Tuesday, October 3, 2017

কম খরচে ঘুরে আসুন থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও পাতায়া

ভ্রমণ কাহিনী-১
কম খরচে ঘুরে আসুন থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও পাতায়া

কাজী রিপন :
জীবন একটাই। কখন চলে যাবে কেউ জানে না। এই ছোট্ট জীবনে একটু সময় করে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী এই সুন্দর জগতটা একটু ঘুরে দেখুন। জীবনটাকে উপভোগ করুন। আর তাই আমার সকল বন্ধুদের জন্য কম খরচে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করার বিষয়ে তথ্য জানার জন্য আমার ক্ষুদ্র প্রয়াশ :
২০১৪ সালের ১৯ জুলাই আমার উপরের কথাগুলো অনেক বন্ধুকে শেয়ার করেছিলাম। এরপর কম খরচে কিভাবে বিভিন্ন দেশে ঘুরা যায় তার উপর লিখতে বলেছিলেন অনেকে । সময় অনেক পার হয়ে গেছে। সম্প্রতি আমার এক বন্ধুর একটি কথায় এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আরেক গুরুজন বন্ধু এম জি বাবর ভাইয়ের উৎসাহে শত ব্যস্ততার মাঝেও লিখতে শুরু করলাম। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা দিয়ে এক এক করে আমার ঘুরা সমস্ত দেশের ভ্রমণ কাহিনী লিখবো ইনশাল্লাহ। এ পর্যায়ে কম খরচে কিভাবে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও পাতায়া ঘুরা যায়। তার কাহিনী :


১৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে আমরা থাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে বিমানে প্রথমে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম এয়ারপোর্ট।পরে চট্রগ্রাম থেকে থাইল্যান্ডের সুবর্ণভুমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গিয়েছিলাম। কারণ আমাদের বিমানটি ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম হয়ে ব্যাংকক ছিল। পরে ব্যাংকক এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশনসহ সমস্ত কাজ শেষ করে আমরা এয়ারপোর্টের টার্মিনালের বাহিরে চলে আসি। এরপর টার্মিনালের বাহিরে গ্রাউন্ড ফ্লোরের উত্তর কোণে থেকে পাতায়া, ফুকেট ও ব্যাংককের বাস চলে। খুবই কম দামে বাসে করে আপনি যেতে পারবেন পাতায়া, ফুকেট ও ব্যাংককে। এতো কম দামে ভাল মানের বাস আমি আর কোথাও দেখিনি। তাও আবার এসি বাস। আমাদের সে সময়ে জনপ্রতি ভাড়া ছিল মাত্র ১৩০ বাথ। আর এক বাথ টাকা হয় প্রায় আড়াই টাকা। আমরা যখন বাসে পাতায়া যাচ্ছি তখন দেখি অনেক উন্নত দেশের বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার বিদেশীরাও এই বাসে যাচ্ছে। শুধুমাত্র কম খরচের জন্য। যাহোক, এই বাসে গেলে আপনার অনেক টাকা সাশ্রয় হবে।

