কালিম্পংয়ের খ্যাতি বহুকাল ধরে রোমান্টিকতায় আচ্ছন্ন করেছে আপামর
বাঙালিকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে সত্যজিৎ রায়, এমন কী হাল আমলের
গুণিজনেরাও ফিরে ফিরে গেছেন এই শৈলশহরে। আজকের রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে
দাড়িয়ে কেমন আছে আমাদের শৈশব স্মৃতির ভ্রমণ প্রেয়সী? এই লেখায় সেই তালাশের
সুলুক সন্ধান।
‘‘গোর্খাল্যাণ্ড, গোর্খাল্যাণ্ড!’’ পিশ্চমবঙ্গের পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠেছে। আশির দশকের মাঝামাঝি ওঠা ঝড় বুঝি ফিরে এসেছে আবার! পুরনো রাজনৈতিক দলকে মুছে দিয়ে এসেছে নতুন গোষ্ঠী। এ-যাবৎ জনিপ্রয়তার শীর্ষে থাকা নেতা সিংহাসন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন নব্য যুবা জননায়ককে। পৃথক রাজ্যের দাবিতে ফের সরব হয়েছেন স্থানীয় মানুষ। বাংলার শাসকদলের সঙ্গে হামেশাই বাধছে তাদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ। মে মাসের গোড়ায়, যখন ফতোয়া জারি হয়নি, যখন এ বিশ্বাস অটুট ছিল যে, আর যাই হোক, নিরীহ পর্যটকের ওপর কোনও ক্ষোভ নেই আেন্দালনকারীদের, যখন ভ্রমণ সংস্থাগুলোর কাউন্টারে ব্রাত্য হয়ে পড়েনি উত্তরবঙ্গের রূপসী দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, কার্শিয়াং, লাভা, লোলেগাও, রিশপের অগ্রিম বুকিং—তখন, কলকাতার ভ্যাপসা গরমে ঘামতে ঘামতে শিয়ালদহ স্টেশন ছেড়ে রাতের ট্রেনে রওনা দিলাম কালিম্পংয়ের উদ্দেশে।
সাত সকালে নিউ জলপাইগুড়ি জংশনে নেমে অটো ধরে শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস। তার পর সেবক রোড ধরে সুকনার জঙ্গল পেরিয়ে, করোনেশন িব্রজ টপকে তিস্তার হাত ধরে পাকদণ্ডি পথে ঘুরপাক খেতে খেতে তিন ঘন্টায় কালিম্পং। বাস থেকে নামতেই উদ্ভট ঝামেলার মুখোমুখি হতে হল। আমাদের হোটেল মূল শহরের খানিক বাইরে বলে ট্যাক্সি ভাড়া করতে গিয়ে নাকাল হলাম। আজ এখানে হাটবার। আমরা যে রাস্তা ধরে যাব তার বেশ কিছুটা জুড়ে দোকান বসেছে। তাই সেই পথে গাড়ি ঢুকবে না। কোনও গাড়ির চালক যেতে চাইছেন না। লটবহর নিয়ে হা করে দাড়িয়ে ভাবছি ট্রেন থেকে নেমেই ট্রেকিং শুরু করতে হবে কি না। পরিত্রাতা হয়ে এগিয়ে এলেন সোনম দোরজি, তার মারুতি ভ্যানে তুলে পৌছে দিলেন হোটেলে।
আমাদের হোটেল ঘিঞ্জি এলাকা ছেড়ে বেশ ফাকায়। বারান্দায় দাড়িয়ে সামনে তাকালে রাস্তার পরে গভীর খাদ, সেখানে অন্ধকার থমকে আছে। খাদ পেরিয়ে দৃষ্টি আটকে যায় দিগেন্ত খাড়া পাহাড়ের ঢেউয়ে। তাদের কালচে নীল শরীর মোড়া সবুজ আলোয়ানে আর মাথায় মেঘের পাগড়ি বাধা। নিশ্চল সেই তরঙ্গরাজির মাথায় ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘার উজ্জ্বল উপিস্থতি। আকাশের পিশ্চম প্রােন্ত মেঘের দল জটলা পাকাচ্ছে। তবে বর্ষা নামতে এখনও দেরি।
বিকেলে শহর ঘুরতে বেরোলাম। ব্যস্ত শহর কালিম্পংয়ের আষ্টেপৃষ্ঠে বাণিজ্যিক তকমা আটা। ঝা-চকচকে শো-রুম, হোটেল, রেস্তোরা, বাজার, ভ্রমণ সংস্থার ছড়াছড়ি। তবে ফাকফোকরে চোখ রাখলে নজরে পড়ে সাবেকি গ্রাম্য চেহারাটাও। সকালে দেখা হাট এখন ভাঙার মুখে। কী নেই সেখানে!
