Monday, June 30, 2014

ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

রাজধানী ঢাকার এয়ারপোর্ট রোডে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রধান এবং সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। বিমানবন্দরটি ১৯৮১ একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত। ১৯৭৯ সালে এই বিমান বন্দরটির নাম ছিল ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। ১৯৮১ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। সবশেষে ২০১০ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বাংলাদেশে প্রথম এবং একমাত্র আন্তর্জাতিক তেজগাঁও বিমান বন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে এর সকল কার্যক্রম কুর্মিটোলায় স্থানান্তর করা হয়। প্রতিবছর এই বিমানবন্দর থেকে আভ্যন্তরীন এবং আন্তর্জাতিক রুটে ৫২ শতাংশ ফ্লাইট ওঠানামা করে। এই বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিবছর ৪০ লক্ষ আন্তর্জাতিক এবং ১০ লক্ষ আভ্যন্তরীন যাত্রী যাতায়াত করে থাকে এবং বার্ষিক প্রায় ১,৫০,০০০ টন মালামাল পরিবহন করা হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর বাংলাদেশকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর সাথে সংযুক্ত করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিমান অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ বিমান এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপ এবং এশিয়ার ৩১টির বেশী শহরে তার ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করে আসছে।
বিমানবন্দরটি ঢাকার উত্তরে কুর্মিটোলায় অবস্থিত। কুর্মিটোলার অবস্থানটি হলো ৮টি লেন বিশিষ্ট ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে, যা এয়ারপোর্ট রোড নামে পরিচিত। এর উত্তরে দিকে চলে গেছে উত্তরা, টঙ্গী ডাইভারশন রোড এবং গাজীপুর যাওয়ার সড়কটি। রেলওয়ে ষ্টেশনটি এয়ারপোর্টের ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত। বিমানবন্দরের নিকটের আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন একটি হোটেল রয়েছে, তার নাম “The Dhaka Regency Hotel”।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি দেশের প্রধানতম ৪টি এয়ারলাইন্সের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে। এয়ারলাইন্সগুলো হলো: (০১) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স; (০২) জিএমজি এয়ারলাইন্স; (০৩) ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এবং (০৪) রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এছাড়া ৩০টির বেশী আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইটগুলো এই বিমানবন্দরের মাধ্যমে পরিচালনা করে থাকে।
বিমানবন্দরটিতে রয়েছে রানওয়ে, দুটি টার্মিনাল বিল্ডিং, হ্যাঙ্গারস, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রাডার, গুদামঘর এবং এয়ারক্রাফট ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনার অত্যাধুনিক সকল যন্ত্রপাতি।
অবকাঠামো
বিমানবন্দরটিতে দুইটি প্রধান টার্মিনাল রয়েছে। টার্মিনাল দুটি হচ্ছে; (০১) Terminal 1 (T1) এবং (০২) Terminal 2 (T2)। আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটসমূহ পরিচালনায় T1  এবং T2  ব্যবহার করা হয়। T1  এবং T2 এর সংযোগ স্থানটিকে আভ্যন্তরীন রুটের ফ্লাইটসমূহ পরিচালনায় ব্যবহার করা হয়। এ্যারাইভেল ডেকটি বিমানবন্দরের নিচতলায় (Ground Floor) এ অবস্থিত। ডিপারচার হলটি বিমানবন্দরের প্রথম তলায় অবস্থিত (Upper Floor) এ অবস্থিত। এই বিমানবন্দরে একটি ভিআইপি টার্মিনাল (VIP Terminal) রয়েছে। ভিআইপি টার্মিনালটি ২০০ মিটার জুড়ে বিস্তৃত।এই টার্মিনালটি কদাচিত ব্যবহার করা হয়। বিমানবন্দর টার্মিনালে রয়েছে ডিউটি ফ্রি শপ, মেডিক্যাল সার্ভিসেস, ব্যাংকিং এবং এটিএম সেবা, শারিরীক অসুস্থতার জন্য গাড়ী ভাড়া করার কাউন্টার, কোন কিছু হারানো গেলে সেজন্য যোগাযোগ কাউন্টার, মালপত্র বহনের সুবিধাসহ রয়েছে ভিআইপি লঞ্জি সার্ভিস।
