বাংলাদেশে পাহাড় ও হ্রদ একসঙ্গে দেখ যাবে—এ রকম জায়গা খুব কম, এর মধ্যে
রাঙামাটি একটি। আগে রাঙামটি ঘুরে দেখলেও পাহাড়ি গ্রাম বা আদিবাসীদের
জীবনযাত্রার পরিচয় পাইনি। আমরা কয়েকজন বন্ধু লোকালয় থেকে একটু দূরে এমন
কোনো জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম, কোথায় যাব ভাবছি। এ সময় রাঙামাটির
বিলাইছড়ি থেকে এক বন্ধুর দাওয়াত পেয়ে হাতে যেন চাঁদ পেলাম।
আমরা সাত বন্ধু- দুই জোড়া দম্পতি ও তিনজন ব্যাচেলর বিলাইছড়ি রওনা দিলাম। রাতে সরাসরি কাপ্তাইয়ের বাসে রওনা দিয়ে সকাল আটটার মধ্যে সেখানে পৌঁছে গেলাম। খবর নিয়ে জানা গেল, সাড়ে নয়টায় বিলাইছড়ির ট্রলার যাত্রা শুরু করবে, এরপর প্রতি ঘণ্টায় ট্রলার আছে। আমরা প্রথম ট্রলারেই রওনা দিয়ে ১১টার দিকে পৌঁছে গেলাম বিলাইছড়ি।
এখানে রাস্তা তেমন নেই। এক পাড়া থেকে আরেক পাড়া ঘুরতে গেলেও নৌকা লাগে, তবে এখন কয়েকটি সেতু হয়েছে। আমরা নৌকা নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের গাইড হলো স্থানীয় একজন চাকমা। জানা গেল, বিলাইছড়ি উপজেলার নাম হয়েছে একই নামের ঝরনা থেকে। ছড়ি অর্থ ঝরনা আর বিলাই মানে স্থানীয় ভাষায় বাঘ। অনেক আগে প্রথম লোকবসতি শুরুর সময় এখানে ছড়ি থেকে পানি আনতে গিয়ে এক পাহাড়ি বধূ বাঘের সামনে পড়ে যায়, তখন থেকে ওই ঝরনার নাম হয়ে যায় বিলাইছড়ি এবং সংলগ্ন লোকালয় একই নামে পরিচিত হয়ে যায়। ‘তবে এখন সেই রামও নাই এবং অযোধ্যাও নাই’-এর মতো এখানে কোনো বাঘ নেই। তবে এখনো ওই ঝরনা বা ছড়ি দেখা যায়।
কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষে পাহাড়, নদী, জঙ্গল ও হ্রদ নিয়ে সুন্দর একটি উপজেলা বিলাইছড়ি। অপ্রতুল যোগাযোগব্যবস্থা, তেমন প্রচার না হওয়ায় এই এলাকা এখনো লোকজনের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠেনি। গাড়ির হর্ন, কোলাহল ও নাগরিক জীবনের অপ্রিয় কিন্তু এড়ানো সম্ভব নয়,—এ ধরনের সব জিনিস এখানে এসে ভুলে থাকা যায়। অলস ঘুঘুডাকা দুপুর এখনো পাওয়া যায়। এখানে দেখার মতো প্যাগোডা, কমলা বাগান, পাহাড়, নদী, হ্রদ আছে। তবে এখানকার সহজ-সরল আদিবাসীদের সঙ্গে না ঘুরলে বা কথা না বললে ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যাবে।
বিলাইছড়িতে গেলে বাজার অবশ্যই ঘুরবেন, আদিবাসীদের নানা রকম পাহাড়ি বনজ ও অপ্রচলিত খাবার, যেমন—আদা ফুল, হলুদ ফুল, বাঁশের খোড়ল, শামুকসহ নানা রকম পাহাড়ি ঢেঁকিশাক দেখতে পাবেন। তবে সবজি দেখতে সুন্দর হলেই যে খেতে ভালো হবে, এই ধারণা নিয়ে বাজারে গেলে এবং আগে এ ধরনের খাবার না খেলে কিঞ্চিত অসুুবিধায় পড়তে হতে পারে। আমাদের সহযাত্রী মেয়েরা এই সুন্দর ফুল দেখেই কিনে ফেলল এবং খাওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিল। কিন্তু একবার মুখে দেওয়ার পর মনে হলো, ফুল হাতে এবং চুলেই ভালো, রান্নাঘরে বা খাবার প্লেটে নয়।
বিলাইছড়িতে খাবারের খুব ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই নিজেরা বাজার করে হোটেল থেকে রান্না করিয়ে নেওয়াই ভালো। কাপ্তাই লেকের মাছ না খেলে ভ্রমণের মজা অন্তত বারোআনাই মাটি। আমরা মাছ ধরার চেষ্টাও চালিয়েছি ধার করা বড়শি দিয়ে, কিন্তু ভাগ্য বিরূপ। কাঁকড়াও পেলাম না, শেষ পর্যন্ত বাজারই ভরসা।
বিলাইছড়িতে গেলে প্রথমেই ঘোরা উচিত ভিন্ন উপজাতিদের পাড়াগুলো। প্রতিটি উপজাতির আছে আলাদা ঐতিহ্য, আলাদা কাহিনি। এ ছাড়া কমলা বাগান, কাজুবাদামের বাগান ঘুরে দেখা যায়। তবে কাপ্তাই হূদ ও নদী অবশ্যই সময় নিয়ে দেখা উচিত। এ জন্য নৌকা নিয়ে ভ্রমণ করা যায়।