টাটকা ব্রকোলি, প্লাম, পিচ, সর্ষে শাক, ইয়াকের দুধ জমানো ছুরপি, শুটকি মাছ, শুয়োরের মাংসের আচার আর এ অঞ্চলের বিখ্যাত লঙ্কা ‘ডেল্ল খুরসানি’র পাশে জায়গা করে নিয়েছে রোজের চেনা উচ্ছে-বেগুন-পটল-মুলো। নেপাল সীমান্ত পার হয়ে আসা বিদেশি চপ্পল, ওয়াকম্যান ও সুগিন্ধ থরেথরে সাজানো কাঠের নড়বড়ে চৌকির ওপর। মাত্র আড়াইশো টাকায় হংকংয়ে তৈরি জগিদ্বখ্যাত ব্র্যাণ্ডের জুতো পেয়ে আমার সঙ্গীও লোভ সামলাতে পারলেন না!
রাস্তায় অফিস-ফেরত গাড়ির মিছিল ক্লক টাওয়ার ঘিরে যানজট তৈরি করেছে। নিরুপায় ট্র্যাফিক কনেস্টবল স্থানুবৎ দাড়িয়ে। গাড়ির চালক আর সওয়ারিদের বিরক্ত মুখচোখ, হর্নের প্যা-পো, পথচলতি মানুষের গজগজানি শুনে ফেলে আসা চিরপরিচিত নাগরিক জীবন মনে ভেসে উঠল। ছোটবেলায় শোনা এই শহরের কেক-পেষ্ট্রির সুখ্যাতি পরখ করতে ঢুকলাম বেকারির দোকানে। চকোলেট ক্রিম ঠাসা, চেরি ফলের মুকুট পরা পেল্লায় ক্রিমরোল মিলল মাত্র দশ টাকায়! কলা আর ষ্ট্রবেরির স্বাদওয়ালা খুদে পেষ্ট্রি মুখে দিতেই গলে গেল। উপরি পাওনা, ডেয়ারি কাউন্টারে রাখা কটেজ চিজ-এর সমাহার। আহা, তার স্বর্গীয় স্বাদ-গন্ধ ভোলার নয়! ক্লক টাওয়ার ছাড়িয়ে এক চিলতে পার্কে বসলাম। লোহার রেলিংয়ে বেড় দিয়েছে অচেনা বেগুনি ফুলের লতা। আমার পাশের বেঞ্চে এক উত্তর ভারতীয় পরিবার। দলের দুই দুরন্ত শিশুর দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ হয়ে বড়রা হাক পাড়ছেন। বৃদ্ধেরা ব্যস্ত ধর্মালোচনায়। চেনা রোজনামচার একঘেয়ে ছবি স্থান মাহাত্ম্যেই বুঝি মন্দ লাগল না। খানিক বসে, সোনম দোরজির বাতলানো লাল গলির চিনে রেস্তোরার খোজে চললাম রাতের খাওয়া সারতে।
কালিম্পংয়ের দ্বিতীয় দিন বরাদ্দ স্থানীয় দ্রষ্টব্যের জন্য। সোনমের মারুতি ভ্যানে চেপে আমাদের প্রথম গন্তব্য দেলো পাহাড়। কালিম্পংয়ের সব চেয়ে উচু জায়গায়, ৫৫৯০ ফুট উচুতে এই পাহাড়ের মাথায় আছে ছবির মতো সাজানো উদ্যান। প্রবেশপথে আছে কংক্রিটের জলাধার। বাগানের এক পাশ দিয়ে একেবেকে উঠে গেছে বাধানো রাস্তা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বসার চত্বর, তাদের মাথায় পোক্ত রঙিন ধাতব ছাতা। সবুজ ঘাসে ঢাকা অসমান লনের প্রােন্ত ধুপি আর পাইন গাছের জঙ্গল। মেঘের দল ভেসে এসে হাত বুলিয়ে যায় তাদের পাতায়। কত চেনা অচেনা ফুল-লতা-পাতাবাহারের সংগ্রহ দেলো পাহাড়ে! মরসুমি ফুলের মেলায় ঝাক বেধে উড়ছে প্রজাপতি। মর্নিং গ্লোরির কালচে পাতায় চকচকে লাল-কালো বুটিদার জামা গায়ে একাগ্র লেডিবার্ড। ঝলমলে তুতে রঙা ডানা ঝাপটে ডালে ডালে হুজ্জোতি করছে বি-ইটারের দল। পাহাড়ের মাথায় সুসজ্জিত ট্যুরিস্ট লজ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেত্নর