Thursday, July 10, 2014

সাগরের গর্জনে দিশেহারা মন

কলাতলী সৈকত একসঙ্গে সাগর, নদী, পাহাড় আর গভীর সমুদ্রের দ্বীপ দেখতে চান? বাংলাদেশের এক জায়গায় সেটি সম্ভব। চলে আসুন তাই কক্সবাজারে
সাগরের গর্জনে দিশেহারা মন
বাইপাস সড়ক ধরে কক্সবাজার শহরে ঢুকতেই কানে বাজবে উত্তাল সাগরের গর্জন। পশ্চিম দিকে উঁকি দিলে নজরে পড়বে বিশাল সাগর। নরম বালুচরে নেমে দেখবেন লাল রঙের রাজকাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ, গভীর সাগরে মাছ ধরে জেলেদের ফিরে আসা। সাগরে নেমে লোনাজলে গা ভিজিয়ে নেওয়ার মুহূর্ত আপনার ভ্রমণ সার্থক করে তুলবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটু সাবধান ও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ সমুদ্রে সৃষ্টি হয়েছে একাধিক গুপ্তখাল। তা ছাড়া ভাটার সময় গোসলে নামা বিপজ্জনক। উত্তাল সাগরে ঢেউয়ের ওপর ছেলেমেয়েদের জলক্রীড়া (সার্ফিং) দেখে মন সতেজ করতে হলে যেতে হবে কলাতলী পয়েন্টে। সকাল আটটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত এখানে সার্ফিং প্রশিক্ষণ চলে। সৈকতের পাদদেশেই বিশাল ঝাউবাগান। উঁচু পাহাড়ের ওপর ৩০০ বছর আগে স্থাপিত জাদিরাম মন্দির, ক্যাং, বার্মিজ মার্কেট এবং নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লি ও ঝিনুক মার্কেট ঘুরে আসতে পারেন।
সোনাদিয়া সাগর চ্যানেল
দূর থেকে দেখতে প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনের মতো। কিন্তু সোনাদিয়ার সৌন্দর্য আলাদা। পাহাড়, সবুজ ঘন প্যারাবন পেছনে ফেলে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে যেতে হয় এই সোনাদিয়ায়। আবাসিক হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠেনি বলে সোনাদিয়া এখনো পর্যটকদের কাছে অপরিচিত। কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে এই দ্বীপের অবস্থান।
শহরের কস্তুরাঘাট দিয়ে আট থেকে দশজন মিলে একটি স্পিডবোটে মাত্র ১০ মিনিটের পথ সোনাদিয়া। হাতে দু-তিন ঘণ্টা সময় থাকলে পুরো দ্বীপ ঘুরে আসা যায়।
সোনাদিয়ার নরম বালুচরে দাঁড়িয়ে সকালে সূর্যোদয় ও বিকেলে সুর্যাস্ত দেখা যায়। সাগর থেকে ধরে আনা তরতাজা মাছ বালুচরে কেটেকুটে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করার কাণ্ডকারখানা স্বচক্ষে দেখা এবং কম দামে লাক্ষা, কোরাল, মাইট্যা ও লইট্যা শুঁটকি কেনার সুযোগ রয়েছে।
সোনাদিয়া থেকে স্পিডবোটে করে মহেশখালী ঘুরে আসতে পারেন। মহেশখালী চ্যানেলের তীরে মৈনাক পর্বতের ২৮৮ ফুট ওপরে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আদিনাথ মন্দির। একটু দূরে পাহাড়চূড়ায় রাখাইন সম্প্রদায়ের জাদি। রয়েছে গৌতম বুদ্ধের মূর্তি।
মানচিত্রের শেষ বিন্দু ছেঁড়াদিয়া
টেকনাফ উপজেলার প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের অবস্থান বঙ্গোপসাগরের মধ্যে। টেকনাফ সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩৪ কিলোমিটার। জাহাজ বা যাত্রীবাহী ট্রলারে করে যেতে হয়। সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। সেন্ট মার্টিন থেকে পূর্ব দিকে ট্রলার বা স্পিডবোটে করে যেতে হয় বাংলাদেশের মানচিত্রের শেষ বিন্দু ছেঁড়াদিয়া। এখানে কোনো লোকবসতি নেই। পুরোপুরি সংরক্ষিত এলাকা। এই দ্বীপের চতুর্দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রবাল-শৈবাল, শামুক-ঝিনুক। এসব মনভরে উপভোগ করা যায়, কিন্তু আহরণ, সংগ্রহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। স্বচ্ছ নীল জলের এই দ্বীপে দেখা মেলে নানা মাছের। স্পিডবোট নিয়ে সেন্ট মার্টিন থেকে মুহূর্তে ছেঁড়াদিয়া ঘুরে আসা যায়। এ ক্ষেত্রে জোয়ার-ভাটা দেখে নেওয়া ভালো। বালুচরে ঘোড়ার পিঠে চড়ে পুরো সৈকত ঘুরেফিরে দেখতে পারেন।
