‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এলো বান।’ একটা শব্দ বদলে বলা যায়, বৃষ্টি
পড়ে টাপুর টুপুর হ্রদে এল বান। কারণ, রাঙামাটিতে কোনো নদ বা নদী নেই, আছে
পাহাড়ঘেরা হ্রদ। ছোট-বড় পাহাড়ের খাদে খাদে জমে থাকা সেই হ্রদের নাম কাপ্তাই
হ্রদ। রাঙামাটির সৌন্দর্যের প্রাণ হলো ওই পাহাড়ঘেরা হ্রদ। বাদল দিনে
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের বুকজুড়েও টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে। বান হয় না, তবে
হ্রদটা জলে জলে টইটুম্বুর হয়। শীতের শীর্ণ ঝরনাগুলো স্রোতবতী হয়, ঝিরিঝিরি
থেকে ঝরঝর করে পাহাড় গড়িয়ে লেকের জলে নামতে থাকে শুভলং ঝরনার জল। সে এক
চমৎকার দৃশ্য, অবিশ্বাস্য উদ্দামতার এক ফেনিল আহ্বান।
শুভলং ঝরনা থেকে শুভলং বাজারে যাওয়ার পথে আছে আরও ঝরনা, আছে পাহাড়ে পাহাড়ে সবুজের মাখামাখি, দিগন্ত-বিস্তৃত আকাশের ক্যানভাস, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, কিংবা জলে ডুবে থাকা মরা গাছের ডালে মাছরাঙা আর গঙ্গাফড়িংয়ের ওড়াউড়ি। শীতের সেই টলটলে স্বচ্ছ জল নেই ঠিকই, তবে বাদলের ঘোলাটে জলেও পাহাড়ের ছায়া পড়ে। সে জলের ওপর দিয়ে রাঙামাটির পর্যটন ঘাট বা রিজার্ভ বাজার ঘাট থেকে ইঞ্জিন বোটে করে দ্বীপ রেস্তোরাঁ পেদা টিং টিং ভায়া শুভলং ঝরনা টু শুভলং বাজার ট্রিপটা তাই রাঙামাটির এক অন্য রকমের এক ভালো লাগা ভ্রমণ। একবেলা বা পুরো দিনের জন্য এক চমৎকার ভ্রমণ প্যাকেজ।
কোনো এক ভরা বাদলে মেঘ মাথায় করে বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে মেখে গিয়েছিলাম এ পথে। সেই সুখস্বপ্নে কেটেছে কয়েক বর্ষা। তাই এবার আর রাঙামাটির ও পথ মাড়ালাম না, গেলাম ভিন্ন পথে। তা ছাড়া বর্ষাটা তখনো জমিয়ে শুরু হয়নি। শুভলং গিয়ে হয়তো এখনই সেই উদ্দাম যুবতী ঝরনাকে পাব না।
কালবোশেখির রুদ্ররূপ মাঝেমধ্যেই হানা দিচ্ছে রাঙামাটিতে। বাংলোয় এক দুর্দান্ত কালবোশেখির রাত পার করেছি। কড়াৎ কড়াৎ মেঘের গর্জন, বাতাস আর ঝড়ের ঝাপটা, দাঁত খিঁচিয়ে বিদ্যুতের ঝলক, দুদ্দাড় করে গাছ ভেঙে পড়া—এ সবই সইতে হয়েছে। ভোরের আলো না ফুটতেই যখন বাংলো থেকে বন্ধু পবন চাকমার মোটরবাইকে করে রওনা হলাম কলেজ বাজারের পথে, তখন দেখি পথ আগলে পড়ে আছে চাপালিশ, আকাশমণি, মিনজিরি গাছ। অগত্যা ভিন্ন পথে ঘুরে সে বাজারে যেতে হলো। উদ্দেশ্য, স্থানীয় চাকমা আদিবাসীদের ভোরবেলার কাঁচাবাজারটা দেখা। সন্ধ্যায়ই পবন জানিয়ে রেখেছিল যে খুব ভোরে না গেলে রোদ উঠতে উঠতেই বাজার ভেঙে যাবে। তাই আদিবাসীদের