখলে মালয়েশিয়া ভ্রমনই বৃথা। এই আইল্যান্ড টুরিষ্টদের জন্য ফ্রি জোন এলাকা। এখানে ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত দেশের টুরিষ্টরা বেড়াতে আসেন। এছাড়া এই আইল্যান্ডের প্রায় সব দোকান ও মাকের্ট ডিউটি ফ্রি শপ। তাই সবকিছুর দাম এখানে অনেক কম। যারা গেছেন তারা এটা জানেন। এই দ্বীপে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে উচ্চ ক্যাবল কার রয়েছে, এছাড়া এখানে রয়েছে বড় ঈগল স্কয়ার, স্কাই ব্রিজ, বিশাল পাখির পার্ক, কুমির, বানর এর ফিডিং, ওয়াটার আইল্যান্ডসহ অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ঘুরে দেখার স্পট। আর এই দ্বীপের সবচেয়ে ব্যস্ত বিচ হচ্ছে পানতাই চেনাং বিচ। এই পানতাই চেনাং বিচের সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্থান হচ্ছে দুটি বিশাল ঝাউ গাছ এলাকা। আর এই গাছই আমাদের হোটেল এর জায়গায়। সুতরাং আমাদের এবি মোটেল থেকে সবকিছুই দেখা যায় অসাম। যাহোক, আমরা লংকাউই আইল্যান্ডে এবি মোটেলে উঠার পর ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়েই সবার মাথা খারাপ অবস্থা। বাহিরের এতো সৌন্দর্য দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে সাথে সাথে বের হয়ে পড়ি। রাত অবধি ১০ টা পর্যন্ত ঘুরলাম। এরপর হোটেল এর সামনে থেকে পরের দিনের বেড়ানোর ট্যুর প্যাকেজ কিনলাম। পরেরদিন সকালে ট্যুর কোম্পানী সকাল ৮টার মধ্যে আমাদের স্পীড বোর্ড দিয়ে আন্দামান সাগরের মাঝে বিভিন্ন দ্বীপে নিয়ে গেল। এরপর স্বচ্ছ পানির বিচ, ঈগল ফিডিং এলাকা, মানকি ফিডিং এলাকা, টুকরা টুকরা পাহাড়সহ নানাস্পটে সারাদিন ঘুরালেন। দুপুরে তারা আমাদের একটি দ্বীপে নিয়ে লাঞ্চের খাবার প্যাকেট দিলেন। সারাদিন খুবই আনন্দ পেলাম। আর আনন্দের দৃশ্য কখন যে ক্যামেরাবন্দী করেছেন স্থানীয় কিছু ট্যুর কোম্পানীর লোক। তাহা কেউ জানে না। তবে ফিরে আসার সময় আপনার চোখের সামনে সেই ছবিগুলি প্রিন্ট করে সাজিয়ে রাখবে তারা। যদি আপনার পছন্দ হয় তবে স্মৃতি ধরে রাখতে আপনি ছবি কিনতে পারেন।

  
পরেরদিনের সকাল বেলা নাস্তা খেয়েই আমরা ঘুরতে চললাম। প্রথমে আমরা সেই এশিয়ার সবচেয়ে উচ্চ ক্যাবল কারে উঠার জন্য চললাম। ঐ ক্যাবল কারে উঠার জন্য পর্যটকদের দীর্ঘ লাইনের সারি। আমরা যথারীতি টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্যাবল কারে উঠলাম। ক্যাবল কারে ইউরোপ-আমেরিকার টুরিষ্টরাই বেশি। যাহোক, ক্যাবল কারে উঠে কেউ কেউ ভয়ে অস্থির। কেউ আবার চোখ বন্ধ করে রাখে। কারণ এতো উচুতে উঠছি যে, নিচে তাকালে মাথা খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা। আর এই আইল্যান্ডের ভিতরে যে এতো উচু পাহাড় আছে তাহা ক্যাবল কারে না উঠলে জানতে পেতাম না। প্রায় মেঘের কাছাকাছি ক্যাবল কারের শেষ মাথা। মাঝখানে একটু বিশ্রামের জন্য ল্যান্ডিং স্টেশন আছে। সেখানে সবাই নেমে বিশ্রাম নেয়। পরে যারা আরো উপরে উঠতে চায় তারা আবার কারে উঠে উপরের ল্যান্ডিং স্টেশনে যায়। আর এখানে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাওয়ার স্কাই ব্রিজ আছে। সেখানে সাহসীরাই ঘুরে দেখেন। তবে ক্যাবল কারের উপরের ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে পুরো লংকাউই আইল্যান্ডের ভিউ দেখে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। আমরা মুগ্ধ ও বিমোহিত হয়েছিলাম এবং আল্লাহ্রর নিকট শুকরিয়া আদায় করলাম এতো সুন্দর জায়গা দেখার জন্য। এরপর নামার পথে কারে একটু ভয় করে প্রায় সবারই। তবে চীরদিন মনে থাকবে এই দৃশ্য। আর এই কারে উঠার দৃশ্য কখন যে ক্যামেরাবন্দী করেছেন স্থানীয় কিছু ট্যুর কোম্পানীর লোক। তাহা কেউ জানে না। তবে ফিরে আসার সময় আপনার চোখের সামনে সেই ছবিগুলি প্রিন্ট করে সাজিয়ে রাখবে তারা। যদি আপনার পছন্দ হয় তবে স্মৃতি ধরে রাখতে আপনি ছবি কিনতে পারেন। এরপর আমরা আরো কয়েকটি স্পটে ঘুরে ফিরে এলাম হোটেলে। পরেরদিন সকালে আবার ঘুরতে বের হলাম। প্রথমে গেলাম বিখ্যাত ঈগল স্কয়ারে। তারপর আরো কয়েকটি স্পট ঘুরলাম। এই আইল্যান্ডে ঘুরার অনেক স্পট থাকলেও খাবার হোটেল এর একটু সমস্যা আছে। বিশেষ করে আমাদের মতো বাংলাদেশীদের জন্য এখানে কোন খাবার হোটেল নাই। ইউরোপ-আমেরিকান খাবার, থাই-চাইনিজ এর অনেক হোটেল আছে। আমরা অনেক খুজে একটি ইন্ডিয়ান হোটেল পেয়েছিলাম। কিন্তু খাবারের আইটেম মোটেই ইন্ডিয়ান ছিল না। তাই এখানে কয়েকদিন আমাদের খাবার খেতে একটু অসুবিধা হয়েছে।


এবার এই আইল্যান্ডে কেনা-কাটার পালা। আগেই বলেছি, এই আইল্যান্ডের প্রায় সব দোকান ও মাকের্ট ডিউটি ফ্রি শপ। তাই সবকিছুর দাম এখানে অনেক কম। এছাড়া এখানে সবকিছুর দামই পণ্যের গায়ে লেখা আছে। তাই ধরদাম করতে হয় না। আমাদের গ্রুপের অনেকেই এখান থেকে শিশুদের চকলেট, বিভিন্ন খাবার, ব্যাগ, জুতা, পানীয় ইদ্যাদি কম দামে কিনে এনেছেন।
যাহোক, এবার লংকাউই আইল্যান্ড থেকে ফেরার পালা। পরেরদিন দুপুরে গেলাম এয়ারপোর্টে। মাত্র এক ঘন্টায় চলে এলাম কুয়ালামপুর এয়ারপোর্টে। লংকাউই আইল্যান্ডের এয়ারপোর্ট থেকেও সরাসরি বিভিন্ন দেশে যাওয়া যায়। যদিও আমরা লংকাউই আইল্যান্ড এ গিয়েছিলাম বিমানে। তবে এখানে সড়ক পথে আসা যায়। কুয়ালামপুর থেকে সরাসরি বাস এসে পরে বড় ফেরীতে সাগর পাড়ি দিয়ে চলে আসে এই লংকাউই আইল্যান্ডে। তাই যারা কম টাকা খরচ করে এখানে যেতে চান তাদের জন্য বাস সার্ভিসই উত্তম। বাসে একদিনেই আপনি পৌছে যাবেন লংকাউই আইল্যান্ড।


যাহোক, আমরা কুয়ালামপুর এয়ারপোর্ট থেকে আবার কুয়ালামপুর সিটিতে গেলাম। এবার আমরা উঠলাম সিটির সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা বুকিত বিনতানের হোটেল আওরাতে। এ সময় আমাদের এক বন্ধুর চাচা নাজমুল, যিনি দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় থাকেন। তিনি আমাদের সাথে যোগ দিলেন। নাজমুল চাচা, আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করেছেন। বিশেষ করে মাকেটিং করার সময় তার পরামর্শ অনেক কাজে লেগেছে। তাই তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা সেখানে বাংলাদেশী খাবার এর হোটেল পেলাম কয়েকটি। যার মধ্যে একুশে খাবার হোটেল এর খাবার ভাল লেগেছে। কয়েকদিন পর দেশী খাবার খেয়ে খুব মজা পেলাম। এখানে সারারাতই শহর জেগে থাকে। নানারকম কর্মকান্ড চলে। আমরা রাতে ঘুরলাম এবং নানারকম কর্মকান্ড দেখলাম। পরেরদিন আমরা গ্যাংটিং হাইল্যান্ড দেখতে গেলাম। সাথে আরো কয়েকটি স্পট ঘুরলাম।


