Monday, July 21, 2014

সাপের ফনার মতো ফুসছে জলরাশি

মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি থেকে লাল ধুলোর রাস্তা ধরে কিলোমিটার তিনেক গেলেই ঘাঘরা। চার দিকে সবুজ শালের সমারোহ। আর মাঝে বিস্তীর্ণ ব্ল্যাক স্টোনের অজস্র গহ্বর ভেদ করে সাপের ফনার মতো ফুসছে জলরাশি। ইতিউতি মাথা উচিয়ে আছে টিলা।

জলের আঘাতে এখানকার পাথরগুলির আকৃতি কলসি বা গাগড়ির মতো। স্থানীয় ভাষায় তাকে বলে ‘গাগরা’। সেখান থেকেই ঘাঘরা নামটির জন্ম। বহু কাল ধরেই এই ঘাঘরা স্থানীয় উপজাতি ও অনুন্নত সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে অন্যতম পবিত্র স্থান। প্রতি পৌষ সংক্রান্তিতে আদিবাসী ও মাহাতো (কুর্মি) সম্প্রদায়ের লোকজন বাড়িতে টুসু পুজো করেন। পরদিন অর্থাৎ পয়লা মাঘ টুসু মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয় ঘাঘরার জলে। আগে পয়লা মাঘ টুসু বিসর্জন উপলক্ষে ঘাঘরায় বিশাল মেলা হত। একটা সময় এই মেলা ছিল মানভূম সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ মিলনোৎসব। এখনও এই বার্ষিক মেলা হয় বটে, তবে সেই জৌলুস আর নেই।
জনশ্রুতি, ১৮৭০ সালে বেলপাহাড়ির ব্রিটিশ প্রশাসক ফেেড্ররিক রাইস ঘোড়ায় চড়ে ঘুরতে ঘুরতে ঘাঘরায় এসে মোহিত হয়ে যান। সেখানেই বনভোজন করেন সাহেব। এর পরই ব্রিটিশদের কাছে ঘাঘরা হয়ে ওঠে পিকনিক স্পট।
লোকশিল্প ও সংস্কৃতি গবেষক মনোরঞ্জন মাহাতো জানান, ঘাঘরা সংলগ্ন তারাফেনি অববাহিকা অঞ্চলে প্রাচীন জীবাশ্ম ও নব্য প্রস্তর যুগের অস্ত্রশেস্ত্রর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল। ফলে, ঘাঘরার প্রাচীনত্ব নিয়ে সেন্দহের অবকাশ নেই।
যাতায়াত
– ঘাঘরা যেতে হলে পর্যটকদের ঝাড়গ্রামে আসতে হবে। ঝাড়গ্রাম থেকে ঘাঘরার দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। ঝাড়গ্রাম থেকে শুধু ঘাঘরা যেতে ভাড়ার গাড়িতে খরচ পড়বে ৮০০ টাকা। স্থানীয় পর্যটন অনুসন্ধান কেেন্দ্র ফোন করে গাড়ি ভাড়া করতে পারেন।
১) হাওড়া থেকে ঝাড়গ্রাম ট্রেনে ঘন্টা তিনেকের পথ। হাওড়া থেকে সকাল ৬ টা ৫৫ মিনিটে ইস্পাত এক্সেপ্রস ছাড়ে। ঝাড়গ্রাম পৌছায় সকাল ৯ টা নাগাদ।
২) হাওড়া থেকে বিকাল সাড়ে পাচটায় িস্টল এক্সেপ্রসে ঝাড়গ্রাম আসা যায়। এই ট্রেনটি রাত ৮টায় ঝাড়গ্রাম পৌছায়।
– বেলপাহাড়ি থেকেও গাড়ি ভাড়া করে ঘাঘরা যাওয়া যায়।
ঝাড়গ্রাম থেকে ঘাঘরা সহ বেলপাহাড়ির বেলপাহাড়ির অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলির ভাড়া গাড়ির প্যাকেজ রেট হল ৯০০ থেকে ১১০০ টাকার মধ্যে।
আস্তানা
ঘাঘরায় রাত্রিযাপনের কোনও ব্যবস্থা নেই। কাছাকাছি থাকার জায়গা বলতে বেলপাহাড়ি বা ঝাড়গ্রাম:
– রেল স্টেশনের সামনেই রয়েছে ঝাড়গ্রাম পর্যটন অনুসন্ধান কেন্দ্র (ফোন নম্বর: ০৩২২১-২০৫২০২)।
এখানে ফোন করে যে কোনও তথ্য ও হোটেল, গাড়ি বুকিং করা যায়।
ঝাড়গ্রাম শহরে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে লজ-হোটেলগুলিতে ডবল বেড (অ্যাটাচড্‌ বাথরুম) ঘর পাবেন।
এ ছাড়া ৬০০, ৮০০ থেকে ১৩৫০ টাকার মধ্যে বাতানুকূল দ্বিশয্যার ঘর পাবেন।
– ঝাড়গ্রাম পুরসভার বনানী অতিথি নিবাস ( ফোন: ০৩২২১-২৫৭৯৪৫)। ‘বনানী’র ম্যানেজার অঞ্জন ঘোষের মোবাইলে ফোন করেও (৯৮৩২৭৯১২৭০) রুম বুক করা যাবে। এখানে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে ডবল বেড ভাল ঘর পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ৬০০ টাকায় বাতানুকূল ঘর এবং ৮০০ টাকায় বাতানুকূল ভি আই পি স্যুইট পাবেন। বনানীর নিজস্ব প্যাকেজ ট্যুরও আছে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও ভাল।

No comments:

Post a Comment