সুস্পষ্ট ছাপ। একটা ছোট কফি শপও আছে। কফিতে চুমুক দিয়ে ভিউ পয়েেন্ট দাড়িয়ে নীচের উপত্যকায় চোখ পড়ল। অনেক দূরে সরু ফিতের মতো বয়ে চলেছে তিস্তার সর্পিল রেখা। হাটতে হাটতে নেমে এলাম বাগানের পেছন দিকে। এখানেও বিশাল ছাতার তলায় গোলাকার বসার জায়গা। তারপর রেলিং ঘেরা প্রান্তসীমা। হঠাৎ এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে শিউরে উঠলাম! পার্কের সীমানার শেষে ঢালু জমি নেমে গেছে। সেখানে ঠাসাঠাসি দাড়িয়ে পাইনের জঙ্গল। সেই ঘন বনের শ্লীলতাহানি করেছে মানুষের লোভ। সামনের এক সারি গাছকে শিখণ্ডীর মতো দাড় করিয়ে তার পেছনে চলেছে নির্বিচার বৃক্ষনিধন। হায় মানুষ! প্রবাদ উল্লেখিত কালিদাসীয় মূর্খামির যে অন্ত নেই!
দেলো পাহাড় থেকে নামার পথে পড়ল বিখ্যাত আবাসিক স্কুল ‘ডক্টর গ্রাহাম্স হোম্স’। স্কটিশ মিশনারি রেভারেণ্ড ডক্টর জন এণ্ডারসন গ্রাহাম ১৯০০ সালে এই স্কুলের পত্তন করেন। তিরপাই পাহাড়ের ওপর রেভারেণ্ড গ্রাহাম এই স্কুল প্রথমে তৈরি করেন অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান শিশুদের জন্য। সঙ্গে এক অনাথাশ্রমও চালু হয়। ক্রমে অন্যান্য সম্প্রদায়ের বাচ্চারাও পড়ার সুযোগ পায় এখানে। হোম্স মোট ৪০০ একর জমির ওপর বিস্তৃত। স্বয়ংসম্পূর্ণ এই বিদ্যানিকেতন যেন আস্ত এক শহর! খেলার মাঠ, বাস্কেটবল কোর্ট, খেত, খামার, ডেয়ারি, বেকারি নিয়ে তার ফাদালো সংসার। স্কুল চত্বরের ভেতরেই এক পাশে চ্যাপেল। স্কুল সীমানার শেষে নেমেছে গভীর খাদ। সেখানে অনেক নীচে বয়ে চলেছে তিস্তা।
উতরাই পথে মিনিট কুড়ি এগোতেই হনুমানজির মন্দির। পাহাড়চূড়ার ওপর বিরাট বজরঙ্গবলীর মূর্তি। ধাপে ধাপে বাগানঘেরা পথ উঠে গেছে মন্দিরে। এই পাহাড়ের বাক পেরোলেই রাস্তার অন্য পাশে বৌদ্ধ গুহা। ফলক পড়ে জানা গেল, অতীত থেকে শুরু করে আজও এই গুহায় তপস্যা করে চলেছেন বহু বৌদ্ধ ভিক্ষু। গুহার বাইরে ছোট পার্ক। তার মাঝখানে বসে বোধিসেত্ত্বর বিশাল মূর্তির মুখে চিরকালের চেনা িস্মত হাসি। সরু রাস্তা দিয়ে গুহার অন্দরে ঢুকে কিন্তু বিজলি বাতির আলোয় সব কিছু বড্ড সাজানো, বড়ই কৃত্রিম মনে হল।
এ বার গল্ফ কোর্স। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এই খেলার সঙ্গে বাঙালির খুব সখ্য নেই। তবে দৃষ্টিনন্দন বলেই খেলার মাঠটা চোখ টানে। গল্ফ কোর্সে ঢোকার মুখে এক সবুজ ফলকের ওপর সাদা অক্ষরে লেখা চার্চিলের উক্তি যার মর্মার্থ হল, ‘‘গল্ফ সেই খেলা যার একমাত্র উদ্দেশ্য হল, অতি অপটু হাতিয়ারের সাহায্যে একটা ছোট বলকে একটা খুদে গর্তের মধ্যে ফেলা।’’ সাহেব হক কথা বলেছেন। এর বাইরে গল্ফ সম্পর্কে অন্তত আমার আর কিছু জানার আগ্রহ নেই!
