 যাত্রাটা বিপজ্জনক, আবার এমন সুন্দরও। ভিডিও গেমের ভেতরে যেন ঢুকে পড়েছি
 আমরা। চলছি সার বেঁধে। কখনো উঁচু, কখনো নিচু পথ। কখনো তা গিয়েছে উঁচু 
পাথরের ওপর দিয়ে, কখনো সামনে পড়েছে ভাঙা গাছ। কোথাও
যাত্রাটা বিপজ্জনক, আবার এমন সুন্দরও। ভিডিও গেমের ভেতরে যেন ঢুকে পড়েছি
 আমরা। চলছি সার বেঁধে। কখনো উঁচু, কখনো নিচু পথ। কখনো তা গিয়েছে উঁচু 
পাথরের ওপর দিয়ে, কখনো সামনে পড়েছে ভাঙা গাছ। কোথাও ঈদের পরদিনই ১১ জনের দল রওনা হলাম বান্দরবান। জ্যাম-ট্যাম নেই। একটানে পৌঁছে গেলাম। পরের গন্তব্য থানচি বাজার। শহর থেকে আঁকবাঁকা পথে যেতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। এর মধ্যে আবার দুবার বাস পরিবর্তন। বাসের ছাদে চেপে সেই আমাদের অ্যাডভেঞ্চারের শুরু। থানচি পৌঁছে দুপুরের খাবার সেরে এবারযেতে হবে রেমাক্রি বাজারের দিকে। বাহন নৌকা। রাতটা কাটবে সেখানেই। দুই পাশে পাহাড় রেখে বয়ে চলেছে অগভীর সাঙ্গু। কাচের মতো পরিষ্কার পানি। ঢাকার ময়লা খাল আর বুড়িগঙ্গার নোংরা পানি দেখে অভ্যস্ত আমাদের চোখে এ এক দারুণ সৌন্দর্য।
তিন্দু বাজার হয়ে রেমাক্রি পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। পাহাড়ের ওপর কয়েকটা কুঁড়েঘর নিয়ে এই রেমাক্রি। এটাই আমাদের ‘বেসক্যাম্প’। পাহাড়ের সে এক আশ্চর্য জীবন। বিদ্যুৎ বলতে সৌর বিদ্যুতে জ্বলা টিমটিমে বাতি।আকাশটা যেন এখানে অনেক নিচে নেমে এসেছে।
পরদিন সকালে নাফাখুম যাত্রা। পথের বর্ণনা তো আগেই দিয়েছি। সাড়ে তিন ঘণ্টার যাত্রা শেষে আমরা এখন নাফাখুমের সামনে। তার সৌন্দর্যের বর্ণনা দেওয়ার শক্তি আমার কলমে নেই। তাই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ক্যামেরা নিয়ে। পানির গর্জনে কান পাতা দায়। বরফকুচির মতো পানি পড়ছে। নিচে নেমে গেছে বহুদূর। আর দেরি না করে আমরা নেমে পড়লাম পানিতে। এখানেই কাটিয়ে দেওয়া যায় না বাকি জীবনটা!
পরদিন আমাদের লক্ষ্য লাইখ্যানঝিরি ঝরনা। রেমাক্রি বাজার থেকে প্রথমে নৌকায় ৩০ মিনিটের পথ। তারপর হাঁটা।সেই পথ আবার গিয়েছে ঝরনার পানির ওপর দিয়ে। বারদুয়েক তাই পিছলে পড়লও কেউ কেউ। এ জায়গায় বর্ষাকালে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ পথটা থাকে পানির নিচে। টানা প্রায় আড়াই ঘণ্টা হাঁটার পর লাইখ্যানঝিরি ঝরনার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দারুণ ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল—দুই দিনে এমন দুটো জায়গার দেখা পেলাম। ছোট-বড় হাজারো পাথরের টুকরা ছড়ানো আশপাশে। অনেক উঁচু থেকে নামছে পানির ধারা। প্রায় এক ঘণ্টা ঝরনায় লাফঝাঁপ শেষে ফেরার পথে দেখতে পেলাম ছোট আরও একটি ঝরনা। নাম জানা নেই তার, বোধ হয় মূল ঝরনারই অংশ।
সেখান থেকে ফেরা আমাদের বেসক্যাম্পে। তল্পিতল্পা গুটিয়ে এবার চললাম ফেরার পথে।
হাঁটুপানি। কোথাও দুই পাশে নাম না-জানা গাছের সারি। আবার কখনো পাহাড়ের গা ঘেঁষে সরু পিচ্ছিল পথ। আচমকা বিপদের হাতছানি সব সময়।সে জন্যই বোধ হয় এত আকর্ষণ তার। আফসোস একটাই, আমাদের লাইফলাইন বলতে তেমন কিছুই নেই। আমরা যেন একেকজন ইন্ডিয়ানা জোনস। বলছি নাফাখুম আর লাইখ্যানঝিরি অভিযানের কথা।
কীভাবে যাবেন
দিন তিনেক সময় হাতে নিয়ে রওনা হওয়া ভালো।
ঢাকা থেকে বাসে যেতে পারেন বান্দরবান। এরপর বাস বা চান্দের গাড়িতে থানচি বাজার। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে রেমাক্রি বাজার। আসা-যাওয়ার নৌকা ভাড়া নিতে খরচ পড়বে চার হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তবে দরাদরি করে নিতে হবে।রেমাক্রি বাজারে থাকতে জনপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা লাগবে। পরদিন প্রায় চার ঘণ্টা হেঁটে যেতে পারেন নাফাখুম। এ জন্য গাইড ভাড়া করতে হবে। রেমাক্রি বাজার থেকে লাইখ্যানঝিরি নৌকা ভাড়া করে যেতে পারেন। খরচ এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। তারপর হাঁটাপথে ঝরনা পর্যন্ত যেতে আড়াই ঘণ্টা লাগবে।
 
No comments:
Post a Comment