বাজার দেখতে হলে ভোরেই বেরোতে হবে। চাকমারা জঙ্গলের ও পাহাড়ের অনেক কিছুই খায়। পবন বলল, ‘সেগুলো তোমাদের কাছে হয়তো অখাদ্য মনে হতে পারে। কিন্তু ওসব খাদ্য বিশেষ করে গাছগাছড়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে চাকমাদের সব সঞ্জীবনী ও সৌন্দর্যের শক্তি। তাই ওরা কোনো দিন কোনো চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা সহজে চিন্তা করে না। এ সময় তুমি বাজারে ছোট ছোট একধরনের বুটির মতো হলুদ ফুল দেখবে। আমরা বলি আগয্যা ফুল। পাহাড়ের জঙ্গলে ফোটে। বিকেলভর চাকমা মেয়েরা ওই ফুল তুলে ভোরে বেচতে আসে। ওই ফুল লেকের মাছ দিয়ে রান্না করে খাই। খুব মজা।’ দেখলাম ৬০ টাকা কেজি দরে ওই ফুল বিক্রি হচ্ছে। রাস্তার দুই ধারে চাকমা মেয়েরা বিছিয়ে বসেছে অনেক দোকান। নানা ধরনের লতাপাতা, জুমের সবজি, সুগন্ধি গাছ সাবরাং, বিন্নি চাল, বাঁশের কচি কোড়ক, তারা ডাঁটা, তিতবেগুন, বয়লা শাক, ইয়েরিং শাক, কয়দা, তিদেগুলা, কচি কাঁঠাল, বাংলা কলার মোচা, এমনকি স্ট্রবেরি ফল পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দলে দলে আদিবাসীরা সেসব কিনছে। ভোরের আলোয় রীতিমতো জমজমাট সেই বাজার।
বাজার থেকে ফিরে নাশতা সেরে এবার পথ ধরলাম কর্ণফুলী দুহিতা কাপ্তাই দেখতে। পবনের কথামতো পুরোনো পথে গেলাম না, গেলাম নতুন পথে—লেক ড্রাইভে। রাঙামাটি থেকে সম্প্রতি নতুন একটা রাস্তা হয়েছে আসামবস্তি হয়ে কাপ্তাই যাওয়ার। অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য সে পথের। চড়াই-উতরাই পাহাড় ডিঙিয়ে পিচঢালা পথে গাড়ি ধীরে ধীরে ছুটে চলল কাপ্তাইয়ের পথে। এটাই এখন কাপ্তাই যাওয়ার শর্টকাট রাস্তা। বাঁ দিকে বিস্তীর্ণ কাপ্তাই লেক, দূরে আবছায়া গিরিশ্রেণী, ডানে একেবারে হাতের কাছেই অনেক উঁচু-নিচু পাহাড়। সেসব পাহাড়ে খুব ফাঁকা ফাঁকা দু-একটা মাচাং ঘর, আগুনে পোড়া পাহাড়ের ঢাল, তার মানে জুম চাষের প্রস্তুতি। আকাশে দলা দলা কালো মেঘ। মেঘ ফুঁড়ে সূর্য উঠতে চাইছে। মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্যরশ্মি এসে পড়েছে লেকের জলে। গুঁড়ো গুঁড়ো রুপো ছড়ানো যেন লেকের বুকে। পাড়ে বাঁশ আর বাংলা কলার ঝোপ, নানা রকমের অরণ্যবৃক্ষ। কোথাও বা থুরং কাঁধে আদিবাসী মেয়েরা চলেছে পাহাড়ি পথ বেয়ে, কেউ কেউ ব্যস্ত রয়েছে জুমের পোড়া মাটি পরিষ্কার ও আগর বাগানের পরিচর্যায়। কেউ বা এরই মধ্যে লেকের জলে ছোট্ট ডিঙি বেয়ে চলেছে মাছ ধরতে নয়তো দূর পাহাড় থেকে কাঠ আনতে। এসব দেখতে দেখতে পেরিয়ে যাচ্ছি পথ, সেতু, ছোট ছোট বাজার, নিরিবিলি নবীন অরণ্য আর মেঘমাখা ক্লান্ত আকাশ। বৃষ্টিভেজা লালমাটির সোঁদা গন্ধ এসে নাকে লাগছে। বাতাসটাও ভেজা, ঠান্ডা। কী চমৎকার এক সকাল, কী অপূর্ব এক রাঙামাটি। এসব দেখতে দেখতেই একসময় চলে এলাম কর্ণফুলীর তীরে।