চড়াই রাস্তায় সেনা ছাউনির পাশে কালিম্পং গোম্ফা। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ মনে শান্তি দেয়। চিরাচরিত তিব্বতি শিল্প রীতির েফ্রেস্কায় মন্যািষ্ট্রর দেওয়াল ও সিলিং মোড়া। এক তলায় প্রার্থনার ঘর। বুদ্ধের বিরাট মূর্তির সামনে সারিবদ্ধ মাখনের প্রদীপ জ্বলছে। ধূপের সুবাস আর প্রাচীন পুথির গন্ধ মিশে আধো আলোকিত প্রশস্ত ঘরে অপার্থিব আবেশ তৈরি করেছে। দোতলার এক পাশে মঠাধ্যক্ষের ঘর আর অন্য পাশে গ্রন্থাগার ও ভাড়ারঘর। তিন তলার ছাদে দাড়িয়ে দেখা যায় সেনাবাহিনীর কসরত করার চওড়া মাঠ। চকমেলানো মঠবাড়ির উঠোনে বাচ্চা লামারা চুঙ্গি খেলছে আর ছেঁড়া মেঘের টুকরো থেকে থেকেই তাদের ঢেকে দিচ্ছে। গোম্ফার রসুইঘরে মাখন-চা পান করে আমরা রওনা দিলাম নার্সারির উদ্দেশে।
কালিম্পংয়ে বেশ কয়েকটা নার্সারি আছে। তার মধ্যে পাইন ভিউয়ের খ্যাতি অনেক দিনের। দর্শনী মাথাপিছু পনেরো টাকা। কর্ণধার মোহন প্রধান বর্ষীয়ান বিনয়ী মানুষ। ভ্রমণার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন বিচিত্র ফুল আর লতার সংগ্রহ। সদর ফটকের পাশে সারি দিয়ে বেটেখাটো চেহারার, আনারসের মতো পাতাওয়ালা গাছ। মিস্টার প্রধান পরিচয় করিয়ে দিলেন— সাকিউলেন্ট প্ল্যান্ট্স। এদের পাতার রস জারিয়েই তৈরি হয় লাতিন আমেরিকার প্রখ্যাত পানীয়, ট্যকিলা। মুচকি হেসে যোগ করলেন, ‘‘তবে ও বিদ্যে আমার জানা নেই বলে আপনাদের মনোরঞ্জন করতে পারলাম না!’’ নার্সারির ক্যাকটাই কালেকশন বিস্ময় জাগায়। এত রকম প্রজাতির গাছ এরা সংগ্রহ করেছেন যে, দেখলে তাক লেগে যায়। অনেক কাকটাইয়ে ফুলও ধরেছে রকমারি। এক একটা ক্যাকটাসের দাম প্রায় হাজারের কাছাকাছি।
নার্সারি-পর্ব সাঙ্গ করে চললাম রবীন্দ্রভবন দেখতে। কিন্তু পৌছে হতাশ হতে হল। যেত্নর অভাবে জীর্ণ হয়ে পড়েছে বাঙালির এই িপ্রয় ভ্রমণস্থান। কবির বাড়িতে এখন ‘চিত্রভানু’ কলাক্ষেত্র খোলা হয়েছে। বন্ধ আছে সেই দফতরও। কপাল খারাপ আমাদের। বাড়ির বাইরেটা দেখেই ক্ষান্ত হতে হল এ যাত্রা। ফিরে চললাম কালিম্পং শহরে, মঙ্গলধাম মন্দির দেখতে। পরনামি গোষ্ঠীর এই মন্দির তৈরি হয়েছে ১০৮তম গুরু মঙ্গলদাসজি মহারাজের পুণ্য স্মৃতিতে। আগাগোড়া গোলাপি রঙের মন্দিরে অধিষ্ঠিত কৃষ্ণের বিগ্রহ। নানা রঙে রাঙানো ভেতরের দেওয়ালে আকা কৃষ্ণলীলার বিভঙ্গ।
সারা দিনের ঘোরাঘুরি সেরে ক্লক টাওয়ারের কাছে গাড়ি থেকে নামলাম বিকেল পাচটায়। ক্লান্ত শরীর টেনে হোটেলের পথ ধরতে যাব, এমন সময় নাকে এল সসেজ ভাজার মোহিনী সুঘ্রাণ। খোজ নিয়ে দেখি ফুটপাথের ওপর ঠেলাগাড়ি নিয়ে নেপালি কিশোর কড়াইয়ের ফুটন্ত তেলে বিঘতখানেক লম্বা সসেজ ভেজে চলেছে একের পর এক। তবে গোটা নয়, খণ্ডাকারে কেটে। হলপ করে বলতে পারি, কলকাতার বিভিন্ন শীতাতপনিয়িন্ত্রত বাজারে বিকোনো ককটেল অথবা ফ্র্যাঙ্কফার্টারের তুলনায় তার স্বাদ অমৃতসমান। এ ছাড়া ভাজা হচ্ছে ফালে। এ জিনিস আগে খেয়েছি সিকিমে তবে সেখানে তার নাম ‘শেফ্যালাক’। ময়দার দুটো লেচির মাঝে কিমার পুর ঠাসা। কিন্তু ময়দায় ময়ান না দেওয়ায় ঠাণ্ডা হলেই শক্ত হয়ে যায় এই খাবার। পেটপুজো সেরে হাটা দিলাম হোটেলের দিকে। আজ তাড়াতাড়ি ঘুমোতে হবে, কারণ কাল সকালে আমরা যাব রেশম-পথের সন্ধানে।
