Wednesday, August 13, 2014

গাজীপুর বেড়ানো

ঢাকা শহরের পার্শ্ববর্তী গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা গাজীপুর। এ জেলার উত্তরে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলা, পূর্বে কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা, দক্ষিণে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে ঢাকা ও টাঙ্গাইল জেলা অবস্থিত। এ জেলার বিভিন্ন স্থানে আছে বেশ কিছু বেড়ানোর জায়গা। ঢাকার পাশ্ববর্তী এসব জায়গায় ভ্রমণ নিয়ে  এবারের বেড়ানো।

জাগ্রত চৌরঙ্গী
গাজীপুর শহরের বেশ কিছুটা আগে জয়দেবপুর চৌরাস্তায় রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রথম স্মারক ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরে সংঘটিত প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে শহীদ হুরমত আলীসহ অন্যান্য শহীদদের স্মরণে ১৯৭১ সালেই নির্মিত হয় হয় এ ভাস্কর্যটি। এর স্থপতি আব্দুর রাজ্জাক। ভাস্কর্যটির উচ্চতা প্রায় একশো ফুট। আর এর দু’পাশে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১১ নং সেক্টরের ১০৭ জন এবং ৩নং সেক্টরের ১০০ জন শহীদ সৈনিকের নাম খোদাই করা আছে।
ভাওয়াল রাজবাড়ি
গাজীপুর সদরে অবস্থিত প্রাচীন এ রাজবাড়িটি। জমিদার লোক নারায়ণ রায় বাড়িটির নির্মাণ শুরশু করলেও শেষ করেন রাজা কালী নারায়ণ রায়। প্রায় পনের একর জায়গা জুড়ে মূল ভবনটি বিস্তৃত। ভবনটির দক্ষিণ পাশে মূল প্রবেশপথ। মূল প্রবেশপথের পরেই রয়েছে প্রশ্বস্ত একটি বারান্দা এবং এর পরে একটি হল ঘর। ভবনের ওপরের তলায় ওঠার জন্য ছিল শাল কাঠের তৈরি প্রশ্বস্ত সিঁড়ি। ভবনের উত্তর প্রান্তে খোলা জাগায় রয়েছে ‘নাটমণ্ডপ’। রাজবাড়ির সব অনুষ্ঠান হতো এ মঞ্চে। রাজবাড়ির মধ্যে পশ্চিমাংশের দ্বি-তল ভবনের নাম ‘রাজবিলাস’। এ ভবনের নিচে রাজার বিশ্রামাগারের নাম ছিল ‘হাওয়ামহল’। দক্ষিণ দিকে খোলা খিলান যুক্ত উম্মুক্ত কক্ষের নাম ‘পদ্মনাভি’। ভবনের দোতলার মধ্যবর্তী একটি কক্ষ ছিল রাণীমহল নামে পরিচিতি। সুরম্য এ ভবনটিতে ছোট বড় মিলে প্রায় ৩৬০টি কক্ষ আছে। বর্তমানে এটি জেলাপরিষদ কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী
ভাওয়াল রাজবাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে মৃতপ্রায় চিলাই নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী। এটি ছিল ভাওয়াল রাজ পরিবার সদস্যদের সবদাহের স্থান। প্রাচীন একটি মন্দির ছাড়াও এখানে একটি সমাধিসৌধ আছে।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান

গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর থানা জুড়ে অবস্থিত ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। পৃথিবীর অন্যান্য জাতীয় উদ্যানের আদলে ৬৪৭৭ হেক্টর জমিতে ১৯৭৩ সালে এ উদ্যান সরকারি ভাবে গড়ে তোলা হয়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মূল উদ্ভিদ হলো শাল। এছাড়াও নানা রকম গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ এ উদ্যান। জাতীয় উদ্যানের ভেতরে বেশ কয়েকটি বনভোজন কেন্দ্র, ১৩টি কটেজ ও ৬টি রেস্ট হাউস আছে। উদ্যানে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৬ টাকা। এ ছাড়া পিকনিক স্পট ব্যবহার করতে হলে বন বিভাগের মহাখালী কার্যালয় থেকে আগাম বুকিং দিয়ে আসতে হবে।
সফিপুর আনসার একাডেমি
জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় অবস্থিত আনসার-ভিডিপি একাডেমির বিশাল চত্ত্বর বেড়ানোর জন্য একটি উপযুক্ত যায়গা। অনুমতি সাপেক্ষে বনভোজন করারও ব্যবস্থা আছে এখানে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে গাজীপুর যেতে পারেন রেল ও সড়ক পথে। ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী প্রায় সব আন্তঃনগর, কমিউটার, মেইল ট্রেনে চড়ে আসতে পারেন গাজীপুর। এছাড়া ঢাকার কাঁচপুর ও যাত্রাবাড়ী থেকে ট্রান্স সিলভা, অনাবিল, ছালছাবিল পরিবহন, লোহারপুল থেকে রাহবার পরিবহন, মতিঝিল থেকে গাজীপুর পরিবহন, ভাওয়াল পরিবহন, অনিক পরিবহন, সদরঘাট থেকে আজমিরি, স্কাইলাইন পরিবহন, গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন ছাড়াও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাস সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলাচল করে গাজীপুরে বিভিন রুটে। ভাড়া ৪০-৬০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনেই শেষ করা সম্ভব গাজীপুর ভ্রমণ। তাই এখানে অবস্থান না করলেও চলে। তারপরেও শহরের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। এরকম হয়েকটি হোটেল হলো হোটেল আল মদিনা, থানা রোডে হোটেল মডার্ণ, কোনাবাড়িতে হোটেল ড্রীমল্যান্ড ইত্যাদি। এসব হোটেলে দৈনিক ১০০-২৫০ টাকায় থাকার ব্যস্থা আছে।

কিছু তথ্য
গাজীপুর থেকে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে যেতে হলে নিজস্ব পরিবহন না থাকলে জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে লোকাল বাস কিংবা টেম্পু যোগে যাওয়া ভালো। জাতীয় উদ্যানের বনভোজন কেন্দ্র ব্যবহার করতে হলে মহাখালী বন বিভাগের কার্যালয়ে এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন- ৮৮১৪৭০০। সফিপুর আনসার একাডেমিতে যেতে হলে ৭২১৪৯৫১-৯ এই নম্বরে যোগাযোগ করুন। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের বেশি ভেতরে গেলে সাবধানতা অবলম্বন করুন। একা একা কিংবা দু-তিনজন হলে বেশি ভেতরে না যাওয়াই ভালো।

No comments:

Post a Comment