বাঁকে বাঁকে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি কন্যা কর্ণফুলী। শীতের সেই স্বচ্ছতা নেই জলে, নেই সবুজাভ রূপ। তবু ওর পাড়ে দাঁড়িয়ে মনে পড়ল নরওয়ের অসলোর সেই জলপাহাড়ি ফিজোর্ডের কথা। ওদেরটা বড়, আমাদেরটা ছোট। ওদের ফিজোর্ডে পর্যটকদের নিয়ে রাজহাঁসের মতো বড় বড় জাহাজ চলে, আমাদের চলে সাম্পান। অথচ একটু পরিকল্পনা নিলে ওই ছোট্ট জায়গাটাই কত না সৌন্দর্যে ভরে উঠতে পারত। কর্ণফুলী এখন বর্ষার জল পেয়ে ঘোলাটে নেশায় ফেঁপে উঠছে। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের পাশ দিয়ে যেতে যেতে কর্ণফুলীর দৃশ্য দেখে এসব কথাই বারবার মনে পড়তে লাগল। কাপ্তাই অরণ্যে শুনেছি বুনো হাতি আছে। সত্যি-মিথ্যে জানি না, তবে বেশ কিছু বানর আর একটা সাপ দেখলাম। প্রবেশপথে অবশ্য হাতির দেখা পেলাম, সেটা সিমেন্টের তৈরি। কাছেই স্বর্গের সিঁড়ি। শুনেছি ওখান থেকে কর্ণফুলীকে আরও চমৎকার দেখায়, দেখা যায় ওপারের চা-বাগানগুলো। একদিন স্বর্গের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে সেই স্বর্গসুখ উপভোগের ইচ্ছে তোলা রইল, আপাতত কাপ্তাই পৌঁছেই ইতি টানলাম মেঘ বাদলের রাঙামাটি দর্শনের।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙামাটি যাওয়ার বাস আছে। এ ছাড়া ট্রেনে করে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বাসে রাঙামাটি যেতে পারেন।
শুভলং ঝরনা থেকে শুভলং বাজারে যাওয়ার পথে আছে আরও ঝরনা, আছে পাহাড়ে পাহাড়ে সবুজের মাখামাখি, দিগন্ত-বিস্তৃত আকাশের ক্যানভাস, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, কিংবা জলে ডুবে থাকা মরা গাছের ডালে মাছরাঙা আর গঙ্গাফড়িংয়ের ওড়াউড়ি। শীতের সেই টলটলে স্বচ্ছ জল নেই ঠিকই, তবে বাদলের ঘোলাটে জলেও পাহাড়ের ছায়া পড়ে। সে জলের ওপর দিয়ে রাঙামাটির পর্যটন ঘাট বা রিজার্ভ বাজার ঘাট থেকে ইঞ্জিন বোটে করে দ্বীপ রেস্তোরাঁ পেদা টিং টিং ভায়া শুভলং ঝরনা টু শুভলং বাজার ট্রিপটা তাই রাঙামাটির এক অন্য রকমের এক ভালো লাগা ভ্রমণ। একবেলা বা পুরো দিনের জন্য এক চমৎকার ভ্রমণ প্যাকেজ।
কোনো এক ভরা বাদলে মেঘ মাথায় করে বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে মেখে গিয়েছিলাম এ পথে। সেই সুখস্বপ্নে কেটেছে কয়েক বর্ষা। তাই এবার আর রাঙামাটির ও পথ মাড়ালাম না, গেলাম ভিন্ন পথে। তা ছাড়া বর্ষাটা তখনো জমিয়ে শুরু হয়নি। শুভলং গিয়ে হয়তো এখনই সেই উদ্দাম যুবতী ঝরনাকে পাব না।
