Sunday, July 20, 2014

সবুজ বনের ছায়ায়

বীরভূম জেলার পর্যটন মানচিত্রে নতুন নাম শ্রীনিকেতন-বোলপুর ব্লকের রসুলপুর গ্রাম। তবে বাস্তবে ওই নামটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। গ্রামটিকে এখন সবাই ‘সবুজ বন’ বলেই চেনেন। বীরভূমে পর্যটন কেন্দ্র বলতে শান্তিনিকেতন আর বাদবাকি ধর্মীয় স্থান। কিন্তু সবুজ বন মূলত হরেক গাছের সংগ্রহশালা। গাছ দিয়ে সাজানো ৮৫ বিঘা জায়গা ও ১৫ বিঘা জলাশয় প্রকৃতি-প্রেমিকদের কাছে অসাধারণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
শহরের কোলাহল ও শব্দদূষণ থেকে মুক্তি পেতে সবুজ বনে দুচোখ ভরে সবুজ দেখতে ও প্রাণ ভরে অক্সিজেন নিতে প্রতি সপ্তাহের শেষে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। গাছেপ্রমী গবেষকরাও প্রায়ই এখানে আসেন। দেশীয় গাছ ছাড়াও দেখা যায় ব্রাজিলের ল্যাটিনিয়া লুব্রা, আফ্রিকার ৩৭ প্রজাতির সাইক্যাস, মেক্সিকোর নলিনাস, ২৭৪টি প্রজাতির পামগাছ আর প্রচুর অ্যাডেলিয়াম গাছ। সবুজ বনের মালিক আব্দুস সেলিম জানিয়েছেন, দেশ বিদেশের ৪২০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে সেখানে। গাছগুলির বিন্যাসও শিল্পসম্মত। ১৭ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে নানা গাছের সমারোহ। তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম নদী। বাশের সাকো দিয়ে সেই নদী পারাপার আনন্দ দেয়। রয়েছে বোটও। বারো মাসই এখানে কোকিলের ডাক শোনা যায়। তালগাছে বাবুই পাখির বাসা এখন দুর্লভ হলেও সবুজ বনে ঝাঁকে ঝাঁকে তাদের দেখা মেলে। নদীতে চড়ছে রাজহাঁসের দল। ইতস্তত চড়ে বেড়াচ্ছে বেপরোয়া কাঠবেড়ালি, বেজি বা নেউল। বনের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় দেশি কুকুর।
কটেজের সামনে একফালি সবুজ ঘাসের গালিচা। তার ওপরে খালি পায়ে হাঁটতে হাটতে মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার ফেলে
আসা দিনগুলি। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মাঝে মাঝেই সুদৃশ্য ছাউনি আছে। রাতে টিমটিমে বিদ্যুতের আলোয় পুকুরের ওপর বাশের মাচায় বসে আড্ডা মারা ও রাতের খাবার খেতে ভালই লাগবে। সবুজ বনের সামনেই অজয় নদ। তার পাড়ে বসেও কেটে যায় অনন্ত সময়। কাছের ইটিণ্ডা ও সুপুর গ্রামে কয়েকশো বছরের প্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরগুলি আকর্ষণীয়। তাদের ইতিহাস জানতে চাইলে অবশ্য শরণাপন্ন হতে হবে বিশেষজ্ঞদের। স্থাপত্যের বিচারে এই ২টি মন্দির বিশেষ উল্লেখযোগ্য। 
যাতায়াত
– কলকাতা থেকে ট্রেনে বোলপুর স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাড়া করতে হবে। বোলপুর স্টেশন থেকে দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। গাড়ি ভাড়া পড়বে ৩০০ টাকার মতো। আগে থেকে ফোন করে গেলে সবুজ বন কর্তৃপক্ষ গাড়ির ব্যবস্থা করেন। বোলপুর থেকেও প্রচুর গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়।
– বাসেও অবশ্য যাওয়া যায়। বোলপুর- পাচশোয়া- ইক্ষুধারা রুটের বাস ধরে রসুলপুর মোড়ে নেমে ৫০০মিটার হাঁটা রাস্তা।
আস্তানা
— এখানে থাকার জন্য রয়েছে মোট ৭টি কটেজ। এর মধ্যে দুটি বাতানুকূল। খড়ের ছাউনি দেওয়া সাধারণ কটেজগুলিতে থাকাও আরামদায়ক।
– বাতানুকূল কটেজের প্রতিটির দৈনিক ভাড়া এক হাজার টাকা। দুটি কটেজে ৪ জন করে থাকা যায়।
– ৫০০ টাকায় কটেজ রয়েছে ২টি। তাতে ৩ জন করে থাকা যায়।
– এখানে সব ধরনের খাবার পাওয়া যায় সুলভ মূল্যে। তবে খাওয়ার ব্যাপারে আগে থেকে জানাতে হবে।
– ৭০০ টাকার ৩টি কটেজের প্রতিটিতে থাকা যায় ৪ জন।
যোগাযোগের ফোন নম্বর: ৯৯৩২৫৮৯২৪৪(মোবাইল), ল্যাণ্ড ফোনের নম্বর : ০৩৪৬৩-৬৪৫০৩৫।
– বিশেষ সতর্কতা: বি এস এন এল মোবাইলের টাওয়ার পাওয়া যায় না।
আশেপাশে
– এক-দেড় কিলোমিটার দূরে ইটিণ্ডা ও সুপুর গ্রামে কয়েকশো বছরের প্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরও দেখে আসা যায়।

No comments:

Post a Comment