এরপর পাতায়া শহরে বাসস্টপ এলাকায় আপনাকে নামিয়ে দিবে। যদি হোটেল ঠিক করা থাকে তো আপনি একটি অটো টেম্পো ভাড়া করে যেতে পারেন। যার ভাড়া কম। ভাড়া পড়বে ৩০ থেকে ৪০ বাথ। সেটি ভাড়া করে হোটেলে পৌছাতে পারেন। আর যদি হোটেল আগে থেকেই বুকিং করা না থাকে তবে ওয়াকিং স্ট্রিট এর পাশে আসতে পারেন এবং ঐখানে নেমে আপনি আশে-পাশের হোটেল এ উঠতে পারেন। পাতায়া শহরের মূল স্পটই ওয়াকিং স্ট্রিটকে ঘিরে। এর আশে পাশে অসংখ্য হোটেল-মোটেল আছে কম দামের-বেশি দামের। তবে নূন্যতম থ্রি স্টার মানের হোটেলে উঠতে পারলে ভালো। কারণ মিনিমাম থ্রি স্টার হোটেলে উঠলেই আপনি সকালের নাস্তা পাবেন প্রায় ৫০ রকম ফ্রি। সকালের নাস্তা ফ্রি পেয়ে আপনি ডাইনিংয়ে বুফে সিস্টেমে ইচ্ছেমতো ভাল লাগার খাবারগুলো খেতে পারবেন। এতে আপনার শরীর সতেজ ও মন ভাল থাকবে। যাহাতে আপনি সারাদিন বাহিরে ঘুরাঘুরির সময়ে শরীরে শক্তি পাবেন। এছাড়া আমরা ভাতে বাঙালীরা থাইল্যান্ডে এসে অনেকেই খেতে পারি না। কারণ থাইল্যান্ডে প্রায় সব খাবারেই এক ধরণের গন্ধ আছে। এছাড়া শাক-সবজিগুলো আধা সিদ্ধু। এই কারণে খাবারগুলো আমরা অনেকেই সহ্য করতে পারি না। তাই অনেকেই বাঙালী বা ইন্ডিয়ান খাবারের হোটেল খোঁজ করি। এজন্য থ্রী স্টার হোটেলের সকালের নাস্তায় বিভিন্ন রকম খাবার থেকে পছন্দই খাবার খাওয়া যায়। এতে হোটেলের ভাড়া একটু বেশি পড়লেও আপনি অন্যদিকে সাশ্রয় পাবেন। আমরা পাতায়া শহরের একটি ভাল মানের থ্রি স্টার হোটেল “ হোটেল ওয়েলকাম প্লাজায় ” উঠেছিলাম। আমরা ছিলাম ৬ জন। তাই টু-বেড শেয়ারে রুম নিয়েছিলাম। এক রুমের ভাড়া দুইজনে শেয়ার করেছি। প্রতিটি রুমে দুটি করে সিঙ্গেল বেড ছিল। এতে আমাদের খরচ কম হয়েছে। এভাবে আপনিই নিতে পারেন। তাহলে আপনার ভ্রমণ খরচও কম হবে। আর ভ্রমণে একা না যাওয়াই ভালো। নুন্যতম দুইজন যেন হয়। এছাড়া গ্রুপে বেশি লোক হলে খরচও কম লাগবে। তবে পরিবার ছাড়া গেলে সব সময় জোড় মিলিয়ে যাওয়াই ভালো। আর যোগাযোগের জন্য ৪জি মানের মোবাইল সিম কিনতে পারেন মাত্র ৫০ বাথ খরচ করে। সঙ্গে কিছু ফ্রি অফার পাবেন।
   

এবার পাতায়ায় ঘুরাঘুরির পালা। আপনি যে হোটেলে উঠবেন সে হোটেল থেকেও আপনাকে বিভিন্ন স্পটে ঘুরানোর প্যাকেজ পাবেন। কিন্তু আপনি যদি কম খরচে ঘুরতে চান তবে একটু হোটেলের বাহিরে এসে দেখুন। আপনার হোটেলের আশে-পাশেই অনেক ছোট ছোট ট্যুর প্যাকেজ কোম্পানী আছে। তারা আপনাকে বিভিন্ন স্পটের অফার দিবে। তবে আপনি দুপুরের খাবারসহ দর কষাকষি করে ঘুরাঘুরির প্যাকেজ কিনতে পারেন। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, আগের দিনই আপনাকে প্যাকেজ ঠিক করে রাখতে হবে। কারণ যেদিন বেড়াবেন তার আগের দিনই প্যাকেজ ঠিক করতে হয়। আরেকটি বিষয়, আপনার হোটেলের প্যাকেজ আর বাহিরের ট্যুর কোম্পানীর প্যাকেজ রেট একই হলে হোটেলের প্যাকেজই নেয়াই ভালো। আমরা অবশ্য হোটেলের বাহিরে পাশেই একটি ইন্ডিয়ান ছেলের ট্যুর কোম্পানীর প্যাকেজ পেয়েছিলাম দুপুরের খাবারসহ তুলনামূলকভাবে অনেক কম দামে। ছেলেটির নাম ছিল ভিকি। মোবাইল নম্বর হচ্ছে - ০৮৪৬৯৮৭৫৬০ আর তার ট্যুর কোম্পানীর নাম ছিল “ বেস্ট হলিডে টুরস এন্ড ট্যাভেল”। আমরা সেই প্যাকেজে কোরাল আইল্যান্ডসহ আশে-পাশের প্রায় সব স্পটেই গিয়েছিলাম। আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছে ৫০০ বাথ। তবে প্যাকেজের বাহিরে স্পটগুলোতে আরো অনেক রাইড থাকে যেমন প্যারাগ্রাইডিং, স্পীডবোর্ড, সাগরের পানির নিচে ঘুরাঘুরি ইত্যাদি। এগুলোতে আলাদা টাকা লাগে। এরপর ট্যুর কোম্পানী আপনাকে দুপুরের বুফে খাবার খাওয়াবে।

