কাল ছুটির দিন। বেড়াতে যাব, তবে ঢাকার আশপাশে। কিন্তু সব পরিচিত জায়গাই
ঘুরে দেখা শেষ। এক বন্ধু জানাল, খুব ভোরে বের হলে ঢাকা শহরের কাছেই ডেমরা জামদানির হাট ঘুরে আসা যায়। শাড়ি কেনা হবে, আবার বেড়ানোও হবে। অর্থাৎ রথ
দেখা আর কলা বেচা দুটোই। যেই কথা, সেই কাজ। ভোর ছয়টায় স্ত্রীকে নিয়ে রওনা
হলাম।
দিনটি ছিল শুক্রবার, ভোরবেলা রাস্তাঘাট ফাঁকা। মোটসাইকেল যেন উড়ে চলছে। মিরপুর থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম ডেমরা ঘাটে। একজন রিকশাচালকের কাছে জানতে চাইলাম, জামদানির হাট কতদূর। উত্তর মিলল, এই তো সামনে, নতুন যে সেতুটি হচ্ছে, এর বাঁ পাশ দিয়ে সামনে নদীর তীর ধরে একটু এগোলেই আহমেদ বাওয়ানী জুট মিল, পরেই বাওয়ানী উচ্চবিদ্যালয়। পাশেই হাট বসেছে শীতলক্ষ্যার তীরে। নদীতে নতুন পানি, সকালের রোদ আর তার মধ্যেই হালকা বৃষ্টি। রোদ হচ্ছে, মেঘ হচ্ছে, খেঁকশিয়ালের বিয়ে হচ্ছে—মনে মনে আওড়াই।
বাজারে এক পাশ করে গাড়ি পার্ক করার পরই দেখা মিলল তাঁতি মতিউরের। স্বেচ্ছায় তিনি বনে গেলেন আমাদের গাইড। তিনি জানালেন, ‘এই হাটে আসতে হয় আরও আগে। রাত তিনটা থেকে হাট শুরু আর শেষ হয় সকাল সাতটায়।’ হাটে ঢুকেই দেখি, এই সাতসকালেই মানুষের সমাগম। শাড়ি মেলে ধরে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করছেন বিক্রেতারা। রং, বুনন সম্পর্কেও নানা ধারণা দিচ্ছেন। এ হাটে কেনাবেচার পদ্ধতি বেশ মজার। কোনো দোকান নেই। তাঁতিরা হাতেই শাড়ি উঁচু করে নিয়ে ঘুরছেন। ক্রেতাদের পছন্দ হলে দাঁড়িয়ে দেখাচ্ছেন। সেখানে জমে যাচ্ছে আরও ক্রেতা।
ঘুরে ঘুরে শাড়ি কেনা হলো বেশ কয়েকটি। ঢাকার শপিং মলগুলোর তুলনায় দামটা কমই মনে হলো। জানা গেল হাটের পেছনের কথা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাড়ে এই হাট উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে চলে আসছে। আগে হাটের অবস্থা অত ভালো ছিল না। এখন একটি টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে এ হাট বসে। সপ্তাহজুড়ে তাঁতিরা শাড়ি বোনেন আর শুক্রবারে তা হাটে নিয়ে আসেন। সেদিন থাকে তাঁতিদের ছুটির দিন। সেদিন আর তাঁতে বসা হয় না। তাঁতি হাটে আসেন শাড়ি বিক্রি করতে। প্রকারভেদে শাড়ির দাম দেড় হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা। দাম নির্ভর করে সুতা এবং নকশার ওপর। এখানকার শাড়িগুলো ঢাকার নামীদামি দোকানগুলোয় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয়। ডেমরাজুড়ে কাজ করেন প্রায় দুই হাজার তাঁতি। ১০০ জনের মতো মহাজন আসেন ঢাকা থেকে। এ ছাড়াও আসেন খুচরো ক্রেতা। তাঁতি শফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিটি শাড়ি বানাতে ১০১টি যন্ত্রাংশ লাগে। তবে শাড়ি বেশ দেখেশুনে কিনতে হয় এই হাটে। দোকানে অনেক দিন পড়ে থাকে এমন শাড়িও বিক্রি করতে দেখা যায়।
শুধু শাড়ি কেনা নয়, বেড়ানোর চমৎকার জায়গা আছে আশপাশে। বাজার থেকে একটু ডানে তাকালেই চোখে পড়বে ছোট-বড় লঞ্চ, স্টিমার। পাশেই আছে নতুন সেতু। ঘুরে বেড়ানোর জন্য আমুলিয়া মডেল টাউন। নদী পার হয়ে চলে যেতে পারেন ওই পাশের গ্রামে। যেখানে বসে তাঁতিরা তৈরি করেন জামদানি। নৌকায় নদী পার হতে লাগে এক টাকা। মাঝিকে পাঁচ টাকা দিলে শুধু আপনাকে নিয়েই নৌকা ছেড়ে দেবে। ঘণ্টা হিসেবেও নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারেন। ৩০-৪০ টাকা লাগবে তাতে। ফুরফুরে বাতাসে মনে হবে তোফা একটা ঘুম দিই। তবে গান শোনার ইচ্ছা থাকলে কিন্তু মাঝিকে অনুরোধ করে লাভ নেই। এক গাল হেসে তিনি বরং আপনাকেই পাল্টা অনুরোধ করবেন গান গাইতে।
কীভাবে যাবেন
যাত্রাবাড়ী থেকে বাসে করে ডেমরা ঘাট। অথবা ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে গাড়ি বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে চলে আসতে পারেন। এ জন্য রাত তিনটা থেকে চারটার মধ্যে রওনা দিলেই ভালো হয়। ডেমরা ঘাটে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই জামদানি হাট দেখিয়ে দেবে। ঘাট থেকে পাঁচ-ছয় মিনিটের হাঁটা পথ। আবার যদি চিটাগাং রোড হয়ে আসতে চান তাও সহজ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সরাসরি ডেমরা ঘাট।