‘‘গোর্খাল্যাণ্ড, গোর্খাল্যাণ্ড!’’ পিশ্চমবঙ্গের পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠেছে। আশির দশকের মাঝামাঝি ওঠা ঝড় বুঝি ফিরে এসেছে আবার! পুরনো রাজনৈতিক দলকে মুছে দিয়ে এসেছে নতুন গোষ্ঠী। এ-যাবৎ জনিপ্রয়তার শীর্ষে থাকা নেতা সিংহাসন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন নব্য যুবা জননায়ককে। পৃথক রাজ্যের দাবিতে ফের সরব হয়েছেন স্থানীয় মানুষ। বাংলার শাসকদলের সঙ্গে হামেশাই বাধছে তাদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ। মে মাসের গোড়ায়, যখন ফতোয়া জারি হয়নি, যখন এ বিশ্বাস অটুট ছিল যে, আর যাই হোক, নিরীহ পর্যটকের ওপর কোনও ক্ষোভ নেই আেন্দালনকারীদের, যখন ভ্রমণ সংস্থাগুলোর কাউন্টারে ব্রাত্য হয়ে পড়েনি উত্তরবঙ্গের রূপসী দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, কার্শিয়াং, লাভা, লোলেগাও, রিশপের অগ্রিম বুকিং—তখন, কলকাতার ভ্যাপসা গরমে ঘামতে ঘামতে শিয়ালদহ স্টেশন ছেড়ে রাতের ট্রেনে রওনা দিলাম কালিম্পংয়ের উদ্দেশে।
সাত সকালে নিউ জলপাইগুড়ি জংশনে নেমে অটো ধরে শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস। তার পর সেবক রোড ধরে সুকনার জঙ্গল পেরিয়ে, করোনেশন িব্রজ টপকে তিস্তার হাত ধরে পাকদণ্ডি পথে ঘুরপাক খেতে খেতে তিন ঘন্টায় কালিম্পং। বাস থেকে নামতেই উদ্ভট ঝামেলার মুখোমুখি হতে হল। আমাদের হোটেল মূল শহরের খানিক বাইরে বলে ট্যাক্সি ভাড়া করতে গিয়ে নাকাল হলাম। আজ এখানে হাটবার। আমরা যে রাস্তা ধরে যাব তার বেশ কিছুটা জুড়ে দোকান বসেছে। তাই সেই পথে গাড়ি ঢুকবে না। কোনও গাড়ির চালক যেতে চাইছেন না। লটবহর নিয়ে হা করে দাড়িয়ে ভাবছি ট্রেন থেকে নেমেই ট্রেকিং শুরু করতে হবে কি না। পরিত্রাতা হয়ে এগিয়ে এলেন সোনম দোরজি, তার মারুতি ভ্যানে তুলে পৌছে দিলেন হোটেলে।
আমাদের হোটেল ঘিঞ্জি এলাকা ছেড়ে বেশ ফাকায়। বারান্দায় দাড়িয়ে সামনে তাকালে রাস্তার পরে গভীর খাদ, সেখানে অন্ধকার থমকে আছে। খাদ পেরিয়ে দৃষ্টি আটকে যায় দিগেন্ত খাড়া পাহাড়ের ঢেউয়ে। তাদের কালচে নীল শরীর মোড়া সবুজ আলোয়ানে আর মাথায় মেঘের পাগড়ি বাধা। নিশ্চল সেই তরঙ্গরাজির মাথায় ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘার উজ্জ্বল উপিস্থতি। আকাশের পিশ্চম প্রােন্ত মেঘের দল জটলা পাকাচ্ছে। তবে বর্ষা নামতে এখনও দেরি।
বিকেলে শহর ঘুরতে বেরোলাম। ব্যস্ত শহর কালিম্পংয়ের আষ্টেপৃষ্ঠে বাণিজ্যিক তকমা আটা। ঝা-চকচকে শো-রুম, হোটেল, রেস্তোরা, বাজার, ভ্রমণ সংস্থার ছড়াছড়ি। তবে ফাকফোকরে চোখ রাখলে নজরে পড়ে সাবেকি গ্রাম্য চেহারাটাও। সকালে দেখা হাট এখন ভাঙার মুখে। কী নেই সেখানে!