অনেক খাবারের মধ্যে থেকে আপনার যেটা ভাল লাগে সেটা খাবেন। এতে ভাল লাগবে। ট্যুর শেষে ফেরার পথে দেখবেন কিছু লোক আপনার বিভিন্ন মুহুর্তের ছবি তুলেছে। সেগুলো তারা প্রিন্ট করে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে কোন এক জায়গায়। সাথে দাম বলবে। কিন্তু আপনি তো অবাক। কারণ কখন যে আপনার ছবি তুলেছে তাহা হয়তো অনেকেই জানে না। যদি ছবি স্মৃতি হিসেবে রাখতে চান তবে নিদিষ্ট দাম দিয়ে কিনতে হবে। একটি বিষয় হচ্ছে, কোরাল আইল্যান্ডে যাওয়ার আগে সাথে খাবার পানি নিবেন। কারণ ঐখানে পানির দাম অনেক বেশি। আর কোরাল আইল্যান্ডে মিষ্টি ডাবের পানি আপনাকে মুগ্ধ করবে।  
আর পাতায়া শহরে রাতের বেলা দিনের চেয়েও জমকালো। কারণ কথায় আছে, পাতায়া দিনের বেলায় ঘুমায় আর রাতের বেলা জেগে উঠে। বিশেষ করে ওয়াকিং স্ট্রিট। যেটা রাতের বেলাতেই শুধু ঘুরে দেখার উপযুক্ত সময়। এখানে একটু সর্তক থাকবেন। কারণ এতো বেশি মানুষ এই রাস্তায় চলাচল করে যে, একটু সাবধান থাকাই শ্রেয়। এছাড়া এখানে নানারকম অফার, নানা রকম খাবার হোটেল, নানারকম দালাল, নানারকম পণ্য বিক্রি করে। একটু ভুল করলে টাকা একটাও পকেটে থাকবে না। সাথে অন্য কিছুই। তাই এখানে একা না ঘুরে, গ্রুপ করে ঘোরাই ভালো। এছাড়া এখানে অনেক গেম শো, যাদু প্রর্দশন ও নানারকম কলা-কৌশল প্রর্দশন করা হয়। সর্তকভাবে ঘুরে দেখলে আপনার ভাল লাগবে। বাঙালী হিসেবে প্রথমবার গেলে আজব জায়গা মনে হবে। এছাড়া রাতের বেলা পাতায়া শহরে আরো অনেক শো অনুষ্ঠিত হয়। যারা যাবেন তারা গেলেই দেখবেন। আর দিনের বেলা পুরো পাতায়া শহর দেখতে হলে মাত্র কিছু টাকায় একটি মোটর সাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘুরতে পারেন। ঘন্টা প্রতি ভাড়া অনেক কম। তবে স্থানীয় ট্রাফিক আইন জেনে হেলমেট পরিধান করা ভালো। এছাড়া পাতায়ায় ফাইভ ডি সিনেমা দেখা, জাদুঘর, বিগ মূর্তি দেখা, আন্ডার ওয়ার্ল্ড যাওয়া, নং নচ ট্রফিক্যাল গার্ডেনে যাওয়া ইত্যাদি ঘুরার স্পট রয়েছে। আছে একটু পর পর ম্যাসেজ পার্লার। প্রতি ঘন্টা মিনিমাম ২০০ বাথ থেকে শুরু। 