এবার কুয়ালামপুরে কেনাকাটার পালা। কুয়ালামপুর শহরে অনেক বিশাল বিশাল মার্কেট আছে। সব মাকের্টই বহুতলবিশিষ্ট। এরমধ্যে জিএম প্লাজা ও মাইডিন প্লাজায় কসমেটিকসহ নানারকম পণ্য পাইকারী মাকের্ট। এখানে দাম অনেক কম। আর ইলেকট্রনিক্স পণ্য কেনার জন্য লয়েড প্লাজাই শ্রেষ্ট। এখানে অরিজিনাল সব ব্রান্ডের মাল পাওয়া যায়। দামও কম। আর সোনার গহনার জন্য জালান মসজিদ রোডের ইন্ডিয়া মাকের্টের হানিফা আছে। বিশাল স্বর্ণের মাকের্ট। এখানে ভাল মানের ২৩ ক্যারেট পর্যন্ত স্বর্ণ পাওয়া যায়। আছে হাজার হাজার স্বর্ণের বিস্কুট। যা দেখে আপনার মাথা ঘুরে যাবে। বাংলাদেশের চেয়ে সোনার দাম ভরিতে প্রায় ৫/৭ হাজার টাকা কম। কিন্তু স্বর্ণ আনুন দেশের কাস্টমস এর নিয়ম অনুয়ায়ী। তা না হলে ধরা খাবেন। একটি কথা, মালয়েশিয়ায় খারাপ পণ্য নাই বললেই চলে। এছাড়া এখানে সবকিছুর দামই পণ্যের গায়ে লেখা আছে। তাই ধরদাম করতে হয় না। আর কম দামের জিনিসপত্র কেনার জন্য আছে চায়না মাকের্ট। এখানে বিভিন্ন ধরণের মাল পাওয়া যায়। তবে অনেক দোকানে বাংলাদেশী সেলসম্যান পাবেন। আমাদের সময়ে মালয়েশিয়ার রিঙ্গিতের বিনিময় হার ছিল প্রতি রিঙ্গিতে প্রায় ২৩ টাকা। বর্তমানে এই রেট কমে হয়েছে ১ রিঙ্গিত সমান ২০ টাকা।


এবার ফেরার পালা। পরের দিন আমরা যথারীতি একটি মাইক্রো নিয়ে কুয়ালামপুর এয়াপোর্টে চলে আসি। সন্ধায় আমাদের ফ্লাইট ছিল। আমরা ওই রাতেই ঢাকা এয়ারপোর্টে আসি। পরে রাতেই বাড়ি চলে আসি। এ পর্যায়ে একজন বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তার নাম জাকির ভাই। বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। তিনিও মালয়েশিয়াতে সেই সময়ে ছিলেন পড়ালেখা করতে। তিনি আমাদের অনেক বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। আরও একটি বিষয় বলতেই হয় যে, মালয়েশিয়ার পথে-ঘাটে বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশী শ্রমিকরা কাজ করছে। বিশেষ করে, ক্ষেত-খামারে, নির্মাণ কাজে, দোকানে, হোটেলে, রেস্টুরেন্টে। এরা অনেক পরিশ্রম করে  দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের সাথে কথা হয়েছে। তাদের প্রতি রইল আমার লাখো সালাম ও স্যালুট। আবার অনেকে রাস্তাÑঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে কাজ না পেয়ে। যারা সম্মানের জন্যে দেশে আসছে না। তাদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করছি।


কম খরচের কিছু তথ্য :
১। প্রথমেই কোন দেশ ঘুরার জন্য এয়ার টিকেটই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দামী। তাই বর্তমানে যত আগে এয়ার টিকেট কিনবেন তত কম দামে পাবেন। অর্থাৎ আপনি ইচ্ছে করলে প্রায় এক বছর আগেও এয়ার টিকেট কিনতে পারবেন। এয়ার টিকেট অবশ্যই রির্টানসহ কিনবেন। এছাড়া বছরে বিভিন্ন বিমান সংস্থা ফেয়ার দিয়ে থাকে। সে সময়ে টিকিটও প্রায় অর্ধেক দামে পাওয়া যায়। বিশেষ করে রিজেন্ট এয়ারলাইন্স ও মালিনদো এয়ারলাইন্স বছরে একটি নিদিষ্ট মাসে ফেয়ার দিয়ে থাকে। তখন প্রায় অর্ধেক রেটে এয়ার টিকেট কিনে সারা বছরব্যাপি ভ্রমণ করা যায়। কাজেই এই সুযোগ কাজে লাগান।
২। ভিসা ফ্রি ও ভিসা ছাড়া ভ্রমন করা যায় এমন দেশ সম্পর্কে আপনার জানা থাকতে হবে। আর ভিসা ফ্রি সবচেয়ে কম খরচে করে (আমার দেখা) ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সী আছে। (নাম বললাম না, বললে এ্যাড. হয়ে যাবে)। অনেকে ভিসা ফ্রি সাধারণ রেটের চেয়ে এক থেকে দুই হাজার টাকা বেশি নিয়ে থাকে। তাই দরদাম করে ভিসা করতে হবে।
৩। আগেই বলেছি গ্রুপে বেশি লোক হলে খরচও কম হবে। তবে মিনিমাম দুইজন হতে হবে।
৪। বাজারে যখন ডলারের দাম কম থাকে তখন ডলার কিনে রাখতে হবে।
৫। বিদেশে গিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ডলার না ভাঙ্গানোই ভালো। কারণ এয়ারপোর্টে ডলারের রেট কিছুটা কম থাকে। তাই ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা কম দেয়।
৬। আপনার হোটেলের আশে-পাশে অনেক মানি এক্সচেঞ্জ দোকান পাবেন। যেখানে রেট বেশি, সেখান থেকে ডলার ভাঙ্গান। তবে ডলারের রেট সকাল-বিকাল উঠা নামা করে এবং বড় শহরে ডলারের রেট সাধারণত বেশি পাওয়া যায়।
৭। খাবারের হোটেলগুলোতে দরদাম করে খাবেন। প্রয়োজনে অন্য হোটেলে যাবেন।
৮। ঘুরাঘুরির প্যাকেজ কিনতে দরদাম করুন। কারণ আশে-পাশে অনেক ট্রাভেল এজেন্ট পাবেন।
৯। ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করতে হোটেলের অথবা স্থানীয় ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করুন।
১০। কুয়ালামপুর সিটিতে ঘুরতে সরকারি বাস ব্যবহার করুন। এতে ভাড়া লাগবে না।  
১১। সব সময় একসাথে গ্রুপ করে সব কিছু করুন। তাতে প্রায় সব কিছুতেই ডিসকাউন্ট পাবেন।


অবশেষে আমার এই লেখাতে কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। তবে কোথায় ভুল হয়েছে তাহা জানালে সংশোধন হবো ও করবো। যে কোন পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করবো। যোগাযোগ করতে পারেন। ফোন : ০১৭১১-১০৬৯৭০, ০১৭১৩-৫৩২৩৬৩। ই-মেইল : ripon.kazi@gmail.com


আমার লেখা : 
ভ্রমণ কাহিনী-১
কম খরচে ঘুরে আসুন থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও পাতায়া ।


ভ্রমণ কাহিনী-২
ঘুরে আসুন ভারতের হিমালয় কণ্যা দার্জিলিং






Tuesday, October 24, 2017

ঘুরে আসুন ভারতের হিমালয় কণ্যা দার্জিলিং

ভ্রমণ কাহিনী-২
ঘুরে আসুন ভারতের হিমালয় কণ্যা দার্জিলিং

কাজী রিপন :

জীবন একটাই। কখন চলে যাবে কেউ জানে না। এই ছোট্ট জীবনে একটু সময় করে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী এই সুন্দর জগতটা একটু ঘুরে দেখুন। জীবনটাকে উপভোগ করুন। আর তাই আমার সকল বন্ধুদের জন্য কম খরচে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করার বিষয়ে তথ্য জানার জন্য আমার ক্ষুদ্র প্রয়াশ : এ পর্যায়ে ভারতের হিমালয় কণ্যা দাজিলিং এর কথা। যেখানে সড়ক পথে মেঘের উপর দিয়ে আপনি যাবেন। মেঘ এসে আপনাকে ঘিরে ধরবে। কখনও হিমালয়ের ঠান্ডা হাওয়া, আবার কখনও ছায়া, কখনও রাতের মতো অন্ধকার, আবার কখনও ভয়, তারপরেই পাকা কমলালেবুর গ্রাণ, প্রতিটি মুহুতেই আপনি রোমান্স অনুভব করবেন। আর দার্জিলিং ঘুরে আসতে, আপনার কক্সবাজার ঘুরতে যে রকম খরচ হয়, সেইরকম খরচই হবে।


২৯ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে আমরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হিমালয় কণ্যা দার্জিলিং গিয়েছিলাম। আমাদের পথ ছিল লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার বুড়িমারি স্থল বন্দর হয়ে ভারতের কুচবিহার জেলার চেংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে শিলিগুড়ি। তারপর শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং। কারণ এই রোডে দার্জিলিং যেতে সবচেয়ে কম সময় লাগে এবং সবচেয়ে কম খরচ লাগে। আমরা শ্যামলী পরিবহনের সরাসরি ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার বাসের টিকিট নিয়েছিলাম। যেহেতু, আমরা টাঙ্গাইল জেলার লোক। তাই আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধা ছিল যে, শ্যামলী পরিবহনের গাড়িটি রাত ৮ টায় ঢাকার আরামবাগ থেকে ছাড়ে। আর এই গাড়ি টাঙ্গাইল হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে উত্তরবঙ্গ হয়ে চলে যায় বুড়িমারি। এরপর সীমান্তের ওপারে চেংরাবান্ধায় তাদের আরেকটি গাড়ি থাকে।