নাফ নদী, মাথিন কূপ
‘নাফ’ নদীর ‘টেকে’ অবস্থিত বলে উপজেলা শহরের নাম ‘টেকনাফ’। এই টেকনাফ থানা প্রাঙ্গণে মগ জমিদারকন্যা ‘মাথিন’ আর পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্যের অমর প্রেমের সাক্ষী ‘মাথিন কূপ’। দেড় কিলোমিটার দূরে টেকনাফ সমুদ্রসৈকত ঘুরে আসতে পারেন। নাফ নদীর তীরে নেটং (দেবতার পাহাড়) পাহাড়ে রয়েছে ঐতিহাসিক ব্রিটিশ বাংকার।
পাহাড়-ঝরনার হিমছড়ি
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে দক্ষিণ দিকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে ১০ কিলোমিটার গেলে পাহাড়ঘেরা অপরূপ ‘হিমছড়ি’। হিমছড়ির পাহাড়চূড়ায় ওঠার জন্য কয়েক শ ফুট উঁচু পাকা সিঁড়ি রয়েছে। পাহাড়ের ওপরে বসে নিচের গ্রাম ও সমুদ্র দেখতে ভালো লাগে। মনে হবে বিশাল সাগরের ওপর আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। হিমছড়ি যাওয়ার একটু আগে পাহাড়চূড়ায় দেখতে পাবেন ‘দরিয়ানগর’ পর্যটনপল্লি। এই পল্লির উঁচু পাহাড়ের নিচে রয়েছে এক কিলোমিটার দীর্ঘ কয়েক শ বছরের পুরোনো একটি সুড়ঙ্গপথ। রয়েছে একাধিক আদিগুহা ও ঝরনা। গাইডের মাধ্যমে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব পরিদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। ইচ্ছে করলে এই পাহাড়ে রাত কাটানো যায়। থাকার জন্য পাহাড়চূড়ায় রয়েছে বাংলো ও কটেজ।
পাথুরে সৈকত ইনানী
হিমছড়ি ঝরনা স্পট থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে পাথুরে সৈকত ইনানী। কক্সবাজার সৈকতে বালু ছাড়া কিছু নেই। কিন্তু ইনানী সৈকতে পাথরের সারিবদ্ধ স্তূপ। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই পাথরস্তূপের কারণে সৈকতের নামকরণ হয় পাথুরে সৈকত।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
গহিন অরণ্যে বাঘ, ভালুক, সিংহ, অজগরসহ নানা জীবজন্তু স্বচক্ষে দেখতে হলে যেতে হবে ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা গ্রামে পার্কের অবস্থান। এখানেও রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।
রম্যভূমির বৌদ্ধ নিদর্শন
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার সময় পথে পড়ে রম্যভূমি রামু। সড়কের দুই পাশে সুদৃশ্য সারি সারি রাবারবাগান।
প্যাকেজ ট্যুর
কক্সবাজার শহরের ৬২টি ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান ঈদের পরদিন থেকে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে। কক্সবাজার থেকে স্পিডবোটে মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির আসা-যাওয়া ৪৫০ টাকা। স্পিডবোটে সোনাদিয়া আসা-যাওয়া ৫৫০ টাকা। কক্সবাজার থেকে মাইক্রোবাসে টেকনাফ আসা-যাওয়া ৬৫০, টেকনাফ থেকে জাহাজে সেন্টমার্টিন দ্বীপ আসা-যাওয়া ৯০০ থেকে দুই হাজার টাকা, কক্সবাজার থেকে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক মাইক্রোতে আসা-যাওয়া ৪৬০ টাকা, কক্সবাজার থেকে রামু মাইক্রোতে আসা-যাওয়া ২৫০ টাকা, কক্সবাজার থেকে মাইক্রোবাসে হিমছড়ি-ইনানী আসা-যাওয়া ৬০০ টাকা। সঙ্গে দুপুরের খাবার পরিবেশন।

No comments:

Post a Comment