  এরপর আমরা পাতায়া শহর থেকে চললাম ব্যাংককের উদ্দেশ্যে। পাতায়া শহরের পাশে সুন্দর একটি বাসস্ট্যান্ড। ভাড়া লাগলো জনপ্রতি ২৫ বাথ করে। বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি কোন বাস নেই। আমরা তো অবাক। কিন্তু জানার বিষয় হচ্ছে, ওরা এতো সুশৃংখল যে, বিমানের মতো ওদের বাসস্ট্যান্ডে বাসের বিভিন্ন রুটের টিকিট কাউন্টার আছে এবং একটু পরে পরেই ইলেকট্রিক ডিসপ্লে বোর্ড। সেই ডিসপ্লে বোর্ডে বাস কোথায় যাবে, কয়টায় ছাড়বে, কত মিনিট বাকি আছে, ভাড়া কত ইত্যাদি উঠতেছে। আর বাসের কাউন্টারে টিকিট কেটে যাত্রীরা সুন্দরভাবে টার্মিনালে বসে অপেক্ষা করছে। বাস ছাড়ার সময় হলেই নিদিষ্ট টার্মিনালের নাম্বারে কোথা থেকে যেন বাস এসে হাজির হচ্ছে এবং বাস ছেড়ে যাচ্ছে। পাতায়া থেকে ব্যাংকক যেতে আমাদের ভাড়া লাগলো জনপ্রতি মাত্র ১১৯ বাথ। ব্যাংকক শহরের একামাই থেকে আমাদের হোটেল সুকুমভিত যেতে ভাড়া লাগলো ৬৬ বাথ। আমরা বাংলাদেশী হোটেল মালিকের একটি ফ্লাটে উঠলাম। তার নাম নাছির।  ঝালকাঠি জেলার মানুষ তিনি। থাইল্যান্ডে বিয়ে করে দীর্ঘদিন যাবত থাইল্যান্ডের ব্যাংককে থাকেন। তার বাংলাদেশী খাবারের হোটেল আছে। নাম নাছির রেস্টুরেন্ট। তার ভাড়া করা খালি ফ্লাট আমরা ৬ জন মিলে ভাড়া নিলাম। কিন্তু আমাদের নিকট থেকে ভাড়া অনেক বেশি নিয়েছে। আর তার খাবারের হোটেলে একবার দেশি খাবার খেয়ে পকেট প্রায় ফাঁকা হয়েছিল। অর্থাৎ সে খাবারের দাম অনেক বেশি রাখে। কাজেই আমার পরামর্শ হচ্ছে, ব্যাংককে তার নিকট থেকে দুরে থাকাই শ্রেয়। এছাড়া তিনি আমাদের বিপদে ফেলেছিলেন। তার কারণে আমরা ফেরার পথে আমাদের বিমানের ফ্লাইট মিস করি। পরে অনেক টাকা খরচ করে পুনরায় এয়ার টিকেট কেটে দেশে আসি। সে অভিজ্ঞতা আজো ভুলতে পারি নাই। যাহোক, আগেই বলেছি যে, মিনিমাম একটি থ্রি স্টার হোটেলে উঠলে আপনি অনেক দিক দিয়ে সাশ্রয় পাবেন। আমরা যাহা ভুল করেছিলাম।
এবার ব্যাংককে ঘুরাঘুরির পালা। প্রথমেই আমরা গিয়েছিলাম সাফারী পার্কে। থাইল্যান্ড সাফারী পার্ক যে কোন বয়সের মানুষকে আর্কষণ করবে। অর্থাৎ ছোট-বড় সবার ভাল লাগবে এই সাফারী পার্কে ঘুরে। এখানে এতো সুন্দরভাবে সব পশু-পাখি রাখা আছে যাহা দেখলে আপনার মন ভরে যাবে। আপনার যত টাকাই খরচ হোক না কেনো, আপনার মনে হবে, সব টাকা অশুল হয়ে গেছে। আর সাফারী পার্কে একটু পর পর ঘুরাঘুরির ফাঁকে পশু-পাখিদের বিভিন্ন গেম শো বিশেষ করে শিশুদের মাতিয়ে তুলবে। সেইসাথে বিশ্ব বিখ্যাত জেমস বন্ড সিরিজ সিনেমার সচিত্র একটি অভিনয় শো আপনাকে বাস্তব জগত থেকে ঐ কাহিনীতে নিয়ে যাবে। যাহা খুবই রোমাঞ্চকর এবং দারুণ উপভোগ্য। না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এখানে আপনি ইচ্ছে করলে বনের রাজা বাঘের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দুধ পান করাতে পারবেন। সাথে ছবিও তুলতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে বাড়তি টাকা দিতে হবে।

