Thursday, August 14, 2014

উৎসবে কক্সবাজার

কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় বিভিন্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করেণ বাংলা নববর্ষ। চৈত্র সংক্রান্তি থেকে এ উৎসব শুরু হয়ে চলে প্রায় সপ্তাহজুড়ে। তবে এর আকর্ষণীয় পর্ব পানি খেলা শুরু হয় বৈশাখের চতুর্থ দিন থেকে। আর চলে ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত। রাখাইন বুদ্ধিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি মং ফ্লা চিং জানালেন, ‘এবারের ওয়াটার ফেস্টিভাল বা পানি খেলা চলবে ৪ বৈশাখ থেকে ৬ বৈশাখ অবধি। ইংরেজি তারিখের হিসেবে ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল।’ এ উৎসবে পয়লা বৈশাখে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল রাখাইন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা অষ্টশীল পালনের জন্য মন্দিরে যান। এদিন বুদ্ধ মূর্তিকে চন্দন জলে স্নান করানোর পরে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও স্নান করেন এবং নতুন পোশাক পরিধান করেন। কক্সবাজারে রাখাইন সম্প্রদায়ের এ উৎসবের মূল জায়গা হলো শহরের চাউল বাজার সড়কের টেকপাড়া। বাড়ির আঙ্গিনায় আঙ্গিনায় এখানে চলে ‘পানি খেলা’র আয়োজন। সঙ্গে থাকে রাখাইন সম্প্রদায়ের সব বয়সের নারী-পুুরষের সম্মিলিত নাচ আর গান। মূল উৎসবে রাখাইন যুবকরা বাদ্য অর গানের তালে তালে এসে উপস্থিত হন বিভিন্ন বাড়ির আঙ্গিনায়। সেখানে ফুলে ফুলে সুজ্জিত প্যান্ডেলের ভেতরে পানি নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন রাখাইন তরুণীরা। চলে একে অপরকে পানি ছিটানো। পনিকে প্রবিত্রতার প্রতীক ধরে নিয়ে রাখাইন তরুণ-তরুণীরা পানি ছিটিয়ে নিজেদের শুদ্ধ করে নেন। পুরনো বছরের সব কালিমা আর জীর্ণতাকে ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেন তারা। সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে এ সময়ে সবাই নতুন পোশাক পড়েন। রাখাইনদের সাংগ্রাই উৎসব বৈচিত্র্যে পরিপূর্ন। সব আদিবাসীরাই বর্ষবরণের এ উৎসব পালন করেন বিভিন্ন নামে। কেউ বৈসুক, কেউ আবার সাংগ্রাই আবার কেউ বিজু। গোটা পার্বত্য এলাকায় এ উৎসব বৈসাবি নামেই পরিচিত। বৈসুক, সাংগ্রাই আর বিজু এই তিন নামের আদ্যাক্ষর নিয়েই বৈসাবি শব্দের উৎপত্তি।
কক্সবাজারের সৈকতে
কক্সবাজারে রাখাইনদের এ উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয় মুলত প্রতিদিন বিকেল থেকে। তাই এ ভ্রমণে দিনের প্রথম ভাগটা ঘুরে বেড়াতে পারেন কক্সকবাজার সমুদ্র সৈকত ও এর আশপাশের দর্শনীয় জায়গাগুলিতে। কক্সবাজার এসে এখানকার সমুদ্র সৈকত না দেখলে কেমন হয়। প্রথমেই বেড়াতে পারেন দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতে। এ সময়ে সমুদ্র একটু উত্তাল বলে সাবধানতার সঙ্গে সাগরে নামবেন। দ্বিতীয় দিন সকাল বেলা চলে যান হিমছড়ি ও ইনানী। কলাতলী থেকে জিপে চড়ে যেতে পারেন এ জায়গা দুটিতে। খুব সকালে গেলে জায়গা দুটি ঘুরে আবার দুপুরের মধ্যেই ফিরতে পারবেন কক্সবাজার শহরে। কক্সবাজার থেকে জিপে যেতে পারবেন এখানে। রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ১৫০০-২০০০ টাকা। আর লোকাল জিপে গেলে এ জায়গা দুটি ঘুরে আসতে জনপ্রতি খরচ হবে ২০০-২৫০ টাকা। ভ্রমণ যদি তিন দিনের হয় তবে তৃতীয় দিন প্রথমার্ধে ঘুরে দেখতে পারেন কক্সবাজার শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাখাইন সম্প্রদায়ের উপসনালয় অগামেধ্যা কেয়াং, বার্মিজ মার্কেট, শহরে জাদির পাহাড়ের প্যাগোডা ইত্যাদি। আর প্রতিদিন দুপুরের পরে উপভোগ করুন রাখাইন সম্প্রদায়ের আকর্ষণীয় ওয়াটার ভেস্টিভাল বা পানি খেলা।