সেটাতে শিলিগুড়ি নিয়ে যায়। যাহোক, আমরা আর কষ্ট করে ঢাকা যাইনি। রাতে নিজের বাসায় খাওয়া-দাওয়া করে পরে বিশ্রাম নিয়ে টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের রাবনা থেকে রাত ১১ টার দিকে আমাদের গাড়িতে উঠি। আর যারা ঢাকা থেকে যেতে চান, তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাসটার্মিনাল থেকে বিভিন্ন পরিবহনের গাড়িতেও বুড়িমারি আসতে পারেন। তবে যারা প্রথমবার ঐ রোডে দার্জিলিং যাবেন। তাদের জন্য সরাসরি ঢাকা টু শিলিগুড়ির বাসে যাওয়াই ভালো। কারণ সরাসরি বাসে একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, বাস কর্তৃপক্ষ বুড়িমারি ও চেংরাবান্ধা সীমান্তের দুই স্থানেই আপনার ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসে আনুষ্ঠানিকতার সকল কাজে সহায়তা করবে। এছাড়া চেংরাবান্ধা থেকে বাসের সংখ্যা কম। তবে গ্রুপে বেশি লোক থাকলে সমস্যা হয় না। তখন সেখানে জিপসহ নানারকম গাড়ি পাওয়া যায়। কিন্তু একা বা দুইজন হলে একটু সমস্যা হয়। তবে যদি টাকা থাকে আপনার বেশি, তবে কোথাও কোন সমস্যা নেই। একাই আপনি ট্যাক্সি ভাড়া করে যেতে পারবেন শিলিগুড়ি। যাহোক, আমরা ভোরে বুড়িমারি পৌছালাম। বুড়িমারি পৌছে আমরা টের পেলাম যে, আমরা হিমালয়ের দিকে যাচ্ছি আর শীতে ঠান্ডার মাত্রা কত বেশি তাহা বুঝতে পারলাম। পরে সেখানে ফ্রেস হয়ে ঐতিহ্যবাহী সেই বুড়ির হোটেলে সকালে নাস্তা খেয়ে ইমিগ্রেশনসহ যাবতীয় কাজ সেরে ভারতের চেংরাবান্ধা পৌছালাম। পরে সেখানকার মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার ভাঙ্গিয়ে রুপি নিলাম। এরপর শ্যামলী পরিবহনের তাদের আরেকটি বাসে শিলিগুড়ি রওনা হলাম। চারিদিকে সবুজ-শ্যামল আর নতুনত্ব দেখে আমরা মুগ্ধ হলাম। চেংরাবান্ধা থেকে শিলিগুড়ি যেতে ২ থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। পরে আমরা শিলিগুড়ি শহরের মালাগুড়ি মোড়ে শ্যামলীর কাউন্টারে নামলাম। সেখানে নেমে ফ্রেস হয়ে আমাদের চোখে পড়লো একটি খাবার হোটেল। তার নাম “ঢাকাইয়া হোটেল”। পেটে ক্ষুধাও অনেক। তাই দেরি না করে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য হোটেলে ঢুকলাম। হোটেলে ঢুকতেই এক মহিলা এসে বলল, আপনারা ঢাকা থেকে এসেছেন। আমরা বললাম বাংলাদেশ থেকে। শুনেই ঐ মহিলা বলল, আমিই একমাত্র যে, এই শিলিগুড়ি শহরে বাংলার মতো অর্থাৎ বাংলাদেশের মতো ভাত-মাছ রান্না করি। আমার এখানে খেলে শান্তি পাবেন। অন্য হোটেলে খেলে আপনাদের কষ্ট হবে। আর আমার এখানে দামও কম। প্রসঙ্গত: ঐ মহিলাই এই ঢাকাইয়া হোটেল এর মালিক। যাহোক, আমরা ভাত-মাছ-সবজি খেলাম। সত্যিই দেশের মতো রান্না এবং দামও কম। পরে কথা প্রসঙ্গে জানতে পেলাম, ঐ মহিলার বাপ-দাদারা ঢাকায় থাকতেন। পরে তারা শিলিগুড়ি চলে আসেন। তিনি তার বাপ-মার নিকট থেকে রান্না শিখেছেন। তাই হোটেলের নাম দিয়েছেন ঢাকাইয়া হোটেল। আর বাংলা থেকে লোক আসলে তার হোটেলে খেয়ে শান্তি পায় বলে তিনি জানালেন। এরপর আমরা শহরে মোবাইল সিম কেনার চেষ্টা করলাম কিন্তু খুচরা দোকানে আমাদের মোবাইল সিম দিলো না। যাহোক, ঐ হোটেল এবং শ্যামলী কাউন্টারের সামনে দিয়ে দার্জিলিং এর বাস ও জিপসহ বিভিন্ন গাড়ি যাচ্ছে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাবার সড়ক পথ দুটি। প্রথমটি হচ্ছে শিলিগুড়ি-শিমুলবাড়ি-পাঙ্খাবাড়ি-কার্শিয়াং-সোনাদা-ঘুম-দার্জিলিং এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, শিলিগুড়ি-সুকনা-তিনধারিয়া-কার্শিয়াং-সোনাদা-ঘুম-দার্জিলিং। প্রথমটি ৬৭ পরেরটি ৮১ কিলোমিটার পথ। কার্শিয়াং এসে দুটি রাস্তাই একহয়ে গেছে। আমাদের টার্গেড ছিল দার্জিলিং যাওয়ার দুটি পথই আমরা দেখবো। কারণ দুটি পথে কিছু আলাদা স্পট আছে যাহা মনোমুগ্ধকর। তাই আমরা ঠিক করলাম যাবো এক পথে আর আসবো আরেক পথে। সাধারণত বাস একটু বড় বিধায় তারা দ্বিতীয় রোড দিয়ে যায় দার্জিলিং। আর জিপসহ ছোট গাড়িগুলি একটু সর্টকার্ট রাস্তা ও একটু বিপদজনক রোড প্রথমটি দিয়ে যায় দার্জিলিং। এছাড়া আপনি ইচ্ছে করলে টয় ট্রেনে যেতে পারবেন। তবে টয় ট্রেন বছরে একটি নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত চলাচল করে। পরে বর্ষার সময় এটা কিছুদিন বন্ধ থাকে। বিশ্ব হেরিটেজ টয় ট্রেনে যেতে শিলিগুড়ি থেকে নিউ জলপাইগুড়ি টয়ট্রেন স্টেশনে যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে টয়ট্রেনে আপনি যেতে পারবেন দার্জিলিং। তবে টয় ট্রেনে সময় অনেক বেশি লাগে এবং সকালের দিকে টয় ট্রেন চলে। যদি আপনি শিলিগুড়ি দুপুরের পর পৌছান তবে আপনার জন্য খোলা থাকবে শুধু সড়ক পথ। এছাড়া এখানে বিমানে আসা যায়। নিকটস্থ বিমানবন্দর হচ্ছে বাগডোগরাতে। এখান থেকে দার্জিলিং ৯০ কিলোমিটার।


