Monday, June 30, 2014

সৌন্দযের্র লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


চারপাশ গাছগাছালিতে ঢাকা, মাঝরাতে হঠাৎই একপাল শেয়ালের হুক্কা হুয়া চিৎকারের সাথে তাল মিলিয়ে ডেকে ওঠে রাতজাগা পাখি, ভেঙ্গে যায় মধ্য রাতের নিস্তব্ধতা। বনের তীর ঘেষে বয়ে চলা আঁকা বাঁকা জলাশয়ে সিঁদুরে হিজল ফুল আর ডালে ডালে মাছরাঙ্গার তীক্ষ চোখ শিকারের আশায় কিন্তু এটি কোন বনের অংশ নয়। সারি সারি সোডিয়াম বাতির হলুদ আলো সকল জাগতিকতাকে হার মানায়। কখনো হর্ণ বাঁজিয়ে ছুটে যায় দূরন্ত বাস, চারদিক সরগরম থাকে মানুষের কোলাহলে কিন্তু এটি কোন শহরের গল্প নয়। পাহাড়ের
টিলার মাঝে লাল মৃত্তিকার বন্ধুর ভূমিতে উঁচু নিচু পিচ ঢালা রাস্তা কিন্তু এটি কোন পার্বত্য অঞ্চল নয়। বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নান্দনিক এসব দৃশ্য ধারণ করে আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এটি দেশের অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয় হতে ব্যতিক্রম। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ক্যাম্পাসের যেমনি রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা তেমনি রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। বিশ্ববিদ্যালয়টি নৈসর্গিক দৃষ্টিকোণে বাংলাদেশের অন্যান্য ক্যাম্পাসের চেয়ে অনিন্দ্য সুন্দর। সবুজ বনভূমির ফাঁকে ফাঁকে লাল ইটের তৈরি ইমারতে সজ্জিত অনন্য ভূদৃশ্যাবলীযুক্ত ‘বৈচিত্রময় ক্যাম্পাস’ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছ্ েএই বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো ক্যাম্পাসের ভূ-দৃশ্য উ্চুঁ নিচু পাহাড়ের ছোট ছোট টিলার মত। টিলা গুলো আবার সবুজ গাছে ঢাকা। দেখতে পার্বত্য অঞ্চলের প্রবেশ দ্বার বলেই মনে হয়।
ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে এবং ডেইরী ফার্মের বিপরীত পাশে অবস্থিত এই ক্যাম্পাসটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ক্যাম্পাসের দক্ষিণে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন কেন্দ্র, উত্তরে জাতীয় স্মৃতি সৌধ। ক্যাম্পাসের উঁচু নিচু বন্ধুর ভুমির মাঝ দিয়ে বয়ে চলা আঁকা বাঁকা প্রায় ২২ টি লেকের মাঝে ফুটে আছে নানা রঙের ফুল, বিশেষ করে লাল শাপলা কিংবা পদ্ম। লেকের ধার ঘেষে অতি যতেœ বেড়ে ওঠা সারি সারি গাছ আর তারই মাঝ দিয়ে উঁচু নিচু জালের মত ছড়িয়ে থাকা রাস্তাগুলো ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে করেছে আরও মনোমুগ্ধকর, যেন শিল্পির তুলির ছোঁয়ায় জীবন্ত কোন ছবি।
দেশী-বিদেশী প্রায় ১০ লাখ গাছগাছালিতে ভরা এই সাতশ একরের ক্যাম্পাসকে পাখির চোখে মনে হয় সবুজের সমুদ্র। সুবৃহৎ এই ক্যাম্পাসে ঘন জঙ্গলের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা প্রায় ২২ টি লেক প্রতি শীতে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে আসা প্রায় শতাধিক প্রজাতির হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখিরিত হয়ে ওঠে।
লেকের অভ্যন্তরে লাল সাদা শাপলার মাঝে অতিথি পাখির বিচরণ বাড়িয়ে দেয় ক্যাম্পাসের নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে। বাংলাদেশে এটিই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে অতিথি পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে ক্যাম্পাসবাসীর। অতিথি পাখির আগমনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় পাখিবরণ উৎসব, দেশের একমাত্র পাখি ও পিঠা মেলা সহ নানান অনুষ্ঠানের। আর অতিথি পাখি দেখতে সকাল বিকাল দেশী বিদেশী পর্যটকের ভিড় পড়ে ক্যাম্পাসে ।
ক্যাম্পাসের এই নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি উন্নত কারিকুলামে পাঠ দান পদ্ধতি রয়েছে। যেখানে দেশের শীর্ষ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখনো তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে। আগামীতে ক্যাম্পাসের এই নির্মল পরিবেশে থেকে এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির কল্যাণে অগ্রণী ভুমিকা রাখবে দেশবাসী সেটিই আসা করে।

No comments:

Post a Comment