টাটকা ব্রকোলি, প্লাম, পিচ, সর্ষে শাক, ইয়াকের দুধ জমানো ছুরপি, শুটকি মাছ, শুয়োরের মাংসের আচার আর এ অঞ্চলের বিখ্যাত লঙ্কা ‘ডেল্ল খুরসানি’র পাশে জায়গা করে নিয়েছে রোজের চেনা উচ্ছে-বেগুন-পটল-মুলো। নেপাল সীমান্ত পার হয়ে আসা বিদেশি চপ্পল, ওয়াকম্যান ও সুগিন্ধ থরেথরে সাজানো কাঠের নড়বড়ে চৌকির ওপর। মাত্র আড়াইশো টাকায় হংকংয়ে তৈরি জগিদ্বখ্যাত ব্র্যাণ্ডের জুতো পেয়ে আমার সঙ্গীও লোভ সামলাতে পারলেন না!
রাস্তায় অফিস-ফেরত গাড়ির মিছিল ক্লক টাওয়ার ঘিরে যানজট তৈরি করেছে। নিরুপায় ট্র্যাফিক কনেস্টবল স্থানুবৎ দাড়িয়ে। গাড়ির চালক আর সওয়ারিদের বিরক্ত মুখচোখ, হর্নের প্যা-পো, পথচলতি মানুষের গজগজানি শুনে ফেলে আসা চিরপরিচিত নাগরিক জীবন মনে ভেসে উঠল। ছোটবেলায় শোনা এই শহরের কেক-পেষ্ট্রির সুখ্যাতি পরখ করতে ঢুকলাম বেকারির দোকানে। চকোলেট ক্রিম ঠাসা, চেরি ফলের মুকুট পরা পেল্লায় ক্রিমরোল মিলল মাত্র দশ টাকায়! কলা আর ষ্ট্রবেরির স্বাদওয়ালা খুদে পেষ্ট্রি মুখে দিতেই গলে গেল। উপরি পাওনা, ডেয়ারি কাউন্টারে রাখা কটেজ চিজ-এর সমাহার। আহা, তার স্বর্গীয় স্বাদ-গন্ধ ভোলার নয়! ক্লক টাওয়ার ছাড়িয়ে এক চিলতে পার্কে বসলাম। লোহার রেলিংয়ে বেড় দিয়েছে অচেনা বেগুনি ফুলের লতা। আমার পাশের বেঞ্চে এক উত্তর ভারতীয় পরিবার। দলের দুই দুরন্ত শিশুর দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ হয়ে বড়রা হাক পাড়ছেন। বৃদ্ধেরা ব্যস্ত ধর্মালোচনায়। চেনা রোজনামচার একঘেয়ে ছবি স্থান মাহাত্ম্যেই বুঝি মন্দ লাগল না। খানিক বসে, সোনম দোরজির বাতলানো লাল গলির চিনে রেস্তোরার খোজে চললাম রাতের খাওয়া সারতে।
কালিম্পংয়ের দ্বিতীয় দিন বরাদ্দ স্থানীয় দ্রষ্টব্যের জন্য। সোনমের মারুতি ভ্যানে চেপে আমাদের প্রথম গন্তব্য দেলো পাহাড়। কালিম্পংয়ের সব চেয়ে উচু জায়গায়, ৫৫৯০ ফুট উচুতে এই পাহাড়ের মাথায় আছে ছবির মতো সাজানো উদ্যান। প্রবেশপথে আছে কংক্রিটের জলাধার। বাগানের এক পাশ দিয়ে একেবেকে উঠে গেছে বাধানো রাস্তা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বসার চত্বর, তাদের মাথায় পোক্ত রঙিন ধাতব ছাতা। সবুজ ঘাসে ঢাকা অসমান লনের প্রােন্ত ধুপি আর পাইন গাছের জঙ্গল। মেঘের দল ভেসে এসে হাত বুলিয়ে যায় তাদের পাতায়। কত চেনা অচেনা ফুল-লতা-পাতাবাহারের সংগ্রহ দেলো পাহাড়ে! মরসুমি ফুলের মেলায় ঝাক বেধে উড়ছে প্রজাপতি। মর্নিং গ্লোরির কালচে পাতায় চকচকে লাল-কালো বুটিদার জামা গায়ে একাগ্র লেডিবার্ড। ঝলমলে তুতে রঙা ডানা ঝাপটে ডালে ডালে হুজ্জোতি করছে বি-ইটারের দল। পাহাড়ের মাথায় সুসজ্জিত ট্যুরিস্ট লজ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেত্নর