এরপর বিশাল এলাকার বন ও জঙ্গলের মাঝে আরেক বিশাল আয়োজনে দুপুরের খাবারের হোটেল। প্রায় একটি ইনডোর স্টেডিয়ামের মতো হোটেল। যার পুরোটাই সেন্ট্রাল এসি করা। এখানে হাজার হাজার লোকের মাঝে আপনার জন্য নির্ধারিত চেয়ার-টেবিলে বসে হরেক রকমের খাবার দিয়ে সাজানো খাবার থেকে আপনার পছন্দের খাবার খেতে খুবই মজা পাবেন। এতো বড় ডাইনিং স্পেস দেখে আপনি প্রথমে অবাক হবেন। পরে সেখানে মঞ্চে বিভিন্ন রকম সংগীতও শুনতে পাবেন। এরপর বিকেলে আসার পথে গাইড আপনাকে নিয়ে নিদিষ্ট গাড়িতে করে সাফারী পার্কে লাইভ দেখাতে ঘুরতে যাবেন। গাড়িতে বসে দুনিয়ার প্রায় সব পশু-পাখিদের একবারে কাছে থেকে দেখতে পাবেন। এটাও এখানে খুবই রোমাঞ্চকর। পরে বুকভরা আত্ম তৃপ্তি নিয়ে আপনি ফিরে আসবেন ব্যাংকক শহরে। এই সাফারী পার্কে দুপুরের খাবার,আসা-যাওয়াসহ মোট খরচ হয়েছে আমাদের জনপ্রতি ৮৫০ বাথ। তবে এর চেয়েও কম রেটে আপনি ঘুরতে পারবেন। আমি পরে জেনেছি যে, ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্ট( এশিয়ান হলিডেজ), তাদের ব্যাংককে নিজস্ব অফিস ও গাড়ি আছে। এছাড়া ব্যাংককে মিজান রহমান নামে তাদের একজন কর্মকর্তা আছেন। সে অনেক বিষয়ে বাংলাদেশীদের সহযোগিতা করে। আর স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্টরা  ৬০০ থেকে ৭০০ বাথের মধ্যে সাফারী পার্কে ঘুরিয়ে নিয়ে আসে।

এ ছাড়া ব্যাংককে আরো অনেক ঘুরার স্পট আছে। যেমন- স্কাইট্রেনে চড়া ও সন্ধায় ব্যাংকক নদীতে রাজকীয় রিভার ক্রুজ ভ্রমণ ইত্যাদি। আর ব্যাংককে রাতের বেলা আরেকটি জমকালো শহরে পরিণত হওয়া। রাতে শহরের প্রতিটি রাস্তার ফুটপাতে মার্কেট বসে। দোকানীরা নানারকম পসরা সাজিয়ে বসে থাকে। রাতের শহর দেখতে এক ধরণের অটো রিক্সার মতো গাড়িতে চড়ে ঘুরতে পারেন। খুবই রোমাঞ্চকর লাগবে। আর শহরের অলি-গলিতে আছে নানারকম বিনোদনের ব্যবস্থা। তবে দিনের বেলায় ফুটপাতে নানারকম মিষ্টি আম, কাঁঠাল ও মিষ্টি তেতুল পাওয়া যায়। যাহা খেতে সুস্বাদু। তবে ব্যাংকক দীর্ঘদিনের পুরনো শহর হওয়ায় প্রায় সারাদিনই যানজট লেগেই থাকে। তাই কোথাও যেতে চাইলে একটু আগেই বের হওয়া ভালো। আর যদি বৃষ্টি হয় তবে রাস্তায় কোন কোন স্থানে কোমর পানি হয়ে যায়। এ জন্য সর্তক থাকতে হবে। তবে আশারবানী বাণী হচ্ছে, ওদের দেশের একটি জাতীয় উড়াল সড়ক। যদি এই সড়কে একবার উঠতে পারেন তবে আপনার যানজটের সমস্যা কেটে যাবে।  