কিভাবে যাবেন
সড়কপথে ও আকাশ পথে সরসরি কক্সবাজার আসা যায়। এ পথে এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসে ভাড়া ৫০০-৬৫০ টাকা। গ্রীন লাইন, সোহাগ, সৌদিয়া, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের এসি বাসে ভাড়া ৯৫০-১২৫০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ার ও জিএমজি এয়ারের বিমানে সরাসরি যেতে পারেন কক্সবাজার।
কোথায় থাকবেন
কক্সবাজারে থাকার জন্য এখন প্রচুর হোটেল রয়েছে। ধরণ অনুযায়ী এ সব হোটেলের প্রতি দিনের রুম ভাড়া ৩০০- ৫০০০ টাকা। পাঠকদের সুবিধার জন্য নিচে কয়েকটি হোটেলের ফোন নম্বর দেয়া হলো। কক্সবাজারে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের রয়েছে হোটেল শৈবাল, ফোন- ৬৩২৭৪। মোটেল উপল, ফোন- ৬৪২৫৮। মোটেল প্রবাল, ফোন- ৬৩২১১। মোটেল লাবনী, ফোন- ৬৪৭০৩। পর্যটন করপোরেশনের ঢাকাস্থ হেড অফিস থেকেও এসব হোটেলের বুকিং দেয়া যায়।
যোগাযোগ
৮৩-৮৮, মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা। ফোন- ৯৮৯৯২৮৮-৯১। এছাড়া অন্যান্য হোটেল হলো হোটেল সি গাল, (পাঁচ তারা), ফোন- ৬২৪৮০-৯১, ঢাকা অফিস ৮৩২২৯৭৩-৬। হোটেল সায়মন, ফোন-৬৩২৩৫, ঢাকা অফিস ৮৬১৪৫৬৫। হোটেল সি কুইন, ফোন- ৬৩৭৮৯, ৬৩৮৭৮। হোটেল সাগর গাঁও লি. ফোন- ৬৩৪৪৫, ৬৩৪২৮। সুগন্ধা গেস্ট হাউস, ফোন- ৬২৪৬৬। জিয়া গেস্ট ইন, ফোন- ৬৩৯২৫। হোটেল সি হার্ট, ফোন- ৬২২৯৮। হোটেল ডায়মন্ড প্লেস এন্ড গেস্ট হাউস, ফোন- ৬৩৬৪২। গেস্ট কেয়ার লি. ফোন- ৬৩৯৩০। হোটেল প্যানওয়া লি. ফোন- ৬৪৪৩০। কক্সবাজারের এনডব্লিউডি কোড-০৩৪১।
ট্রাভেল ব্যাগ

কক্সবাজার ভ্রমণে এ সময়ে বৃষ্টির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই এ ভ্রমণে ট্রাভেল ব্যাগটিতে নিম্নের জিনিসগুলি নিতে পারেন। হালকা রঙের কাপড়, সৈকতে হাঁটার উপযোগী স্যান্ডেল, রেইন কোট অথবা ছাতা, রোদ টুপি, রোদ চশমা, টর্চ, ক্যামেরা, মেমোরি কার্ড, মোবাইল ফোনের চার্জার, দরকারি ঔষধ ইত্যাদি।

No comments:

Post a Comment