যাহোক, আমরা আটজন একটি পাজোরো জিপ রিজার্ভ করলাম। প্রতিজন ভাড়া পড়লো মাত্র ২০০ রুপি। আপনি ইচ্ছে করলে ঐ জিপে ১০জন যেতে পারবেন। এছাড়া বাসে আরো ভাড়া কম। বাসে যেতে হলে বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। যাহোক, আমরা ড্রাইভারকে বললাম প্রথম পথেই যাবো। চললো জিপ দার্জিলিং এর পথে। শিলিগুড়ি জেলা সদর শহর না। অথচ এত উন্নত একটি থানা শহর যাহা না দেখলে বুঝা যাবে না। শহর ছাড়িয়ে কিছুদুর যেতেই মহাসড়কের পাশ দিয়ে চোখে পড়লো ভারতের বিশাল সেনানিবাস এলাকা। পরে চারিদিকে বন আর গাছ। এই এলাকার নাম সুকনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় “কাজল ঢালা গহন বন”। এরপর সামনে কালো মেঘের মতো হিমালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ের সারি। পাহাড়ের উঠার আগেই বিশাল টোল প্লাজা। পাহাড়ের রাস্তায় উঠায় আগে সব গাড়িকেই টোল দিতে হয়। সেখানে লেখা আছে হিমালয়ান হাইওয়ে শুরু। যাহোক, আমাদের জিপ সামনে কিছুদুর যেতেই মাথা খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা। বিশাল পাহাড় বেয়ে বিভিন্ন গাড়ি উঠছে। নিচ থেকে দেখে মনে হচ্ছে, কচ্ছপ যাচ্ছে। আমি গাড়ির সামনে ছিলাম। আমাদের জিপ যখন বিশাল পাহাড় বেয়ে উঠতে লাগলো। তখন কারো চোখে ভয়ের ছাপ, আবার কারো চোখ বন্ধ। আমি প্রথমে ভয়ে আল্লাহ্র নাম নিলাম। পরে আস্তে আস্তে কৌতুহল হয়ে দেখলাম আর আল্লাহ্র নিকট শুকরিয়া আদায় করলাম। চারিদিকে এত সুন্দর প্রকৃতি ও পাহাড়। তার বুক চিড়ে আমাদের গাড়ি শুধু উপরের দিকে উঠছে। এরপর আমরা প্রায় মেঘের কাছাকাছি রাস্তায় পাহাড়ের ঢালে একটি চায়ের দোকানে থামলাম। গাড়ি থেকে নেমেই দমকা ঠান্ডা হাওয়া লাগলো। খুবই শীত। যতই সামনে যাচ্ছি ঠান্ডা ততই বাড়ছে। দোকানে পাহাড়ী মহিলা তরতাজা দুধ চা দিলেন। কারণ এ অঞ্চলে রং চা নেই। খেতে খুবই সুস্বাধু। পরে আবার চললাম পাহাড়ের ঢালে বয়ে যাওয়া সড়ক দিয়ে। কিছুদুর পর পর এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়। এরপর ছোট ছোট শহর পাহাড়ের ঢালে, উপরে ও নিচে। এক সময় আমরা পৌছালাম সেই দুইপথের মিলনস্থলের কার্শিয়াং শহর। শহরটি ছবির মতো সুন্দর। এরপর আমরা প্রথম দেখলাম রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া টয় ট্রেন লাইন। পাহাড়ের ঢাল দিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠে গেছে। এরপর দেখি কুয়াচ্ছন্ন মেঘ আমাদের গাড়ির জানালা দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছে। যেতে যেতে তখন শেষ বিকেল। আমাদের গাড়ির বাতি জ্বলে উঠলো। আমরা থমকে গেলাম। আমরা আনন্দে হইচই করতে লাগলাম। এটা ঘুম শহর। একটু পর অন্ধকার কেটে গেল। আমরা এবার মেঘের উপরে উঠে গেছি। আমরা পৌছালাম ঘুম শহরে।
রাস্তার সাথেই রেলস্টেশন। দার্জিলিং এ এই পর্যন্তই রেললাইন গেছে। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম রেলস্টেশন। যার নাম ওয়ার্ল্ড বুক অফ গিনেজে উঠেছে। জায়গাটি বছরের প্রায় দশমাসই মেঘলা থাকে। তাই দিনের বেলাতেও গাড়িগুলো ফগ লাইট জ্বালিয়ে চলে। এই স্থানের উচ্চতা সাড়ে ৮ হাজার ফিট। এখানে অন্যরকম এক অনুভূতি। রবীন্দ্রনাথ এখানে এসেছিলেন। গল্প লিখেছেন ঘুমমনেস্টি নিয়ে। তার ভাষায় এলাকাটি ঘুমন্ত ও শান্ত সৃষ্ট স্থান। অবশেষে সন্ধার পর আমরা পৌছালাম সেই হিমালয় কণ্যা দার্জিলিং শহরে। শহরে নেমেই শীতের তীব্রতা টের পেলাম। তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ছুই ছুই। এরইমধ্যে ড্রাইভারকে আগেই বলেছিলাম যে, আমাদের থাকার হোটেল লাগবে মধ্যম কিন্তু ভাল মানের। যে হোটেলের উপর থেকে দার্জিলিং শহরের ভাল ভিউ দেখা যাবে। পাশাপাশি খাবার হোটেল আছে এই রকম হলে ভাল হয়। ড্রাইভার আমাদের কথা বিবেচনা করে মধ্যম ভাল মানের “সোসাইটি হোটেলে” নিয়ে গাড়ি থামালেন। আমরা নেমে দরদাম করে রুম ঠিক করে ফেলনাম তিন রাতের জন্য। 
পরে হোটেলের রুমে লাগেজ রেখেই হোটেলের নিচে রেস্টুরেন্টে খেতে এলাম। কিন্তু খাবার ভাল না পেয়ে হোটেলের বাহিরে যেতেই পেয়ে গেলাম মোবাইল কোম্পানী বোডা ফোনের কাস্টমার সেন্টার। সেখান থেকে ১০০ রুপি আর পাসপোর্ট ফটোকপি ও ছবি দিয়ে একটি সিম কিনলাম ডাটাপ্যাকেজসহ। পরে একটু নিচে যেতেই পেয়ে গেলাম মুসলিম খাবার হোটেল। হোটেলের ভিতরে ঢুকতেই মালিক দাঁড়িওয়ালা সালাম দিলেন। হুজুরদের মতো টুপি পড়ে বসে আসে। আমরা বললাম, বাংলাদেশ থেকে এসেছি। আমরা মুসলিম। শুনেই উনি খুশি হলেন। বললেন, দার্জিলিং শহরে দুটি মুসলিম খাবার হোটেল আছে। যাহা এখানেই। আর এই হোটেলের পাশেই শহরের একমাত্র মসজিদ। যাহোক, রাতের খাবার খেলাম। তখন হোটেল মালিক বললো, তার কয়েকটি জিপসহ অন্যান্য গাড়ি আছে। আমাদের আগামীকালের ঘুরাঘুরির ট্যুর প্যাকেজ তিনি দিতে পারেন। আমরা তার নিকট থেকে পরের সারাদিনের ঘুরাঘুরির ট্যুর প্যাকেজ দরদাম করে জেনে নিলাম। হোটেলে ফিরে কাউন্টারে ঐ একই প্যাকেজ এর দরদাম করলাম। কিন্তু আগে ওই খাবার হোটেল এর মালিকের ট্যুর প্যাকেজটিই আমাদের নিকট ভাল, কম মূল্য ও ভাল জিপ গাড়ি মনে হলো। তাই আমরা ওই খাবার হোটেলের মুসলিম মালিক এর ট্যুর প্যাকেজ কিনলাম। তিনি আমাদের বললেন, প্রথমেই শেষ রাতে উঠে যেতে হবে টাইগার হিলে। তাই রাত ৪টায় উঠে পড়বেন। আপনাদের হোটেলের সামনে গাড়ি থাকবে এবং গাড়ির ড্রাইভারের মোবাইল নম্বর দিলেন। আমরা তো খুবই ক্লান্ত। আগেরদিন থেকে শুধু জার্নির মধ্যে আছি। তাই শেষ রাতে উঠতে হবে ভেবে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।


এবার ঘুরাঘুরির পালা :
টাইগার হিল: শেষ রাতে উঠে যথারীতি তৈরি হয়ে হোটেলের সামনে আসতেই দেখি গাড়ি। তারপর বের হলাম টাইগার হিলের সেই বিখ্যাত সূর্যোদয় দেখতে। টাইগার হিল হচ্ছে দার্জিলিং এর সব্বোর্চ্য চুড়া। এখান থেকে সুর্যোদয়ের সময় হিমালয়ের বিভিন্ন রূপ দেখা যায়। বিশেষ করে যখন সূর্যের আলো হিমালয়ের বরফাচ্ছিত চুড়ার উপর পড়ে তখন সেটা সোনালী রং ধারণ করে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি করে। আর সেটা এত অপরূপ দেখা যায় যে, না দেখলে বিশ্বাস হবে না। টাইগার হিল শহর থেকে ১১ কি.মি.দূরে ২৫৯০ মিটার উঁচুতে। সূর্যোদয়ের দৃশ্য ও এভারেস্ট শৃঙ্গটি দেখবার জন্য এটা বেস্ট। তবে এখানে ঠান্ডা অনেক বেশি হলেও এটার সৌন্দর্য না দেখলে জীবন অপূর্ণ থেকে যাবে। টাইগার হিলে ঢুকতে জনপ্রতি ১০ রুপি করে টিকিট।
এরপর আমরা পর্যায়ক্রমে চৌরাস্তা থেকে এগিয়ে অবজারভেটরি হিলে অনুপম নিসর্গ দৃশ্য, পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চ রেলস্টেশন ঘুম, রেল স্টেশনের নিচে ধীরধাম মন্দির, চৌরাস্তা থেকে হাঁটা পথে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম(টিকিট জনপ্রতি ২০ রুপি), ন্যাশনাল চিড়িয়াখানা (চিড়িয়াখানার টিকিট জনপ্রতি ২০ রুপি), মার্কেট মটর স্ট্যান্ডের কাছে লয়েডস্ বোটানিক্যাল গার্ডেন, শহর থেকে ৩ কি.মি.দূরে নর্থ পয়েন্টে দার্জিলিং - রঙ্গিত ভ্যালি প্যাসেঞ্জার রোপওয়ে চড়ে ৪ কি.মি.দূরে সিংলা বাজারে যাওয়া ও ঘুরে দেখলাম। পরেরদিন বাতাশিয়া ওয়ার মেমোরিয়াল পার্ক ও ইকো গার্ডেন এ গেলাম। টিকিট জনপ্রতি ১০ রুপি। এখানে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে অনেক সৈন্য নিহত হয়। তাদের স্মরণে এখানে স্মৃতিসৌধ বানানো হয়েছে। এরপর আমরা ৮ হাজার ফিট উপরে একটি চা বাগান, হিমালয়ান মাউন্টরিং ট্রেনিং ইন্সস্টিটিউট, দার্জিলিং এর  ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ফটো এক্সিবিশন হল, তিব্বতি রিফিউজি সেন্টারসহ কয়েকটি স্পটে ঘুরলাম।



এবার কেনাকাটার পালা : শহরের প্রাণকেন্দ্র ম্যাল। দার্জিলিং শহর মুলত শীত প্রধান। তাই এর মাকের্টগুলোতে শীতের বিভিন্ন ধরণের স্থানীয় ও চায়না পোশাক ও মালে ঠাসা। এরমধ্যে লেদার জ্যাকেট, পশমী চাদর ও শাল ইত্যাদি একটু কম দামে পাওয়া যায়। তবে চা বাগানে গেলে গ্রীন টি কিনতে ভুলবেন না। এটি খুবই উপকারী। আর সবকিছুতেই দরদাম করে কিনবেন। সব দোকান ও মাকের্টগুলো শীতের দিনে সন্ধার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া এখানে বিভিন্ন ধরণের হাতে তৈরি হস্তশিল্পের জিনিস পাবেন কম দামে। আর শহরে কেভেন্টার্সের কাউন্টার থেকে হটডগ খেতে ভুলবেন না। কারণ এটা জগৎ বিখ্যাত হটডগ খাবার প্রস্তুতকারী দোকান।    