আন্তর্জাতিক রুটের অনেক এয়ারলাইন্সের বিমানগুলো শাহজালাল বিমানবন্দর ব্যবহার করে যাত্রী এবং মালপত্র বহন করে থাকে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; Aeroflot, British Airways, Emirates, Gulf Air, Indian Airlines, Kuwait Airways, Malaysia Airlines, Pakistan International Airlines, Royal Nepal Airlines, Saudi Airways, Singapore Airlines, Thai Airways অন্যতম। রিজিওনাল রুটের ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হয়  বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স; জিএমজি এয়ারলাইন্স; ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, এ্যারো বেঙ্গল এয়ারলাইন্স, এয়ার পারাবত এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজের মাধ্যমে। নিয়মিত ফ্লাইটগুলো ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন বিভাগে যাতায়াত করে থাকে। রিজিওনাল ফ্লাইটগুলো সাশ্রয়ী হয় এবং সপ্তাহে ২/৩ দিন যাতায়াত করে।
পরিবহন এবং গাড়ি পার্কিং
গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রয়েছে সুপ্রশস্ত তলাবিশিষ্ট নিজস্ব বহুতল ভবন। এখানে গাড়ি, বাস এবং কোচ সার্ভিসের গাড়িগুলো অনায়াসেই পার্ক করা যায়। এখান সবসময়ই সিএনজি, ক্যাব এবং অটোরিক্সা পাওয়া যায়। এছাড়া এয়ারপোর্টের যাত্রী পরিবহনের জন্য নিজস্ব সাটল বাস রয়েছে। এছাড়া ঢাকার আন্তর্জাতিকমানের হোটেলগুলোর নিজস্ব ট্যুরিস্ট পিক আপ বাসগুলো অপেক্ষমান অবস্থায় থাকে।
শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে যেসব আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট চালু রয়েছে
Airlines
Destinations
Air Arabia Sharjah
Air Asia Kuala Lumpur
Air China Shanghai-Pudong
Air India Delhi, Kolkata, Mumbai
Air Mauritius Bangalore, Chennai, Mauritius
Bahrain Air Bahrain
Bangkok Airways Bangkok-Suvarnabhumi, Yangon
Biman Bangladesh Airlines Abu Dhabi, Bahrain, Bangkok-Suvarnabhumi, Barcelona, Chittagong, Colombo, Cox’s Bazar, Dammam, Delhi, Doha, Dubai, Guangzhou, Frankfurt, Ho Chi Minh City, Hong Kong, Jakarta-Sokerno-Hatta, Jeddah, Karachi, Kathmandu, Kolkata, Kuala Lumpur, Kuwait, London-Heathrow, Madrid, Male, Manchester, Milan-Malpensa, Moscow-Domodedovo, Mumbai, Muscat, New York-JFK, Paris-CDG, Riyadh, Rome-Fiumicino, Singapore, Sydney, Sylhet, Toronto-Pearson, Tokyo-Narita, Tripoli
China Airlines Taipei-Taoyuan
China Eastern Airlines Beijing-Capital, Kunming
China Southern Airlines Guangzhou
Dragonair Hong Kong
Druk Air Kathmandu, Paro
Egypt Air Cairo
Emirates Dubai
Etihad Airways Abu Dhabi
Flydubai Dubai
GMG Airlines Abu Dhabi, Bangkok-Suvarnabhumi, Cox’s Bazar, Chittagong, Delhi, Dubai, Jeddah, Jessore, Karachi, Kathmandu, Kolkata, Kuala Lumpur, Rajshahi, Riyadh, Saidpur, Sylhet
Gulf Air Bahrain
Jet Airways Delhi, Mumbai, Kolkata
Kenya Airways Beirut, Nairobi
Kingfisher Airlines Kolkata
Korean Air Seoul-Incheon
Kuwait Airways Kuwait
Malaysia Airlines Kuala Lumpur
Oman Air Muscat
Pakistan International Airlines Islamabad, Karachi, Lahore
Philippine Airlines Bangkok-Suvarnabhumi, Manila
Qatar Airways Doha
RAK Airways Ras Al Khaimah
Regent Airways Chittagong, Cox’s Bazar, Jessore, Sylhet
Royal Jordanian Amman-Queen Alia
Saudi Arabian Airlines Dammam, Jeddah, Riyadh, Madinah
Singapore Airlines Singapore
SriLankan Airlines Colombo
Thai Airways International Bangkok-Suvarnabhumi
Turkish Airlines Istanbul-Atatürk
United Airways Chittagong, Cox’s Bazar, Dubai, Jessore, Kathmandu, Kolkata, Kuala Lumpur, Rajshahi, Sylhet
মালবাহী কার্গো এয়ারলাইন্সের বিমানগুলোর সম্ভাব্য গন্তব্যস্থলসমূহ
Airlines
Destinations
British Airways World Cargo Chennai, Frankfurt, London-Stansted, Zaragoza
Cathay Pacific Cargo Hong Kong
China Cargo Airlines Chongqing, Nanning, Shanghai-Pudong