সুস্পষ্ট ছাপ। একটা ছোট কফি শপও আছে। কফিতে চুমুক দিয়ে ভিউ পয়েেন্ট দাড়িয়ে নীচের উপত্যকায় চোখ পড়ল। অনেক দূরে সরু ফিতের মতো বয়ে চলেছে তিস্তার সর্পিল রেখা। হাটতে হাটতে নেমে এলাম বাগানের পেছন দিকে। এখানেও বিশাল ছাতার তলায় গোলাকার বসার জায়গা। তারপর রেলিং ঘেরা প্রান্তসীমা। হঠাৎ এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে শিউরে উঠলাম! পার্কের সীমানার শেষে ঢালু জমি নেমে গেছে। সেখানে ঠাসাঠাসি দাড়িয়ে পাইনের জঙ্গল। সেই ঘন বনের শ্লীলতাহানি করেছে মানুষের লোভ। সামনের এক সারি গাছকে শিখণ্ডীর মতো দাড় করিয়ে তার পেছনে চলেছে নির্বিচার বৃক্ষনিধন। হায় মানুষ! প্রবাদ উল্লেখিত কালিদাসীয় মূর্খামির যে অন্ত নেই!
দেলো পাহাড় থেকে নামার পথে পড়ল বিখ্যাত আবাসিক স্কুল ‘ডক্টর গ্রাহাম্স হোম্স’। স্কটিশ মিশনারি রেভারেণ্ড ডক্টর জন এণ্ডারসন গ্রাহাম ১৯০০ সালে এই স্কুলের পত্তন করেন। তিরপাই পাহাড়ের ওপর রেভারেণ্ড গ্রাহাম এই স্কুল প্রথমে তৈরি করেন অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান শিশুদের জন্য। সঙ্গে এক অনাথাশ্রমও চালু হয়। ক্রমে অন্যান্য সম্প্রদায়ের বাচ্চারাও পড়ার সুযোগ পায় এখানে। হোম্স মোট ৪০০ একর জমির ওপর বিস্তৃত। স্বয়ংসম্পূর্ণ এই বিদ্যানিকেতন যেন আস্ত এক শহর! খেলার মাঠ, বাস্কেটবল কোর্ট, খেত, খামার, ডেয়ারি, বেকারি নিয়ে তার ফাদালো সংসার। স্কুল চত্বরের ভেতরেই এক পাশে চ্যাপেল। স্কুল সীমানার শেষে নেমেছে গভীর খাদ। সেখানে অনেক নীচে বয়ে চলেছে তিস্তা।
উতরাই পথে মিনিট কুড়ি এগোতেই হনুমানজির মন্দির। পাহাড়চূড়ার ওপর বিরাট বজরঙ্গবলীর মূর্তি। ধাপে ধাপে বাগানঘেরা পথ উঠে গেছে মন্দিরে। এই পাহাড়ের বাক পেরোলেই রাস্তার অন্য পাশে বৌদ্ধ গুহা। ফলক পড়ে জানা গেল, অতীত থেকে শুরু করে আজও এই গুহায় তপস্যা করে চলেছেন বহু বৌদ্ধ ভিক্ষু। গুহার বাইরে ছোট পার্ক। তার মাঝখানে বসে বোধিসেত্ত্বর বিশাল মূর্তির মুখে চিরকালের চেনা িস্মত হাসি। সরু রাস্তা দিয়ে গুহার অন্দরে ঢুকে কিন্তু বিজলি বাতির আলোয় সব কিছু বড্ড সাজানো, বড়ই কৃত্রিম মনে হল।
এ বার গল্ফ কোর্স। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এই খেলার সঙ্গে বাঙালির খুব সখ্য নেই। তবে দৃষ্টিনন্দন বলেই খেলার মাঠটা চোখ টানে। গল্ফ কোর্সে ঢোকার মুখে এক সবুজ ফলকের ওপর সাদা অক্ষরে লেখা চার্চিলের উক্তি যার মর্মার্থ হল, ‘‘গল্ফ সেই খেলা যার একমাত্র উদ্দেশ্য হল, অতি অপটু হাতিয়ারের সাহায্যে একটা ছোট বলকে একটা খুদে গর্তের মধ্যে ফেলা।’’ সাহেব হক কথা বলেছেন। এর বাইরে গল্ফ সম্পর্কে অন্তত আমার আর কিছু জানার আগ্রহ নেই!