এবার ফেরার পালা। ফেরার পথে ট্রয় ট্রেনের টিকিট কিনতে গিয়ে জানতে পারলাম, মেরামত কাজের জন্য কিছুদিন ধরে টয় ট্রেন বন্ধ আছে। পরে আবার আরেকটি জিপ ভাড়া করে সকালে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম দ্বিতীয় পথটা ধরে। আসার পথে আরো কয়েকটি সুন্দর পাহাড়ী শহর ও কমলা লেবুর বাগান দেখলাম। দুপুরের আগেই শিলিগুড়ি পৌছালাম। এরপর শিলিগুড়ি শহরের হিলকার্ট রোডের “হোটেল নিলাদ্রি প্লাজা”য় উঠলাম। পরে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে শিলিগুড়ি শহরের আশে পাশে দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরলাম।

শেষে শুরু হলো মাকেটিং এর পালা। শিলিগুড়ির বিধান মাকের্টে অনেক ব্যবসায়ী সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া-রাজশাহীর লোক। সেখানেও দেখলাম শাড়ীর দোকানে টাঙ্গাইল শাড়ী বিক্রি হচ্ছে। যাহোক, শিলিগুড়িতে কসমেটিক্স, চাদর, শাল, চা ইত্যাদি একটু কম দামে পাওয়া যায়। আর মজার বিষয় হচ্ছে, শিলিগুড়ি শহরে কাঁচা বাজারে হরেক রকম সবজি দেখে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। ভোর সকালে তরতাজা লাল, হলুদ, সবুজ আরো কত রংয়ের ক্যাপচিক্যাপ আর আছে সালাদ খাওয়ার আধ হাত লম্বা ও মোটা কাঁচামরিচ। এছাড়া বড় বড় কমলা লেবু ও আমলকি দেখে খুব ভাল লাগবে। আমরা চলে আসার দিন সকালে অনেক বড় সাইজের কমলা লেবু মাত্র ২০ রুপি হালি দরে(যা এদেশে ২০০ টাকা হালি)আর লাল ও হলুদ ক্যাপচিক্যাপ মাত্র ৩০ রুপি কেজি (যা এ দেশে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি) আর সবুজ ক্যাপচিক্যাপ মাত্র ১০ রুপি কেজি (যা এদেশে প্রায় ১০০ টাকা কেজি) ধরে ও লম্বা কাঁচা মরিচ কিনেছিলাম। আর ভাল মানের চা পাতার দামও অনেক কম। তবে আমরা চিন্তায় ছিলাম যে, হয়তো এই কাঁচা সবজি ও ফলমূল নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের সবকিছু পরের দিন সকালে একদম তাজাই ছিল। যাহোক, ফেরার সময় শিলিগুড়িতে শ্যামলী পরিবহনের সরাসরি গাড়ি পায়নি। কারণ সেদিন ছিলো রবিবার। আর রবিবার শ্যামলী পরিবহনের ঢাকাগামী সরাসরি গাড়িটি সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে। তাই আমরা একটি পাজেরো জিপ ভাড়া করে শিলিগুড়ি থেকে চেংরাবান্ধা সীমান্তে পৌছালাম। পরে সেখান থেকে যথারীতি ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য কাজ শেষ করে চলে এলাম বুড়িমাড়ি। পরে বুড়িমারি থেকে রাতে বাসে করে চলে এলাম ভোরে টাঙ্গাইল শহরে। আর বুড়িমারি থেকে অনেক পরিবহনের বাস ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তম্ব্যে ছেড়ে যায় রাতে। তাই এখানে গাড়ির কোন সমস্যা নেই।
এই অঞ্চলে বেড়ানোর সময় মনে রাখবেন, দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি শহরে বেশিরভাগ খাবার হোটেলগুলোতে খাবার অর্ডার দিলে ডাবল দিয়ে দেয়। অর্থাৎ আপনি ডিম চাইলে দুটি ডিম দিবে, কারণ ওদের সিস্টেমই হচ্ছে ডাবল দেয়া। আর বিলও কিন্তু ডাবল এর নিবে। তাই প্রথমে টেষ্ট করুন।        

প্রয়োজনীয় তথ্য :
দার্জিলিং = টয় ট্রেনে আসতে= নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে = সকাল ৭:১৫ অথবা ৯টায় ট্রেন ছাড়ে = পৌছে কার্শিয়াং = ১২:৩২ ও ০২:০৬ এবং দার্জিলিং পৌছে = ০৩:৩০ ও ১৭:৩০। আবার দার্জিলিং থেকে ০৮:২৫ এবং ১০:০০ ছেড়ে কার্শিয়াং পৌছে ১১:০৫ ও ১২:৩৭ এবং নিউ জলপাইগুড়ি পৌছে ১৬:২০ ও ১৭:৪৫।
বাসে যেতে = শিলিগুড়ি শহরের মহানন্দা ব্রিজ পাড় হয়ে যেতে হবে তেনজিং নোরগে বাসটার্মিনাল। মিনিবাসে জানালার পাশে যেতে হবে। তাহলে জানালা দিয়ে অরূপ দৃশ্য দেখতে পাবেন। সড়ক = শিলিগুড়ি - সুকনা - তিনধারিয়া - কার্শিয়াং - সোনাদা - ঘুম - দার্জিলিং। দুরত্ব ৮১ কি.মি.। শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি ছাড়ার ২ ঘন্টা পর গাড়ি পৌছবে কার্শিয়াং। কিছু সময় বিরতি। এ সময় মেঘ উড়ে যাবে গা ছুঁয়ে। নিচে তাকিয়ে দেখলে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। এর পর আরো ১-২ ঘন্টা পর দার্জিলিং পৌছাবে। মোট সময় লাগে ৩-৪ ঘন্টা। দার্জিলিং এ বেড়ানোর ভাল মৌসুম = এপ্রিল - জুনের মাঝামাঝি এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর।
দার্জিলিং এ কম খরচের হোটেল হচ্ছে = গান্ধি রোডে সুইচ হোটেল / শবনম হোটেল / ক্যাপিটাল হোটেল / কদমবাড়ি হোটেল / স্পিং হোটেল / আশোকা হোটেল / কন্টিনেন্টাল হোটেল / রকভিল হোটেল। কোচবিহার রোডে ব্রডওয়ে হোটেল / সানরাইজ হোটেল। ক্লার্ক রোডে সামার বন হোটেল / সম্রাট হোটেল। বেলেম্পাং রোডে দার্জিলিং হোটেল / ওয়েসাইড ইন্টারন্যাশনাল / মিলন হোটেল। এছাড়া রবার্টসন রোডে / টংসু রোডে / বর্ধমান রোডে / ল্যাডনেলা রোডে কম রেটের হোটেল আছে। হোটেল ভাড়া ৪০০ থেকে ২,০০০ রুপি পর্যন্ত। এছাড়া দামী স্টার মানের হোটেলও আছে। খাবার এর জন্য মুসলিম হোটেল এর কথা আগেই বলেছি। এছাড়া মহাত্মা গান্ধি রোডে কুনডু হোটেল খাওয়ার জন্য ভাল।
ঢাকা থেকে ভারতের শিলিগুড়ি শ্যামলী বাস ছাড়ে রাত ৮টায়। ভাড়া = ১৬০০/- টাকা। আর শিলিগুড়ি থেকে বাস ছাড়ে দুপুর ১২টায় পৌছে পরদিন ভোরে ঢাকা। এছাড়া কলকাতা থেকেও বাসে এবং ট্রেনে শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে শিলিগুড়ি থেকে কলকাতার ট্রেন ঃ শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেস ছাড়ে ০৬:২৫,পৌছে ১৮:১০/তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস ছাড়ে ১৩:৪০,পৌছে পরদিন ভোর ০৪:১৫/দার্জিলিং মেল ছাড়ে ১৯:১৫,পৌছে পরদিন সকাল ০৮:৪০।

কম খরচের কিছু তথ্য :
১। আপনার গ্রুপে বেশি লোক হলে খরচও কম হবে। তবে মিনিমাম দুইজন হতে হবে।
২।। বাজারে যখন ডলারের দাম কম থাকে তখন ডলার কিনে রাখতে হবে।
৩। চেংরাবান্ধা গিয়ে বেশি ডলার না ভাঙ্গানোই ভালো। কারণ শিলিগুড়ি শহরে ডলারের রেট কিছুটা বেশি। আর দার্জিলিং এ 
     ডলারের রেট কিন্তু কিছুটা কম। তাই শিলিগুড়ি থেকেই ভাঙ্গানোই উত্তম। আর যেখানে রেট বেশি, সেখান থেকে ডলার 
     ভাঙ্গান। তবে ডলারের রেট সকাল-বিকাল উঠা নামা করে এবং বড় শহরে ডলারের রেট সাধারণত বেশি পাওয়া যায়।
৪। খাবারের হোটেলগুলোতে দরদাম করে খাবেন। প্রয়োজনে অন্য হোটেলে যাবেন।
৫। ঘুরাঘুরির প্যাকেজ কিনতে দরদাম করুন। কারণ আশে-পাশে অনেক ট্রাভেল এজেন্ট পাবেন।
৬। ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করতে হোটেলের অথবা স্থানীয় ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করুন। 
৭। সব সময় একসাথে গ্রুপ করে সব কিছু করুন। তাতে প্রায় সব কিছুতেই ডিসকাউন্ট পাবেন।

অবশেষে আমার এই লেখাতে কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। তবে কোথায় ভুল হয়েছে তাহা জানালে সংশোধন হবো ও করবো। যে কোন পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করবো। যোগাযোগ করতে পারেন। ফোন : ০১৭১১-১০৬৯৭০, ০১৭১৩-৫৩২৩৬৩। ই-মেইল :  ripon.kazi@gmail.com

আমার লেখা প্রথম ভ্রমণ কাহিনী-১
কম খরচে ঘুরে আসুন থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও পাতায়া ।
এই লিংকে পাবেন : http://freetouristguide24.blogspot.com/2017/10/blog-post.html


Tuesday, October 3, 2017

কম খরচে ঘুরে আসুন থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও পাতায়া