কালবোশেখির রুদ্ররূপ মাঝেমধ্যেই হানা দিচ্ছে রাঙামাটিতে। বাংলোয় এক দুর্দান্ত কালবোশেখির রাত পার করেছি। কড়াৎ কড়াৎ মেঘের গর্জন, বাতাস আর ঝড়ের ঝাপটা, দাঁত খিঁচিয়ে বিদ্যুতের ঝলক, দুদ্দাড় করে গাছ ভেঙে পড়া—এ সবই সইতে হয়েছে। ভোরের আলো না ফুটতেই যখন বাংলো থেকে বন্ধু পবন চাকমার মোটরবাইকে করে রওনা হলাম কলেজ বাজারের পথে, তখন দেখি পথ আগলে পড়ে আছে চাপালিশ, আকাশমণি, মিনজিরি গাছ। অগত্যা ভিন্ন পথে ঘুরে সে বাজারে যেতে হলো। উদ্দেশ্য, স্থানীয় চাকমা আদিবাসীদের ভোরবেলার কাঁচাবাজারটা দেখা। সন্ধ্যায়ই পবন জানিয়ে রেখেছিল যে খুব ভোরে না গেলে রোদ উঠতে উঠতেই বাজার ভেঙে যাবে। তাই আদিবাসীদের বাজার দেখতে হলে ভোরেই বেরোতে হবে। চাকমারা জঙ্গলের ও পাহাড়ের অনেক কিছুই খায়। পবন বলল, ‘সেগুলো তোমাদের কাছে হয়তো অখাদ্য মনে হতে পারে। কিন্তু ওসব খাদ্য বিশেষ করে গাছগাছড়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে চাকমাদের সব সঞ্জীবনী ও সৌন্দর্যের শক্তি। তাই ওরা কোনো দিন কোনো চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা সহজে চিন্তা করে না। এ সময় তুমি বাজারে ছোট ছোট একধরনের বুটির মতো হলুদ ফুল দেখবে। আমরা বলি আগয্যা ফুল। পাহাড়ের জঙ্গলে ফোটে। বিকেলভর চাকমা মেয়েরা ওই ফুল তুলে ভোরে বেচতে আসে। ওই ফুল লেকের মাছ দিয়ে রান্না করে খাই। খুব মজা।’ দেখলাম ৬০ টাকা কেজি দরে ওই ফুল বিক্রি হচ্ছে। রাস্তার দুই ধারে চাকমা মেয়েরা বিছিয়ে বসেছে অনেক দোকান। নানা ধরনের লতাপাতা, জুমের সবজি, সুগন্ধি গাছ সাবরাং, বিন্নি চাল, বাঁশের কচি কোড়ক, তারা ডাঁটা, তিতবেগুন, বয়লা শাক, ইয়েরিং শাক, কয়দা, তিদেগুলা, কচি কাঁঠাল, বাংলা কলার মোচা, এমনকি স্ট্রবেরি ফল পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দলে দলে আদিবাসীরা সেসব কিনছে। ভোরের আলোয় রীতিমতো জমজমাট সেই বাজার।
বাজার থেকে ফিরে নাশতা সেরে এবার পথ ধরলাম কর্ণফুলী দুহিতা কাপ্তাই দেখতে। পবনের কথামতো পুরোনো পথে গেলাম না, গেলাম নতুন পথে—লেক ড্রাইভে। রাঙামাটি থেকে সম্প্রতি নতুন একটা রাস্তা হয়েছে আসামবস্তি হয়ে কাপ্তাই যাওয়ার। অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য সে পথের। চড়াই-উতরাই পাহাড় ডিঙিয়ে পিচঢালা পথে গাড়ি ধীরে ধীরে ছুটে চলল কাপ্তাইয়ের পথে। এটাই এখন কাপ্তাই যাওয়ার শর্টকাট রাস্তা। বাঁ দিকে