এবার কেনাকাটার পালা। ব্যাংকক শহরে অনেক বিশাল বিশাল মার্কেট আছে। এরমধ্যে ইন্দরা, এমবিকে,সিয়াম সেন্টার ইত্যাদিতে জিনিসপত্রের দাম একটু কম। তবে লোকাল মার্কেট থেকে কেউ কোন ইলেকট্রনিক্স পণ্য সস্তা দামে যেমন, মোবাইল, কম্পিউটার, ঘড়ি, স্পিকার ইত্যাদি কিনলে ঠকার সম্ভাবনা বেশি। কারণ এই মার্কেটগুলোতে নকল ও কপি করা পণ্যই বেশি। অবিশ্বাশ্য কম দামে যেমন,আপনি মাত্র দুই হাজার টাকায় আই ফোন পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু সেটি আসল নয়, নকল কপি করা। তাই যে কোন ইলেকট্রনিক্স পণ্য কেনার আগে সর্তক থাকুন।
এছাড়া মার্কেটগুলোতে এক শ্রেণীর দালাল থাকে। তারা আপনাকে কিছু কিনতে উৎসাহিত করতে পারে কারণ তারা ঐ সমস্ত দোকান থেকে কমিশন পেয়ে থাকে। এদের বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। এরপর আবার দোকানের নেপালী সেল্স গার্লসদের  খপ্পরে পড়ে আপনি অনেক কিছুই কিনতে পারেন। কারণ তাদের কথায় এবং আচরণে আপনি বেসামাল হয়ে যেতে পারেন। যেমন কসমেটিক দোকান থেকে আপনি কিছু কিনতে গেলে ঐ মেয়েরা আপনাকে পটিয়ে অনেক কিছু দিয়ে দিতে পারে। যার বেশির ভাগই ভাল মানের না। তাই তাদের বিষয়েও সর্তক থাকুন। তবে মাকের্টগুলোতে কম দামে আপনি ভাল মানের গেঞ্জি, টি-শার্ট ও প্যান্ট ইত্যাদি পাবেন। সেক্ষেত্রে দর কষাকষি করে কিনুন।
এবার ফেরার পালা। আমি আগেই বলেছি যে, আমরা একজন ব্যক্তির (গাইড) ভুল কথার জন্য আমাদের বিমান মিস করেছিলাম। তাই যেদিন আপনার ফেরার পালা থাকবে সেদিন হাতে কোন কাজ রাখবেন না। কারণ রাস্তা-ঘাটে যানজটে পড়তে পারেন অথবা কোন ছোট-খাটো বিপদ হতে পারে। তাই ফেরার দিন বিমান ছাড়ার অনেক আগেই এয়ারপোর্টে এসে বসে থাকুন। কারণ আন্তর্জাতিক রুটে বিমান ছাড়ার মিনিমাম ২ থেকে ৩ ঘন্টা আগে বোডিং দেয়া শুরু হয়। এবং কখনও এক থেকে দেড় ঘন্টা আগেই বোডিং দেয়া বন্ধ করে দেয়। যেমনটি হয়েছিল আমাদের। আমরা ব্যাংকক শহরে ভয়াবহ যানজটে আটকা পড়ে এয়ারপোর্টে পৌছেছিলাম মাত্র ৫ মিনিট পরে বোডিং বন্ধের। অথচ আমাদের বিমান তখনও ঐ দেশেই যায়নি। তারপরও আমাদের ৬ জনের বোডিং দেয়নি সংশ্লিষ্ট এয়ার সংস্থা। তাই ফেরার দিন কারও কথা না শুনে আগেই এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে চলে যাওয়াই শ্রেয়। আর ব্যাংকক এর সুবর্নভুমি এয়ারপোর্ট বিশাল এলাকা। এই এয়াপোর্টে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসসহ অন্যান্য কাজ করতে প্রায় এক ঘন্টা চলে যায়। যে কথাটি বলতেই হয়, আমরা বিমানের ফ্লাইট মিস করার পর ভীষন ঝামেলায় পড়ে যাই, তখন ব্যাংক থেকে অন্য বিমানে আসার জন্য আমাদের নিকট বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠানোর জন্য অনেক চেষ্টা করে আমাদের পরিবারগুলো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের নিকট কোন মাধ্যমেই তারা টাকা পাঠাতে পারে না। কারণ বাংলাদেশ থেকে বিদেশে এক টাকাও বৈধপথে পাঠানো হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। এছাড়া কোন টাকা পাঠানো যায় না। পরে আমার ঘনিষ্ট ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সী “ ফ্লাইয়ার ট্যুরস এন্ড  ট্রাভেল লিঃ” কোম্পানীর মালিক মি. সামির এর সহযোগিতায় রাতে ব্যাংকক এয়ারওয়েজ এর টিকিট কেটে আমরা দেশে আসি। অর্থাৎ মি. সামির আমাদের বাকিতে মানে তার নিজের টাকা দিয়ে আমাদের জন্য বিমানের টিকিট বাংলাদেশ থেকে কেটে দেন। পরে সেই টিকিট আমাদের মোবাইলে এসএমএস করেন।  এ জন্য আমরা রক্ষা পাই এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞ।      