ভ্রমণ কাহিনী-১
কম খরচে ঘুরে আসুন থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও পাতায়া

কাজী রিপন :
জীবন একটাই। কখন চলে যাবে কেউ জানে না। এই ছোট্ট জীবনে একটু সময় করে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী এই সুন্দর জগতটা একটু ঘুরে দেখুন। জীবনটাকে উপভোগ করুন। আর তাই আমার সকল বন্ধুদের জন্য কম খরচে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করার বিষয়ে তথ্য জানার জন্য আমার ক্ষুদ্র প্রয়াশ :
২০১৪ সালের ১৯ জুলাই আমার উপরের কথাগুলো অনেক বন্ধুকে শেয়ার করেছিলাম। এরপর কম খরচে কিভাবে বিভিন্ন দেশে ঘুরা যায় তার উপর লিখতে বলেছিলেন অনেকে । সময় অনেক পার হয়ে গেছে। সম্প্রতি আমার এক বন্ধুর একটি কথায় এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আরেক গুরুজন বন্ধু এম জি বাবর ভাইয়ের উৎসাহে শত ব্যস্ততার মাঝেও লিখতে শুরু করলাম। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা দিয়ে এক এক করে আমার ঘুরা সমস্ত দেশের ভ্রমণ কাহিনী লিখবো ইনশাল্লাহ। এ পর্যায়ে কম খরচে কিভাবে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও পাতায়া ঘুরা যায়। তার কাহিনী :


১৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে আমরা থাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে বিমানে প্রথমে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম এয়ারপোর্ট।পরে চট্রগ্রাম থেকে থাইল্যান্ডের সুবর্ণভুমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গিয়েছিলাম। কারণ আমাদের বিমানটি ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম হয়ে ব্যাংকক ছিল। পরে ব্যাংকক এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশনসহ সমস্ত কাজ শেষ করে আমরা এয়ারপোর্টের টার্মিনালের বাহিরে চলে আসি। এরপর টার্মিনালের বাহিরে গ্রাউন্ড ফ্লোরের উত্তর কোণে থেকে পাতায়া, ফুকেট ও ব্যাংককের বাস চলে। খুবই কম দামে বাসে করে আপনি যেতে পারবেন পাতায়া, ফুকেট ও ব্যাংককে। এতো কম দামে ভাল মানের বাস আমি আর কোথাও দেখিনি। তাও আবার এসি বাস। আমাদের সে সময়ে জনপ্রতি ভাড়া ছিল মাত্র ১৩০ বাথ। আর এক বাথ টাকা হয় প্রায় আড়াই টাকা। আমরা যখন বাসে পাতায়া যাচ্ছি তখন দেখি অনেক উন্নত দেশের বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার বিদেশীরাও এই বাসে যাচ্ছে। শুধুমাত্র কম খরচের জন্য। যাহোক, এই বাসে গেলে আপনার অনেক টাকা সাশ্রয় হবে।

এরপর পাতায়া শহরে বাসস্টপ এলাকায় আপনাকে নামিয়ে দিবে। যদি হোটেল ঠিক করা থাকে তো আপনি একটি অটো টেম্পো ভাড়া করে যেতে পারেন। যার ভাড়া কম। ভাড়া পড়বে ৩০ থেকে ৪০ বাথ। সেটি ভাড়া করে হোটেলে পৌছাতে পারেন। আর যদি হোটেল আগে থেকেই বুকিং করা না থাকে তবে ওয়াকিং স্ট্রিট এর পাশে আসতে পারেন এবং ঐখানে নেমে আপনি আশে-পাশের হোটেল এ উঠতে পারেন। পাতায়া শহরের মূল স্পটই ওয়াকিং স্ট্রিটকে ঘিরে। এর আশে পাশে অসংখ্য হোটেল-মোটেল আছে কম দামের-বেশি দামের। তবে নূন্যতম থ্রি স্টার মানের হোটেলে উঠতে পারলে ভালো। কারণ মিনিমাম থ্রি স্টার হোটেলে উঠলেই আপনি সকালের নাস্তা পাবেন প্রায় ৫০ রকম ফ্রি। সকালের নাস্তা ফ্রি পেয়ে আপনি ডাইনিংয়ে বুফে সিস্টেমে ইচ্ছেমতো ভাল লাগার খাবারগুলো খেতে পারবেন। এতে আপনার শরীর সতেজ ও মন ভাল থাকবে। যাহাতে আপনি সারাদিন বাহিরে ঘুরাঘুরির সময়ে শরীরে শক্তি পাবেন। এছাড়া আমরা ভাতে বাঙালীরা থাইল্যান্ডে এসে অনেকেই খেতে পারি না। কারণ থাইল্যান্ডে প্রায় সব খাবারেই এক ধরণের গন্ধ আছে। এছাড়া শাক-সবজিগুলো আধা সিদ্ধু। এই কারণে খাবারগুলো আমরা অনেকেই সহ্য করতে পারি না। তাই অনেকেই বাঙালী বা ইন্ডিয়ান খাবারের হোটেল খোঁজ করি। এজন্য থ্রী স্টার হোটেলের সকালের নাস্তায় বিভিন্ন রকম খাবার থেকে পছন্দই খাবার খাওয়া যায়। এতে হোটেলের ভাড়া একটু বেশি পড়লেও আপনি অন্যদিকে সাশ্রয় পাবেন। আমরা পাতায়া শহরের একটি ভাল মানের থ্রি স্টার হোটেল “ হোটেল ওয়েলকাম প্লাজায় ” উঠেছিলাম। আমরা ছিলাম ৬ জন। তাই টু-বেড শেয়ারে রুম নিয়েছিলাম। এক রুমের ভাড়া দুইজনে শেয়ার করেছি। প্রতিটি রুমে দুটি করে সিঙ্গেল বেড ছিল। এতে আমাদের খরচ কম হয়েছে। এভাবে আপনিই নিতে পারেন। তাহলে আপনার ভ্রমণ খরচও কম হবে। আর ভ্রমণে একা না যাওয়াই ভালো। নুন্যতম দুইজন যেন হয়। এছাড়া গ্রুপে বেশি লোক হলে খরচও কম লাগবে। তবে পরিবার ছাড়া গেলে সব সময় জোড় মিলিয়ে যাওয়াই ভালো। আর যোগাযোগের জন্য ৪জি মানের মোবাইল সিম কিনতে পারেন মাত্র ৫০ বাথ খরচ করে। সঙ্গে কিছু ফ্রি অফার পাবেন।
   

এবার পাতায়ায় ঘুরাঘুরির পালা। আপনি যে হোটেলে উঠবেন সে হোটেল থেকেও আপনাকে বিভিন্ন স্পটে ঘুরানোর প্যাকেজ পাবেন। কিন্তু আপনি যদি কম খরচে ঘুরতে চান তবে একটু হোটেলের বাহিরে এসে দেখুন। আপনার হোটেলের আশে-পাশেই অনেক ছোট ছোট ট্যুর প্যাকেজ কোম্পানী আছে। তারা আপনাকে বিভিন্ন স্পটের অফার দিবে। তবে আপনি দুপুরের খাবারসহ দর কষাকষি করে ঘুরাঘুরির প্যাকেজ কিনতে পারেন। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, আগের দিনই আপনাকে প্যাকেজ ঠিক করে রাখতে হবে। কারণ যেদিন বেড়াবেন তার আগের দিনই প্যাকেজ ঠিক করতে হয়। আরেকটি বিষয়, আপনার হোটেলের প্যাকেজ আর বাহিরের ট্যুর কোম্পানীর প্যাকেজ রেট একই হলে হোটেলের প্যাকেজই নেয়াই ভালো। আমরা অবশ্য হোটেলের বাহিরে পাশেই একটি ইন্ডিয়ান ছেলের ট্যুর কোম্পানীর প্যাকেজ পেয়েছিলাম দুপুরের খাবারসহ তুলনামূলকভাবে অনেক কম দামে। ছেলেটির নাম ছিল ভিকি। মোবাইল নম্বর হচ্ছে - ০৮৪৬৯৮৭৫৬০ আর তার ট্যুর কোম্পানীর নাম ছিল “ বেস্ট হলিডে টুরস এন্ড ট্যাভেল”। আমরা সেই প্যাকেজে কোরাল আইল্যান্ডসহ আশে-পাশের প্রায় সব স্পটেই গিয়েছিলাম। আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছে ৫০০ বাথ। তবে প্যাকেজের বাহিরে স্পটগুলোতে আরো অনেক রাইড থাকে যেমন প্যারাগ্রাইডিং, স্পীডবোর্ড, সাগরের পানির নিচে ঘুরাঘুরি ইত্যাদি। এগুলোতে আলাদা টাকা লাগে। এরপর ট্যুর কোম্পানী আপনাকে দুপুরের বুফে খাবার খাওয়াবে।