Etihad Crystal Cargo Abu Dhabi, Bangalore, Chennai
Lufthansa Cargo Frankfurt, Delhi, Mumbai
Qatar Airways Cargo Doha
Saudi Arabian Airlines Cargo Dammam
Singapore Airlines Cargo Amsterdam, Chennai, Sharjah, Singapore
 ইমিগ্রেশনে কড়াকড়ি
  • বাংলাদেশ পরিদর্শন করতে অন্যান্য দেশের নাগরিকের নিকট বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। ইউনাইটেড নেশন এর লোক যারা ঘনঘন বাংলাদেশে আসেন, যাদের পরিচয় সনদ রয়েছে এবং জাহাজের নাবিক যাদের ডিসচার্জ সনদ (সংশ্লিষ্ট দেশ কর্তৃক প্রদত্ত) রয়েছে এবং যেসকল নাবিকদের প্রত্যাবাসন দেয়া হয়েছে বা যারা যোগ দিতে যাচ্ছেন তাদের পাসপোর্ট বহন করতে হয়না।
  • বাংলাদেশ পরিদর্শনে নিম্নে উল্লেখিত দেশগুলোর নাগরিক ব্যাতিত অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ভিসা ব্যবহার করতে হয়: Bhutan, Barbados, Cyprus, Fiji, New Zealand, Western Samoa, Canada, Singapore, Tonga, Leone, Lesotho, Zambia, Tanzania, Malta, Nigeria, Kenya, Somalia, Nauru, Bahamas, Grenada, Papua New Guinea, Seychelles, Trinidad, Tobago, Ghana, Srilanka (একমাসের বেশী অবস্থান করা যাবেনা), Ireland, Tunisia, Vatican, Gabon এবং Spain. এছাড়া Yugoslavia, Japan এর যেসকল নাগরিক বাংলাদেশে ৩ মাসের বেশী অবস্থান করেননা তাদের ভিসা ব্যবহার করতে হয়না।
  • যেসকল নাগরিক ১৫ দিনের জন্য ট্রানজিটের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিদর্শনে আসেন এবং যাদের রিটার্ন টিকেট রয়েছে তাদের এন্ট্রি পারমিট বা ভিসা ব্যবহার করতে হয়না। এইসকল নাগরিকদের দেশগুলো নিম্নরুপ: U.S.A., Norway, Sweden, Denmark, Finland, Netherlands, France, Portugal, Spain Italy, Federal Republic Of Germany, Luxembourg, Belgium, Australia, Indonesia, Thailand, Nepal, Austria, Maldives, Philippines, Switzerland, U.K. এবং Greece. কালো তালিকাভূক্ত নাগরিকগন এই সুবিধা প্রযোজ্য নয়।
  • বিদেশী মিশনারী বা সমাজকর্মীর বাংলাদেশ পরিদর্শনে ভিসা ব্যবহার করতে হয়।
  • যেসকল বিদেশী নাগরিককে ভিসা নিতে হয় এবং যেসকল বিদেশী নাগরিক অনিবার্য পরিস্থিতিতে বা অবহেলার দরুন যারা ভিসা গ্রহন করতে পারেন নাই তাদেরকে ৭২  ঘন্টার ভিসা প্রদান করা হয়। তাদেরকে নিকটস্থ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পরিচালক, ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট বিভাগে যোগাযোগ করতে হয়।
  • বিদেশী নাগরিককে রোড পারমিট গ্রহণ করতে হয়।
কাস্টমস এর নিয়মকানুন
  • বাংলাদেশ পরিদর্শনে আসার অথবা বাংলাদেশ থেকে গমনের সময় সকল নাগরিককে তাদের সাথে নিয়ে আসা মালপত্র এবং কারেন্সী কাষ্টম অফিসে চেক করাতে হয়। কারেন্সীর একটি স্টেটমেন্ট বা ফর্ম কাষ্টম অফিসারের নিকট জমা দিতে হয় এই মর্মে যে, ভিজিটর কি পরিমানে কারেন্সী সংগে রেখেছেন।
  • অবৈধ কোন পন্য বাংলাদেশে নিয়ে আসলে বা বাংলাদেশ থেকে গমনের সময় ধরা পড়লে কাষ্টম কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।
বাংলাদেশে মোট ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। যথা; (০১) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা); (০২) শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (চট্টগ্রাম) এবং (০৩) ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (সিলেট)। এছাড়াও ৭টি আভ্যন্তরীন বিমানবন্দর রয়েছে। যথা; (০১) সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট; (০২) শাহ মাখদুম এয়ারপোর্ট, রাজশাহী; (০৩) যশোর এয়ারপোর্ট; (০৪) বরিশাল এয়ারপোর্ট; (০৫) কক্সবাজার এয়ারপোর্ট; (০৬) তেজগাঁও এয়ারপোর্ট এবং (০৭) ইশ্বরদী এয়ারপোর্ট (কার্যক্রম বন্ধ)। এছাড়া শমসেরনগর এবং কুমিল্লায় স্টল পোর্ট রয়েছে। আভ্যন্তরীন রুটের বিমানগুলো সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য উঠানামার কাজে এই পোর্টটি ব্যবহৃত হয়। STOL PORT এর সম্পূর্ন নাম হচ্ছে “Short Take-off and Landing Port”। এই কার্যক্রম এখন আপাতত বন্ধ রয়েছে।

No comments:

Post a Comment