কম খরচের কিছু তথ্য :
১। প্রথমেই কোন দেশ ঘুরার জন্য এয়ার টিকেটই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দামী। তাই বর্তমানে যত আগে এয়ার টিকেট কিনবেন তত কম দামে পাবেন। অর্থাৎ আপনি ইচ্ছে করলে প্রায় এক বছর আগেও এয়ার টিকেট কিনতে পারবেন। এয়ার টিকেট অবশ্যই রির্টানসহ কিনবেন। এছাড়া বছরে বিভিন্ন বিমান সংস্থা ফেয়ার দিয়ে থাকে। সে সময়ে টিকিটও প্রায় অর্ধেক দামে পাওয়া যায়। বিশেষ করে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও মালিনদো এয়ারওয়েজ বছরে একটি নিদিষ্ট মাসে ফেয়ার দিয়ে থাকে। তখন প্রায় অর্ধেক রেটে এয়ার টিকেট কিনে সারা বছরব্যাপি ভ্রমণ করা যায়। কাজেই এই সুযোগ কাজে লাগান।
২। ভিসা ফ্রি ও ভিসা ছাড়া ভ্রমন করা যায় এমন দেশ সম্পর্কে আপনার জানা থাকতে হবে। আর ভিসা ফ্রি সবচেয়ে কম খরচে করে (আমার দেখা) ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সী আছে। (নাম বললাম না, বললে এ্যাড. হয়ে যাবে)। অনেকে ভিসা ফ্রি সাধারণ রেটের চেয়ে এক থেকে দুই হাজার টাকা বেশি নিয়ে থাকে। তাই দরদাম করে ভিসা করতে হবে।
৩। আগেই বলেছি গ্রুপে বেশি লোক হলে খরচও কম হবে। তবে মিনিমাম দুইজন হতে হবে।
৪। বাজারে যখন ডলারের দাম কম থাকে তখন ডলার কিনে রাখতে হবে।
৫। বিদেশে গিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ডলার না ভাঙ্গানোই ভালো। কারণ এয়ারপোর্টে ডলারের রেট কিছুটা কম থাকে। তাই ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা কম দেয়।
৬। আপনার হোটেলের আশে-পাশে অনেক মানি এক্সচেঞ্জ দোকান পাবেন। যেখানে রেট বেশি, সেখান থেকে ডলার ভাঙ্গান। তবে ডলারের রেট সকাল-বিকাল উঠা নামা করে এবং বড় শহরে ডলারের রেট সাধারণত বেশি পাওয়া যায়।
৭। খাবারের হোটেলগুলোতে দরদাম করে খাবেন। প্রয়োজনে অন্য হোটেলে যাবেন।
৮। ঘুরাঘুরির প্যাকেজ কিনতে দরদাম করুন। কারণ আশে-পাশে অনেক ট্রাভেল এজেন্ট পাবেন।
৯। ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করতে হোটেলের অথবা স্থানীয় ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করুন। 
১০। সব সময় একসাথে গ্রুপ করে সব কিছু করুন। তাতে প্রায় সব কিছুতেই ডিসকাউন্ট পাবেন।

অবশেষে আমার এই লেখাতে কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। তবে কোথায় ভুল হয়েছে তাহা জানালে সংশোধন হবো ও করবো। যে কোন পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করবো। যোগাযোগ করতে পারেন। ফোন : ০১৭১১-১০৬৯৭০, ০১৭১৩-৫৩২৩৬৩। ই-মেইল : ripon.kazi@gmail.com

3 comments:

  1. খুব ভাল লাগলো আপনার লেখা। জন্ম আমার নোয়াখালিতে,তাই জন্মস্থান ও কৈবল্যধাম,সীতাকুণ্ড ও বাংলাদেশ ঘোরার বড় ইচ্ছা,কোথায় কেমন ভাবে যাবো জানালে ভাল হয়।

    ReplyDelete
  2. আপনাকে ধন্যবাদ চমৎকার ভ্রমণ বিষয়ক লেখার জন্য। থাইল্যান্ড ভ্রমণের ইচ্ছা অনেক দিন থেকে। বাংলাদেশি অনেক ট্যুর এবং ট্রাভেলের কোম্পানির সাথে কয়েকবার কথা হয়েছে। তাদের উপর ১০০% আশা করা যায় কিনা? ধারণা থাকলে জানাবেন। আমি একা। পূর্ব অভিগ্তা এমন লোক পাচ্ছি না। এ ব্যাপারে আপনার সুপরামর্শ কামনা করছি যেন ২০১৮ সালের মধ্যেই যেতে পারি। ইনসাল্লাহ।

    ReplyDelete