বিস্তীর্ণ কাপ্তাই লেক, দূরে আবছায়া গিরিশ্রেণী, ডানে একেবারে হাতের কাছেই অনেক উঁচু-নিচু পাহাড়। সেসব পাহাড়ে খুব ফাঁকা ফাঁকা দু-একটা মাচাং ঘর, আগুনে পোড়া পাহাড়ের ঢাল, তার মানে জুম চাষের প্রস্তুতি। আকাশে দলা দলা কালো মেঘ। মেঘ ফুঁড়ে সূর্য উঠতে চাইছে। মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্যরশ্মি এসে পড়েছে লেকের জলে। গুঁড়ো গুঁড়ো রুপো ছড়ানো যেন লেকের বুকে। পাড়ে বাঁশ আর বাংলা কলার ঝোপ, নানা রকমের অরণ্যবৃক্ষ। কোথাও বা থুরং কাঁধে আদিবাসী মেয়েরা চলেছে পাহাড়ি পথ বেয়ে, কেউ কেউ ব্যস্ত রয়েছে জুমের পোড়া মাটি পরিষ্কার ও আগর বাগানের পরিচর্যায়। কেউ বা এরই মধ্যে লেকের জলে ছোট্ট ডিঙি বেয়ে চলেছে মাছ ধরতে নয়তো দূর পাহাড় থেকে কাঠ আনতে। এসব দেখতে দেখতে পেরিয়ে যাচ্ছি পথ, সেতু, ছোট ছোট বাজার, নিরিবিলি নবীন অরণ্য আর মেঘমাখা ক্লান্ত আকাশ। বৃষ্টিভেজা লালমাটির সোঁদা গন্ধ এসে নাকে লাগছে। বাতাসটাও ভেজা, ঠান্ডা। কী চমৎকার এক সকাল, কী অপূর্ব এক রাঙামাটি। এসব দেখতে দেখতেই একসময় চলে এলাম কর্ণফুলীর তীরে।
বাঁকে বাঁকে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি কন্যা কর্ণফুলী। শীতের সেই স্বচ্ছতা নেই জলে, নেই সবুজাভ রূপ। তবু ওর পাড়ে দাঁড়িয়ে মনে পড়ল নরওয়ের অসলোর সেই জলপাহাড়ি ফিজোর্ডের কথা। ওদেরটা বড়, আমাদেরটা ছোট। ওদের ফিজোর্ডে পর্যটকদের নিয়ে রাজহাঁসের মতো বড় বড় জাহাজ চলে, আমাদের চলে সাম্পান। অথচ একটু পরিকল্পনা নিলে ওই ছোট্ট জায়গাটাই কত না সৌন্দর্যে ভরে উঠতে পারত। কর্ণফুলী এখন বর্ষার জল পেয়ে ঘোলাটে নেশায় ফেঁপে উঠছে। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের পাশ দিয়ে যেতে যেতে কর্ণফুলীর দৃশ্য দেখে এসব কথাই বারবার মনে পড়তে লাগল। কাপ্তাই অরণ্যে শুনেছি বুনো হাতি আছে। সত্যি-মিথ্যে জানি না, তবে বেশ কিছু বানর আর একটা সাপ দেখলাম। প্রবেশপথে অবশ্য হাতির দেখা পেলাম, সেটা সিমেন্টের তৈরি। কাছেই স্বর্গের সিঁড়ি। শুনেছি ওখান থেকে কর্ণফুলীকে আরও চমৎকার দেখায়, দেখা যায় ওপারের চা-বাগানগুলো। একদিন স্বর্গের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে সেই স্বর্গসুখ উপভোগের ইচ্ছে তোলা রইল, আপাতত কাপ্তাই পৌঁছেই ইতি টানলাম মেঘ বাদলের রাঙামাটি দর্শনের।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙামাটি যাওয়ার বাস আছে। এ ছাড়া ট্রেনে করে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বাসে রাঙামাটি যেতে পারেন।
No comments:
Post a Comment