বাংলাদেশের যে কয়েকটি জেলা স্বনামে খ্যাত
রাজশাহী তার মধ্যে অন্যতম। রাজশাহী জেলায় ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ অনেক স্থান
রয়েছে। পুঠিয়া ঐতিহাসিক স্থানটি রাজশাহী জেলায় অবস্থিত।
কোথায় অবস্থিত
পুঠিয়া রাজশাহী জেলায় অবস্থিত। রাজশাহী জেলার
একটি উপজেলাও এই পুঠিয়া। পুঠিয়া উপজেলায় রয়েছে, পুঠিয়া রাজবাড়ী, পুঠিয়া
মন্দির ছাড়াও অনেক দৃষ্টিনন্দন স্থান।
যা যা দেখতে পাবেন
পুঠিয়ায় দেখার মতো রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান ও বিষয়। নিচে এ সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো:
- পুঠিয়া রাজবাড়ী
- বড় আহ্নিক মন্দির
- পুঠিয়া বড় শিবমন্দির
- পুঠিয়া দোল মন্দির
- পুঠিয়া গোবিন্দ মন্দির
পুঠিয়া রাজবাড়ী
পুঠিয়া বাজারে দক্ষিণ পার্শ্বে দ্বিতল বিশিষ্ট
আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত পুঠিয়া রাজবাড়িটি একটি আকর্ষণীয় ইমারত। বহুকক্ষ
বিশিষ্ট রাজবাড়ীর প্রধান প্রবেশপথ সিংহ দরজা উত্তরদিকে অবস্থিত। জমিদার বা
রাজারা এখান থেকে তাদের রাজকর্ম পরিচালনা করতেন। এ রাজবাড়ীতে দোষী
ব্যক্তিদের শাস্তি দানের ব্যবস্থাসহ বন্দীশালার ব্যবস্থা ছিল। চুন সুড়কীর
মসলনা ও ছোট আকৃতির ইট দ্বারা নির্মিত বাজবাড়ীর সম্মুখভাগে আকর্ষণীয়
ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। রাজবাড়ির নিরাপত্তার
জন্য চারপার্শ্বে জলাশয়ের ব্যবস্থা ছিল। স্থানীয় জমিদার পরিবারের সদস্যদের
দ্বারা উনবিংশ শতাব্দীতে এটি নির্মিত হয়েছিল। রাজবাড়ির প্রত্নতত্তণ
অধিদপ্তরের নিয়মত্রণাধীন পুরাকীর্তির হলেও বর্তমানে এটি লস্করপুর ডিগ্রী
কলেজ হিসেবে ব্যবহ্নত হচ্ছে।
বড় আহ্নিক মন্দির
পুঠিয়া রাজবাড়ী লেকের প্রায় ১০০ মিটার পশ্চিমে
জমিদার বাড়ীর বৃহৎ দিঘীর পশ্চিম পার্শ্বে পাশাপাশি তিনটি মন্দির আছে।
এগুলোর মধ্যে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত মন্দিরটি চারআনী বড় আহ্নিক নামে পরিচিত।
উত্তর দক্ষিণে লম্বা আয়তকার পরিকল্পনায় নির্মিত তিন কক্ষ বিশিষ্ট মন্দিরের
প্রবেশ পথ পূর্বদিকে অবস্থিত। এই মন্দিরের মাঝের কক্ষটির ছাদ দোচালা
পদ্ধতিতে নির্মিত। দু’পাশের কক্ষ দু’টি বর্গাকার এবং চার চালা ছাদ দ্বারা
আচ্ছাদিত। মন্দিরের পূর্বপার্শ্বে সম্মুখ দেওয়াল বিভিন্ন ধরণের পোড়ামাটির
ফলক চিত্র দ্বারা সজ্জিত। স্থাপিত বিন্যাস অনুযায়ী মন্দিরটি খ্রিষ্টীয়
১৭/১৮ শতকে নির্মিত বলে অনুমিত হয়।
পুঠিয়া বড় শিবমন্দির
পুঠিয়া বাজারে প্রবেশ করতেই হাতের বাম পার্শ্বে
দিঘীর দক্ষিণ পাড়ে বড় শিব মন্দির অবস্থিত। ৪ মিটার উঁচু মঞ্চের উপর
নির্মিত মন্দিরের প্রধান প্রবেশ পথ দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। মন্দিরে উঠার জন্য
দক্ষিণ দিকে সিড়ি আছে। মন্দিরের উপর চার কোণে চারটি কেন্দ্রস্থলে একটি
চূড়া বা রত্ন আছে। কেন্দ্রীয় চূড়াটি প্রায় বিশ মিটার উঁচু। চতুষ্কোণাকৃতির
কাঠামোর উপরে পিরামিড আকৃতির চূড়াগুলো নির্মিত হয়েছে। এগুলোর চার পার্শ্বে
সন্নিবেশিত রয়েছে বিভিন্ন সতরে মোচার আকারে নির্মিত অসংখ্য ছোট ছোট চূড়া
মন্দিরের দেয়ালের বর্হিমূখে হিন্দু দেব-দেবীর ষ্ট্যাকূ অলংকরণ ছিল। যা
বর্তমানে প্রায় ধংসপ্রাপ্ত মন্দিরের কেন্দ্রীয় অংশে ৩.০০ মিটার বর্গাকার
কক্ষ এবং এক-চার কোণে চারটি কক্ষ। কোণের চারটি কক্ষের মধ্যবর্তী স্থানে
বারান্দা সন্নিবেশিত রয়েছে। মন্দিরের কেন্দ্রীয় কক্ষে বৃহৎ আকারের শিবলিঙ্গ
ও গৌরী পট্র রয়েছে। যাতে পূজারীরা এখনও পূজা অর্চণা করে থাকে। পুঠিয়ায়
অবস্থিত মন্দিরগুলোর মধ্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি। ১৮২৩ খ্রিঃ
পাঁচআনী জমিদার বাড়ীর রাণীভূবনময়ী দেবী এ মন্দির নির্মাণ করেন। এ মন্দির