অনেক খাবারের মধ্যে থেকে আপনার যেটা ভাল লাগে সেটা খাবেন। এতে ভাল লাগবে। ট্যুর শেষে ফেরার পথে দেখবেন কিছু লোক আপনার বিভিন্ন মুহুর্তের ছবি তুলেছে। সেগুলো তারা প্রিন্ট করে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে কোন এক জায়গায়। সাথে দাম বলবে। কিন্তু আপনি তো অবাক। কারণ কখন যে আপনার ছবি তুলেছে তাহা হয়তো অনেকেই জানে না। যদি ছবি স্মৃতি হিসেবে রাখতে চান তবে নিদিষ্ট দাম দিয়ে কিনতে হবে। একটি বিষয় হচ্ছে, কোরাল আইল্যান্ডে যাওয়ার আগে সাথে খাবার পানি নিবেন। কারণ ঐখানে পানির দাম অনেক বেশি। আর কোরাল আইল্যান্ডে মিষ্টি ডাবের পানি আপনাকে মুগ্ধ করবে।  
আর পাতায়া শহরে রাতের বেলা দিনের চেয়েও জমকালো। কারণ কথায় আছে, পাতায়া দিনের বেলায় ঘুমায় আর রাতের বেলা জেগে উঠে। বিশেষ করে ওয়াকিং স্ট্রিট। যেটা রাতের বেলাতেই শুধু ঘুরে দেখার উপযুক্ত সময়। এখানে একটু সর্তক থাকবেন। কারণ এতো বেশি মানুষ এই রাস্তায় চলাচল করে যে, একটু সাবধান থাকাই শ্রেয়। এছাড়া এখানে নানারকম অফার, নানা রকম খাবার হোটেল, নানারকম দালাল, নানারকম পণ্য বিক্রি করে। একটু ভুল করলে টাকা একটাও পকেটে থাকবে না। সাথে অন্য কিছুই। তাই এখানে একা না ঘুরে, গ্রুপ করে ঘোরাই ভালো। এছাড়া এখানে অনেক গেম শো, যাদু প্রর্দশন ও নানারকম কলা-কৌশল প্রর্দশন করা হয়। সর্তকভাবে ঘুরে দেখলে আপনার ভাল লাগবে। বাঙালী হিসেবে প্রথমবার গেলে আজব জায়গা মনে হবে। এছাড়া রাতের বেলা পাতায়া শহরে আরো অনেক শো অনুষ্ঠিত হয়। যারা যাবেন তারা গেলেই দেখবেন। আর দিনের বেলা পুরো পাতায়া শহর দেখতে হলে মাত্র কিছু টাকায় একটি মোটর সাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘুরতে পারেন। ঘন্টা প্রতি ভাড়া অনেক কম। তবে স্থানীয় ট্রাফিক আইন জেনে হেলমেট পরিধান করা ভালো। এছাড়া পাতায়ায় ফাইভ ডি সিনেমা দেখা, জাদুঘর, বিগ মূর্তি দেখা, আন্ডার ওয়ার্ল্ড যাওয়া, নং নচ ট্রফিক্যাল গার্ডেনে যাওয়া ইত্যাদি ঘুরার স্পট রয়েছে। আছে একটু পর পর ম্যাসেজ পার্লার। প্রতি ঘন্টা মিনিমাম ২০০ বাথ থেকে শুরু। 

  এরপর আমরা পাতায়া শহর থেকে চললাম ব্যাংককের উদ্দেশ্যে। পাতায়া শহরের পাশে সুন্দর একটি বাসস্ট্যান্ড। ভাড়া লাগলো জনপ্রতি ২৫ বাথ করে। বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি কোন বাস নেই। আমরা তো অবাক। কিন্তু জানার বিষয় হচ্ছে, ওরা এতো সুশৃংখল যে, বিমানের মতো ওদের বাসস্ট্যান্ডে বাসের বিভিন্ন রুটের টিকিট কাউন্টার আছে এবং একটু পরে পরেই ইলেকট্রিক ডিসপ্লে বোর্ড। সেই ডিসপ্লে বোর্ডে বাস কোথায় যাবে, কয়টায় ছাড়বে, কত মিনিট বাকি আছে, ভাড়া কত ইত্যাদি উঠতেছে। আর বাসের কাউন্টারে টিকিট কেটে যাত্রীরা সুন্দরভাবে টার্মিনালে বসে অপেক্ষা করছে। বাস ছাড়ার সময় হলেই নিদিষ্ট টার্মিনালের নাম্বারে কোথা থেকে যেন বাস এসে হাজির হচ্ছে এবং বাস ছেড়ে যাচ্ছে। পাতায়া থেকে ব্যাংকক যেতে আমাদের ভাড়া লাগলো জনপ্রতি মাত্র ১১৯ বাথ। ব্যাংকক শহরের একামাই থেকে আমাদের হোটেল সুকুমভিত যেতে ভাড়া লাগলো ৬৬ বাথ। আমরা বাংলাদেশী হোটেল মালিকের একটি ফ্লাটে উঠলাম। তার নাম নাছির।  ঝালকাঠি জেলার মানুষ তিনি। থাইল্যান্ডে বিয়ে করে দীর্ঘদিন যাবত থাইল্যান্ডের ব্যাংককে থাকেন। তার বাংলাদেশী খাবারের হোটেল আছে। নাম নাছির রেস্টুরেন্ট। তার ভাড়া করা খালি ফ্লাট আমরা ৬ জন মিলে ভাড়া নিলাম। কিন্তু আমাদের নিকট থেকে ভাড়া অনেক বেশি নিয়েছে। আর তার খাবারের হোটেলে একবার দেশি খাবার খেয়ে পকেট প্রায় ফাঁকা হয়েছিল। অর্থাৎ সে খাবারের দাম অনেক বেশি রাখে। কাজেই আমার পরামর্শ হচ্ছে, ব্যাংককে তার নিকট থেকে দুরে থাকাই শ্রেয়। এছাড়া তিনি আমাদের বিপদে ফেলেছিলেন। তার কারণে আমরা ফেরার পথে আমাদের বিমানের ফ্লাইট মিস করি। পরে অনেক টাকা খরচ করে পুনরায় এয়ার টিকেট কেটে দেশে আসি। সে অভিজ্ঞতা আজো ভুলতে পারি নাই। যাহোক, আগেই বলেছি যে, মিনিমাম একটি থ্রি স্টার হোটেলে উঠলে আপনি অনেক দিক দিয়ে সাশ্রয় পাবেন। আমরা যাহা ভুল করেছিলাম।
এবার ব্যাংককে ঘুরাঘুরির পালা। প্রথমেই আমরা গিয়েছিলাম সাফারী পার্কে। থাইল্যান্ড সাফারী পার্ক যে কোন বয়সের মানুষকে আর্কষণ করবে। অর্থাৎ ছোট-বড় সবার ভাল লাগবে এই সাফারী পার্কে ঘুরে। এখানে এতো সুন্দরভাবে সব পশু-পাখি রাখা আছে যাহা দেখলে আপনার মন ভরে যাবে। আপনার যত টাকাই খরচ হোক না কেনো, আপনার মনে হবে, সব টাকা অশুল হয়ে গেছে। আর সাফারী পার্কে একটু পর পর ঘুরাঘুরির ফাঁকে পশু-পাখিদের বিভিন্ন গেম শো বিশেষ করে শিশুদের মাতিয়ে তুলবে। সেইসাথে বিশ্ব বিখ্যাত জেমস বন্ড সিরিজ সিনেমার সচিত্র একটি অভিনয় শো আপনাকে বাস্তব জগত থেকে ঐ কাহিনীতে নিয়ে যাবে। যাহা খুবই রোমাঞ্চকর এবং দারুণ উপভোগ্য। না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এখানে আপনি ইচ্ছে করলে বনের রাজা বাঘের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দুধ পান করাতে পারবেন। সাথে ছবিও তুলতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে বাড়তি টাকা দিতে হবে।

এরপর বিশাল এলাকার বন ও জঙ্গলের মাঝে আরেক বিশাল আয়োজনে দুপুরের খাবারের হোটেল। প্রায় একটি ইনডোর স্টেডিয়ামের মতো হোটেল। যার পুরোটাই সেন্ট্রাল এসি করা। এখানে হাজার হাজার লোকের মাঝে আপনার জন্য নির্ধারিত চেয়ার-টেবিলে বসে হরেক রকমের খাবার দিয়ে সাজানো খাবার থেকে আপনার পছন্দের খাবার খেতে খুবই মজা পাবেন। এতো বড় ডাইনিং স্পেস দেখে আপনি প্রথমে অবাক হবেন। পরে সেখানে মঞ্চে বিভিন্ন রকম সংগীতও শুনতে পাবেন। এরপর বিকেলে আসার পথে গাইড আপনাকে নিয়ে নিদিষ্ট গাড়িতে করে সাফারী পার্কে লাইভ দেখাতে ঘুরতে যাবেন। গাড়িতে বসে দুনিয়ার প্রায় সব পশু-পাখিদের একবারে কাছে থেকে দেখতে পাবেন। এটাও এখানে খুবই রোমাঞ্চকর। পরে বুকভরা আত্ম তৃপ্তি নিয়ে আপনি ফিরে আসবেন ব্যাংকক শহরে। এই সাফারী পার্কে দুপুরের খাবার,আসা-যাওয়াসহ মোট খরচ হয়েছে আমাদের জনপ্রতি ৮৫০ বাথ। তবে এর চেয়েও কম রেটে আপনি ঘুরতে পারবেন। আমি পরে জেনেছি যে, ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্ট( এশিয়ান হলিডেজ), তাদের ব্যাংককে নিজস্ব অফিস ও গাড়ি আছে। এছাড়া ব্যাংককে মিজান রহমান নামে তাদের একজন কর্মকর্তা আছেন। সে অনেক বিষয়ে বাংলাদেশীদের সহযোগিতা করে। আর স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্টরা  ৬০০ থেকে ৭০০ বাথের মধ্যে সাফারী পার্কে ঘুরিয়ে নিয়ে আসে।