এ ছাড়া আশপাশের বেশ কিছু লোকালয় আছে, যেগুলো দিনেই ঘুরে আসা যায়। কিছুটা দূরে ফারুয়া বাজার আছে, পুরো দিন হাতে থাকলে সকালে বেরিয়ে বিকেলে চলে আসা যায়। এ ছাড়া আরও কিছু নাম না জানা পাহাড় আছে। বিলাইছড়ির পাহাড় কাপ্তাই বাঁধের অংশ হিসেবে কাজ করে। তাই মূল রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় এক পাশে গভীর গিরিখাদ, অপর পাশে পানিভরা হ্রদ চোখে পড়ে। এটাও দেখা উচিত হ্রদের গভীরতা বোঝার জন্য।
এই মৌসুমে যাওয়ার আগে অবশ্যই রোদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টুপি নিয়ে যেতে হবে। সাঁতার কাটার ইচ্ছা থাকলে কাপড় নিতে হবে। আর টর্চলাইট নিতে ভুলবেন না। কারণ, বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকতে হবে।
কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন
বিলাইছড়ি যাওয়ার আগে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে যাওয়া উচিত। বিলাইছড়ি বাজারে কাঠের দোতলা হোটেল আছে, যদিও থাকার জন্য খুব একটা ভালো বলা যাবে না। এ ছাড়া উপজেলা অফিসের একটি বাংলো আছে, যেখানে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে গেলে ভালো হয়। হোটেলের ভাড়া খুবই কম।
ঢাকা থেকে বিলাইছড়িতে যেতে হলে সরাসরি বাসে কাপ্তাই গিয়ে, সেখান থেকে ট্রলারে বিলাইছড়ি যাওয়া যায়। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। আবার সরাসরি রাঙামাটি বাসে গিয়ে, সেখান থেকে ট্রলারে দুই-আড়াই ঘণ্টা ভ্রমণ করে বিলাইছড়ি পৌঁছা যায়। ট্রলার ভাড়া ৫০ থেকে ১০০ টাকা প্রতিজনের জন্য। আর পুরো ট্রলার ভাড়া নিতে মোটামুটি ৫০০-৬০০ টাকা লাগবে। ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙামাটি যায় এমন বাস আছে—এস আলম, ডলফিন, শান্তিসহ বেশ কিছু পরিবহন সংস্থার।
আমরা সাত বন্ধু- দুই জোড়া দম্পতি ও তিনজন ব্যাচেলর বিলাইছড়ি রওনা দিলাম। রাতে সরাসরি কাপ্তাইয়ের বাসে রওনা দিয়ে সকাল আটটার মধ্যে সেখানে পৌঁছে গেলাম। খবর নিয়ে জানা গেল, সাড়ে নয়টায় বিলাইছড়ির ট্রলার যাত্রা শুরু করবে, এরপর প্রতি ঘণ্টায় ট্রলার আছে। আমরা প্রথম ট্রলারেই রওনা দিয়ে ১১টার দিকে পৌঁছে গেলাম বিলাইছড়ি।
এখানে রাস্তা তেমন নেই। এক পাড়া থেকে আরেক পাড়া ঘুরতে গেলেও নৌকা লাগে, তবে এখন কয়েকটি সেতু হয়েছে। আমরা নৌকা নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের গাইড হলো স্থানীয় একজন চাকমা। জানা গেল, বিলাইছড়ি উপজেলার নাম হয়েছে একই নামের ঝরনা থেকে। ছড়ি অর্থ ঝরনা আর বিলাই মানে স্থানীয় ভাষায় বাঘ। অনেক আগে প্রথম লোকবসতি শুরুর সময় এখানে ছড়ি থেকে পানি আনতে গিয়ে এক পাহাড়ি বধূ বাঘের সামনে পড়ে যায়, তখন থেকে ওই ঝরনার নাম হয়ে যায় বিলাইছড়ি এবং সংলগ্ন লোকালয় একই নামে পরিচিত হয়ে যায়। ‘তবে এখন সেই রামও নাই এবং অযোধ্যাও নাই’-এর মতো এখানে কোনো বাঘ নেই। তবে এখনো ওই ঝরনা বা ছড়ি দেখা যায়।
কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষে পাহাড়, নদী, জঙ্গল ও হ্রদ নিয়ে সুন্দর একটি উপজেলা বিলাইছড়ি। অপ্রতুল যোগাযোগব্যবস্থা, তেমন প্রচার না হওয়ায় এই এলাকা এখনো লোকজনের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠেনি। গাড়ির হর্ন, কোলাহল ও নাগরিক জীবনের অপ্রিয় কিন্তু এড়ানো সম্ভব নয়,—এ ধরনের সব জিনিস এখানে এসে ভুলে থাকা যায়। অলস ঘুঘুডাকা দুপুর এখনো পাওয়া যায়। এখানে দেখার মতো প্যাগোডা, কমলা বাগান, পাহাড়, নদী, হ্রদ আছে। তবে এখানকার সহজ-সরল আদিবাসীদের সঙ্গে না ঘুরলে বা কথা না বললে ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যাবে।