দিনটি ছিল শুক্রবার, ভোরবেলা রাস্তাঘাট ফাঁকা। মোটসাইকেল যেন উড়ে চলছে। মিরপুর থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম ডেমরা ঘাটে। একজন রিকশাচালকের কাছে জানতে চাইলাম, জামদানির হাট কতদূর। উত্তর মিলল, এই তো সামনে, নতুন যে সেতুটি হচ্ছে, এর বাঁ পাশ দিয়ে সামনে নদীর তীর ধরে একটু এগোলেই আহমেদ বাওয়ানী জুট মিল, পরেই বাওয়ানী উচ্চবিদ্যালয়। পাশেই হাট বসেছে শীতলক্ষ্যার তীরে। নদীতে নতুন পানি, সকালের রোদ আর তার মধ্যেই হালকা বৃষ্টি। রোদ হচ্ছে, মেঘ হচ্ছে, খেঁকশিয়ালের বিয়ে হচ্ছে—মনে মনে আওড়াই।
বাজারে এক পাশ করে গাড়ি পার্ক করার পরই দেখা মিলল তাঁতি মতিউরের। স্বেচ্ছায় তিনি বনে গেলেন আমাদের গাইড। তিনি জানালেন, ‘এই হাটে আসতে হয় আরও আগে। রাত তিনটা থেকে হাট শুরু আর শেষ হয় সকাল সাতটায়।’ হাটে ঢুকেই দেখি, এই সাতসকালেই মানুষের সমাগম। শাড়ি মেলে ধরে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করছেন বিক্রেতারা। রং, বুনন সম্পর্কেও নানা ধারণা দিচ্ছেন। এ হাটে কেনাবেচার পদ্ধতি বেশ মজার। কোনো দোকান নেই। তাঁতিরা হাতেই শাড়ি উঁচু করে নিয়ে ঘুরছেন। ক্রেতাদের পছন্দ হলে দাঁড়িয়ে দেখাচ্ছেন। সেখানে জমে যাচ্ছে আরও ক্রেতা।
ঘুরে ঘুরে শাড়ি কেনা হলো বেশ কয়েকটি। ঢাকার শপিং মলগুলোর তুলনায় দামটা কমই মনে হলো। জানা গেল হাটের পেছনের কথা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাড়ে এই হাট উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে চলে আসছে। আগে হাটের অবস্থা অত ভালো ছিল না। এখন একটি টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে এ হাট বসে। সপ্তাহজুড়ে তাঁতিরা শাড়ি বোনেন আর শুক্রবারে তা হাটে নিয়ে আসেন। সেদিন থাকে তাঁতিদের ছুটির দিন। সেদিন আর তাঁতে বসা হয় না। তাঁতি হাটে আসেন শাড়ি বিক্রি করতে। প্রকারভেদে শাড়ির দাম দেড় হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা। দাম নির্ভর করে সুতা এবং নকশার ওপর। এখানকার শাড়িগুলো ঢাকার নামীদামি দোকানগুলোয় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয়। ডেমরাজুড়ে কাজ করেন প্রায় দুই হাজার তাঁতি। ১০০ জনের মতো মহাজন আসেন ঢাকা থেকে। এ ছাড়াও আসেন খুচরো ক্রেতা। তাঁতি শফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিটি শাড়ি বানাতে ১০১টি যন্ত্রাংশ লাগে। তবে শাড়ি বেশ দেখেশুনে কিনতে হয় এই হাটে। দোকানে অনেক দিন পড়ে থাকে এমন শাড়িও বিক্রি করতে দেখা যায়।
শুধু শাড়ি কেনা নয়, বেড়ানোর চমৎকার জায়গা আছে আশপাশে। বাজার থেকে একটু ডানে তাকালেই চোখে পড়বে ছোট-বড় লঞ্চ, স্টিমার। পাশেই আছে নতুন সেতু। ঘুরে বেড়ানোর জন্য আমুলিয়া মডেল টাউন। নদী পার হয়ে চলে যেতে পারেন ওই পাশের গ্রামে। যেখানে বসে তাঁতিরা তৈরি করেন জামদানি। নৌকায় নদী পার হতে লাগে এক টাকা। মাঝিকে পাঁচ টাকা দিলে শুধু আপনাকে নিয়েই নৌকা ছেড়ে দেবে। ঘণ্টা হিসেবেও নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারেন। ৩০-৪০ টাকা লাগবে তাতে। ফুরফুরে বাতাসে মনে হবে তোফা একটা ঘুম দিই। তবে গান শোনার ইচ্ছা থাকলে কিন্তু মাঝিকে অনুরোধ করে লাভ নেই। এক গাল হেসে তিনি বরং আপনাকেই পাল্টা অনুরোধ করবেন গান গাইতে।
কীভাবে যাবেন
যাত্রাবাড়ী থেকে বাসে করে ডেমরা ঘাট। অথবা ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে গাড়ি বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে চলে আসতে পারেন। এ জন্য রাত তিনটা থেকে চারটার মধ্যে রওনা দিলেই ভালো হয়। ডেমরা ঘাটে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই জামদানি হাট দেখিয়ে দেবে। ঘাট থেকে পাঁচ-ছয় মিনিটের হাঁটা পথ। আবার যদি চিটাগাং রোড হয়ে আসতে চান তাও সহজ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সরাসরি ডেমরা ঘাট।
No comments:
Post a Comment