এ ছাড়া ব্যাংককে আরো অনেক ঘুরার স্পট আছে। যেমন- স্কাইট্রেনে চড়া ও সন্ধায় ব্যাংকক নদীতে রাজকীয় রিভার ক্রুজ ভ্রমণ ইত্যাদি। আর ব্যাংককে রাতের বেলা আরেকটি জমকালো শহরে পরিণত হওয়া। রাতে শহরের প্রতিটি রাস্তার ফুটপাতে মার্কেট বসে। দোকানীরা নানারকম পসরা সাজিয়ে বসে থাকে। রাতের শহর দেখতে এক ধরণের অটো রিক্সার মতো গাড়িতে চড়ে ঘুরতে পারেন। খুবই রোমাঞ্চকর লাগবে। আর শহরের অলি-গলিতে আছে নানারকম বিনোদনের ব্যবস্থা। তবে দিনের বেলায় ফুটপাতে নানারকম মিষ্টি আম, কাঁঠাল ও মিষ্টি তেতুল পাওয়া যায়। যাহা খেতে সুস্বাদু। তবে ব্যাংকক দীর্ঘদিনের পুরনো শহর হওয়ায় প্রায় সারাদিনই যানজট লেগেই থাকে। তাই কোথাও যেতে চাইলে একটু আগেই বের হওয়া ভালো। আর যদি বৃষ্টি হয় তবে রাস্তায় কোন কোন স্থানে কোমর পানি হয়ে যায়। এ জন্য সর্তক থাকতে হবে। তবে আশারবানী বাণী হচ্ছে, ওদের দেশের একটি জাতীয় উড়াল সড়ক। যদি এই সড়কে একবার উঠতে পারেন তবে আপনার যানজটের সমস্যা কেটে যাবে।  

এবার কেনাকাটার পালা। ব্যাংকক শহরে অনেক বিশাল বিশাল মার্কেট আছে। এরমধ্যে ইন্দরা, এমবিকে,সিয়াম সেন্টার ইত্যাদিতে জিনিসপত্রের দাম একটু কম। তবে লোকাল মার্কেট থেকে কেউ কোন ইলেকট্রনিক্স পণ্য সস্তা দামে যেমন, মোবাইল, কম্পিউটার, ঘড়ি, স্পিকার ইত্যাদি কিনলে ঠকার সম্ভাবনা বেশি। কারণ এই মার্কেটগুলোতে নকল ও কপি করা পণ্যই বেশি। অবিশ্বাশ্য কম দামে যেমন,আপনি মাত্র দুই হাজার টাকায় আই ফোন পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু সেটি আসল নয়, নকল কপি করা। তাই যে কোন ইলেকট্রনিক্স পণ্য কেনার আগে সর্তক থাকুন।
এছাড়া মার্কেটগুলোতে এক শ্রেণীর দালাল থাকে। তারা আপনাকে কিছু কিনতে উৎসাহিত করতে পারে কারণ তারা ঐ সমস্ত দোকান থেকে কমিশন পেয়ে থাকে। এদের বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। এরপর আবার দোকানের নেপালী সেল্স গার্লসদের  খপ্পরে পড়ে আপনি অনেক কিছুই কিনতে পারেন। কারণ তাদের কথায় এবং আচরণে আপনি বেসামাল হয়ে যেতে পারেন। যেমন কসমেটিক দোকান থেকে আপনি কিছু কিনতে গেলে ঐ মেয়েরা আপনাকে পটিয়ে অনেক কিছু দিয়ে দিতে পারে। যার বেশির ভাগই ভাল মানের না। তাই তাদের বিষয়েও সর্তক থাকুন। তবে মাকের্টগুলোতে কম দামে আপনি ভাল মানের গেঞ্জি, টি-শার্ট ও প্যান্ট ইত্যাদি পাবেন। সেক্ষেত্রে দর কষাকষি করে কিনুন।
এবার ফেরার পালা। আমি আগেই বলেছি যে, আমরা একজন ব্যক্তির (গাইড) ভুল কথার জন্য আমাদের বিমান মিস করেছিলাম। তাই যেদিন আপনার ফেরার পালা থাকবে সেদিন হাতে কোন কাজ রাখবেন না। কারণ রাস্তা-ঘাটে যানজটে পড়তে পারেন অথবা কোন ছোট-খাটো বিপদ হতে পারে। তাই ফেরার দিন বিমান ছাড়ার অনেক আগেই এয়ারপোর্টে এসে বসে থাকুন। কারণ আন্তর্জাতিক রুটে বিমান ছাড়ার মিনিমাম ২ থেকে ৩ ঘন্টা আগে বোডিং দেয়া শুরু হয়। এবং কখনও এক থেকে দেড় ঘন্টা আগেই বোডিং দেয়া বন্ধ করে দেয়। যেমনটি হয়েছিল আমাদের। আমরা ব্যাংকক শহরে ভয়াবহ যানজটে আটকা পড়ে এয়ারপোর্টে পৌছেছিলাম মাত্র ৫ মিনিট পরে বোডিং বন্ধের। অথচ আমাদের বিমান তখনও ঐ দেশেই যায়নি। তারপরও আমাদের ৬ জনের বোডিং দেয়নি সংশ্লিষ্ট এয়ার সংস্থা। তাই ফেরার দিন কারও কথা না শুনে আগেই এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে চলে যাওয়াই শ্রেয়। আর ব্যাংকক এর সুবর্নভুমি এয়ারপোর্ট বিশাল এলাকা। এই এয়াপোর্টে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসসহ অন্যান্য কাজ করতে প্রায় এক ঘন্টা চলে যায়। যে কথাটি বলতেই হয়, আমরা বিমানের ফ্লাইট মিস করার পর ভীষন ঝামেলায় পড়ে যাই, তখন ব্যাংক থেকে অন্য বিমানে আসার জন্য আমাদের নিকট বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠানোর জন্য অনেক চেষ্টা করে আমাদের পরিবারগুলো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের নিকট কোন মাধ্যমেই তারা টাকা পাঠাতে পারে না। কারণ বাংলাদেশ থেকে বিদেশে এক টাকাও বৈধপথে পাঠানো হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। এছাড়া কোন টাকা পাঠানো যায় না। পরে আমার ঘনিষ্ট ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সী “ ফ্লাইয়ার ট্যুরস এন্ড  ট্রাভেল লিঃ” কোম্পানীর মালিক মি. সামির এর সহযোগিতায় রাতে ব্যাংকক এয়ারওয়েজ এর টিকিট কেটে আমরা দেশে আসি। অর্থাৎ মি. সামির আমাদের বাকিতে মানে তার নিজের টাকা দিয়ে আমাদের জন্য বিমানের টিকিট বাংলাদেশ থেকে কেটে দেন। পরে সেই টিকিট আমাদের মোবাইলে এসএমএস করেন।  এ জন্য আমরা রক্ষা পাই এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞ।      

কম খরচের কিছু তথ্য :
১। প্রথমেই কোন দেশ ঘুরার জন্য এয়ার টিকেটই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দামী। তাই বর্তমানে যত আগে এয়ার টিকেট কিনবেন তত কম দামে পাবেন। অর্থাৎ আপনি ইচ্ছে করলে প্রায় এক বছর আগেও এয়ার টিকেট কিনতে পারবেন। এয়ার টিকেট অবশ্যই রির্টানসহ কিনবেন। এছাড়া বছরে বিভিন্ন বিমান সংস্থা ফেয়ার দিয়ে থাকে। সে সময়ে টিকিটও প্রায় অর্ধেক দামে পাওয়া যায়। বিশেষ করে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও মালিনদো এয়ারওয়েজ বছরে একটি নিদিষ্ট মাসে ফেয়ার দিয়ে থাকে। তখন প্রায় অর্ধেক রেটে এয়ার টিকেট কিনে সারা বছরব্যাপি ভ্রমণ করা যায়। কাজেই এই সুযোগ কাজে লাগান।
২। ভিসা ফ্রি ও ভিসা ছাড়া ভ্রমন করা যায় এমন দেশ সম্পর্কে আপনার জানা থাকতে হবে। আর ভিসা ফ্রি সবচেয়ে কম খরচে করে (আমার দেখা) ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সী আছে। (নাম বললাম না, বললে এ্যাড. হয়ে যাবে)। অনেকে ভিসা ফ্রি সাধারণ রেটের চেয়ে এক থেকে দুই হাজার টাকা বেশি নিয়ে থাকে। তাই দরদাম করে ভিসা করতে হবে।
৩। আগেই বলেছি গ্রুপে বেশি লোক হলে খরচও কম হবে। তবে মিনিমাম দুইজন হতে হবে।
৪। বাজারে যখন ডলারের দাম কম থাকে তখন ডলার কিনে রাখতে হবে।
৫। বিদেশে গিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ডলার না ভাঙ্গানোই ভালো। কারণ এয়ারপোর্টে ডলারের রেট কিছুটা কম থাকে। তাই ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা কম দেয়।
৬। আপনার হোটেলের আশে-পাশে অনেক মানি এক্সচেঞ্জ দোকান পাবেন। যেখানে রেট বেশি, সেখান থেকে ডলার ভাঙ্গান। তবে ডলারের রেট সকাল-বিকাল উঠা নামা করে এবং বড় শহরে ডলারের রেট সাধারণত বেশি পাওয়া যায়।
৭। খাবারের হোটেলগুলোতে দরদাম করে খাবেন। প্রয়োজনে অন্য হোটেলে যাবেন।
৮। ঘুরাঘুরির প্যাকেজ কিনতে দরদাম করুন। কারণ আশে-পাশে অনেক ট্রাভেল এজেন্ট পাবেন।
৯। ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করতে হোটেলের অথবা স্থানীয় ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করুন। 
১০। সব সময় একসাথে গ্রুপ করে সব কিছু করুন। তাতে প্রায় সব কিছুতেই ডিসকাউন্ট পাবেন।

অবশেষে আমার এই লেখাতে কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। তবে কোথায় ভুল হয়েছে তাহা জানালে সংশোধন হবো ও করবো। যে কোন পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করবো। যোগাযোগ করতে পারেন। ফোন : ০১৭১১-১০৬৯৭০, ০১৭১৩-৫৩২৩৬৩। ই-মেইল : ripon.kazi@gmail.com