বিলাইছড়িতে গেলে বাজার অবশ্যই ঘুরবেন, আদিবাসীদের নানা রকম পাহাড়ি বনজ ও অপ্রচলিত খাবার, যেমন—আদা ফুল, হলুদ ফুল, বাঁশের খোড়ল, শামুকসহ নানা রকম পাহাড়ি ঢেঁকিশাক দেখতে পাবেন। তবে সবজি দেখতে সুন্দর হলেই যে খেতে ভালো হবে, এই ধারণা নিয়ে বাজারে গেলে এবং আগে এ ধরনের খাবার না খেলে কিঞ্চিত অসুুবিধায় পড়তে হতে পারে। আমাদের সহযাত্রী মেয়েরা এই সুন্দর ফুল দেখেই কিনে ফেলল এবং খাওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিল। কিন্তু একবার মুখে দেওয়ার পর মনে হলো, ফুল হাতে এবং চুলেই ভালো, রান্নাঘরে বা খাবার প্লেটে নয়।
বিলাইছড়িতে খাবারের খুব ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই নিজেরা বাজার করে হোটেল থেকে রান্না করিয়ে নেওয়াই ভালো। কাপ্তাই লেকের মাছ না খেলে ভ্রমণের মজা অন্তত বারোআনাই মাটি। আমরা মাছ ধরার চেষ্টাও চালিয়েছি ধার করা বড়শি দিয়ে, কিন্তু ভাগ্য বিরূপ। কাঁকড়াও পেলাম না, শেষ পর্যন্ত বাজারই ভরসা।
বিলাইছড়িতে গেলে প্রথমেই ঘোরা উচিত ভিন্ন উপজাতিদের পাড়াগুলো। প্রতিটি উপজাতির আছে আলাদা ঐতিহ্য, আলাদা কাহিনি। এ ছাড়া কমলা বাগান, কাজুবাদামের বাগান ঘুরে দেখা যায়। তবে কাপ্তাই হূদ ও নদী অবশ্যই সময় নিয়ে দেখা উচিত। এ জন্য নৌকা নিয়ে ভ্রমণ করা যায়।
এ ছাড়া আশপাশের বেশ কিছু লোকালয় আছে, যেগুলো দিনেই ঘুরে আসা যায়। কিছুটা দূরে ফারুয়া বাজার আছে, পুরো দিন হাতে থাকলে সকালে বেরিয়ে বিকেলে চলে আসা যায়। এ ছাড়া আরও কিছু নাম না জানা পাহাড় আছে। বিলাইছড়ির পাহাড় কাপ্তাই বাঁধের অংশ হিসেবে কাজ করে। তাই মূল রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় এক পাশে গভীর গিরিখাদ, অপর পাশে পানিভরা হ্রদ চোখে পড়ে। এটাও দেখা উচিত হ্রদের গভীরতা বোঝার জন্য।
এই মৌসুমে যাওয়ার আগে অবশ্যই রোদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টুপি নিয়ে যেতে হবে। সাঁতার কাটার ইচ্ছা থাকলে কাপড় নিতে হবে। আর টর্চলাইট নিতে ভুলবেন না। কারণ, বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকতে হবে।
কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন
বিলাইছড়ি যাওয়ার আগে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে যাওয়া উচিত। বিলাইছড়ি বাজারে কাঠের দোতলা হোটেল আছে, যদিও থাকার জন্য খুব একটা ভালো বলা যাবে না। এ ছাড়া উপজেলা অফিসের একটি বাংলো আছে, যেখানে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে গেলে ভালো হয়। হোটেলের ভাড়া খুবই কম।
ঢাকা থেকে বিলাইছড়িতে যেতে হলে সরাসরি বাসে কাপ্তাই গিয়ে, সেখান থেকে ট্রলারে বিলাইছড়ি যাওয়া যায়। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। আবার সরাসরি রাঙামাটি বাসে গিয়ে, সেখান থেকে ট্রলারে দুই-আড়াই ঘণ্টা ভ্রমণ করে বিলাইছড়ি পৌঁছা যায়। ট্রলার ভাড়া ৫০ থেকে ১০০ টাকা প্রতিজনের জন্য। আর পুরো ট্রলার ভাড়া নিতে মোটামুটি ৫০০-৬০০ টাকা লাগবে। ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙামাটি যায় এমন বাস আছে—এস আলম, ডলফিন, শান্তিসহ বেশ কিছু পরিবহন সংস্থার।
No comments:
Post a Comment