ভূবনেশ্বর মন্দির বলা হয়ে থাকে।
পুঠিয়া দোল মন্দির
পুঠিয়া রাজবাড়ীর সম্মুখস্থল মাঠের উভয় পার্শ্বে
বর্গাকার পরিকল্পনায় নির্মিত চারতলা বিশিষ্ট মন্দিরে প্রত্যেক বাহুর
পরিমাপ ২১.৫৪ মিটার। ইষ্ট চুন ও সুড়কীর তৈরী দোল মঞ্চ মন্দিরটি ক্রমশঃ ছোট
থাকে থাকে উপরে উঠে গেছে। চতুর্থ তলের উপরে আছে মন্দিরের গম্বুজ আকৃতির
চূড়া। চূড়ার শীর্ষদেশে ফিনিয়েল দ্বারা শোভিত। প্রত্যেক তলার চারদিকে
প্রশস্ত টানা বারান্দা আছে। নীচতলায় প্রত্যেক বাহুতে সাতটি করে দ্বিতলের
পাঁচটি, ত্রিতলের তিনটি এবং চতুর্থ তলের প্রত্যেক বাহুতে একটি করে প্রবেশ
পথ আছে। পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে এ মন্দিরের উচ্চতা ২০ মিটার।
মন্দিরটি উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে পুঠিয়ার পাঁচআনী জমিদার বাড়ীর হেমন্ত
কুমারী দেবী কর্তৃক নির্মিত।
পুঠিয়া গোবিন্দ মন্দির
পুঠিয়া পাঁচআনী জমিদার বাড়ীর অঙ্গনে অবস্থিত
গোবিন্দ মন্দির। গোবিন্দ মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি। উঁচু বেদীর
উপর প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটি বর্গাকার পরিকল্পনায় নির্মিত। মন্দির গাত্রে
অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক চিত্র আছে। রামায়ন,মহাভারত ও পৌরাণিক কাহিনীর রুপায়ন
ছাড়াও ফলক চিত্রের মাধ্যমে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ছবিও তুলে ধরা হয়েছে। এই
মন্দিরটি ১৮ শতকে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়।
বানেশ্বর আমের হাট
পুঠিয়া থেকে রাজশাহীর দিকে প্রায় ছয়
কিলোমিটার দূরে বানেশ্বরে মহাসড়ক ও আশপাশের এলাকা জুড়ে বসে বিশাল এক
বাজার। আমের মৌসুমে সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত অবধি চলে এ বাজার। এ
ছাড়া শনিবার ও মঙ্গলবার খুব সকালে এখানে বসে বিশাল কলার হাট। সাধারণত বেলা
দশটার মধ্যেই এ হাটের লোক সমাগম কমে যায়।
কীভাবে যাবেন
নিজস্ব গাড়িতে জায়গাটিতে ভ্রমণে গেলে রাজশাহী
শহরের প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার আগে পড়বে জায়গাটি। এ ছাড়া রাজশাহীগামী
যেকোনো বাসে গিয়েও পুঠিয়া নামা যায়। আবার রাজশাহী থেকে লোকাল বাসে
পুঠিয়া আসতে সময় লাগে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। রাজশাহী কেন্দ্রীয় বাস
টার্মিনাল থেকে নাটোরগামী বাসে চড়ে পুঠিয়া নামা যায়।
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে রাজশাহী যাওয়া
যায়। এ পথে দেশ ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, গ্রীন লাইনের এসি বাসে
ভাড়া ৮০০ টাকা। এ ছাড়া ন্যাশনাল ট্রাভেলস, শ্যামলি পরিবহন, হানিফ
এন্টারপ্রাইজ, দেশ ট্রাভেলস প্রভৃতি পরিবহনের নন এসি বাসে ভাড়া ৪০০-৪৫০
টাকা। ঢাকার কমলাপুর থেকে রোববার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টা ৪০
মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেস
এবং ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে
ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস।
কোথায় থাকবেন
পুঠিয়া ভ্রমণে গেলে রাত যাপন করার জন্য
রাজশাহীই উত্তম। এ শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। এসব
হোটেলে ৫০০-৪০০০ টাকায় বিভিন্ন মানের কক্ষ পাওয়া যাবে। রাজশাহী
চিড়িয়াখানার সামনে পর্যটন মোটেল, রাজশাহী কলেজের সামনে রেড ক্যাসল, সাহেব
বাজারে হোটেল নাইস, সাহেব বাজারে হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল,
বিন্দুরমোড় রেল গেইটে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, গণকপাড়ায় হোটেল নাইস
ইন্টারন্যাশনাল, মালোপাড়ায় হোটেল সুকর্ণা ইন্টারন্যাশনাল, শিরোইলে হকস্
ইন ইত্যাদি।
No comments:
Post a Comment