চড়াই রাস্তায় সেনা ছাউনির পাশে কালিম্পং গোম্ফা। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ মনে শান্তি দেয়। চিরাচরিত তিব্বতি শিল্প রীতির েফ্রেস্কায় মন্যািষ্ট্রর দেওয়াল ও সিলিং মোড়া। এক তলায় প্রার্থনার ঘর। বুদ্ধের বিরাট মূর্তির সামনে সারিবদ্ধ মাখনের প্রদীপ জ্বলছে। ধূপের সুবাস আর প্রাচীন পুথির গন্ধ মিশে আধো আলোকিত প্রশস্ত ঘরে অপার্থিব আবেশ তৈরি করেছে। দোতলার এক পাশে মঠাধ্যক্ষের ঘর আর অন্য পাশে গ্রন্থাগার ও ভাড়ারঘর। তিন তলার ছাদে দাড়িয়ে দেখা যায় সেনাবাহিনীর কসরত করার চওড়া মাঠ। চকমেলানো মঠবাড়ির উঠোনে বাচ্চা লামারা চুঙ্গি খেলছে আর ছেঁড়া মেঘের টুকরো থেকে থেকেই তাদের ঢেকে দিচ্ছে। গোম্ফার রসুইঘরে মাখন-চা পান করে আমরা রওনা দিলাম নার্সারির উদ্দেশে।
কালিম্পংয়ে বেশ কয়েকটা নার্সারি আছে। তার মধ্যে পাইন ভিউয়ের খ্যাতি অনেক দিনের। দর্শনী মাথাপিছু পনেরো টাকা। কর্ণধার মোহন প্রধান বর্ষীয়ান বিনয়ী মানুষ। ভ্রমণার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন বিচিত্র ফুল আর লতার সংগ্রহ। সদর ফটকের পাশে সারি দিয়ে বেটেখাটো চেহারার, আনারসের মতো পাতাওয়ালা গাছ। মিস্টার প্রধান পরিচয় করিয়ে দিলেন— সাকিউলেন্ট প্ল্যান্ট্স। এদের পাতার রস জারিয়েই তৈরি হয় লাতিন আমেরিকার প্রখ্যাত পানীয়, ট্যকিলা। মুচকি হেসে যোগ করলেন, ‘‘তবে ও বিদ্যে আমার জানা নেই বলে আপনাদের মনোরঞ্জন করতে পারলাম না!’’ নার্সারির ক্যাকটাই কালেকশন বিস্ময় জাগায়। এত রকম প্রজাতির গাছ এরা সংগ্রহ করেছেন যে, দেখলে তাক লেগে যায়। অনেক কাকটাইয়ে ফুলও ধরেছে রকমারি। এক একটা ক্যাকটাসের দাম প্রায় হাজারের কাছাকাছি।
নার্সারি-পর্ব সাঙ্গ করে চললাম রবীন্দ্রভবন দেখতে। কিন্তু পৌছে হতাশ হতে হল। যেত্নর অভাবে জীর্ণ হয়ে পড়েছে বাঙালির এই িপ্রয় ভ্রমণস্থান। কবির বাড়িতে এখন ‘চিত্রভানু’ কলাক্ষেত্র খোলা হয়েছে। বন্ধ আছে সেই দফতরও। কপাল খারাপ আমাদের। বাড়ির বাইরেটা দেখেই ক্ষান্ত হতে হল এ যাত্রা। ফিরে চললাম কালিম্পং শহরে, মঙ্গলধাম মন্দির দেখতে। পরনামি গোষ্ঠীর এই মন্দির তৈরি হয়েছে ১০৮তম গুরু মঙ্গলদাসজি মহারাজের পুণ্য স্মৃতিতে। আগাগোড়া গোলাপি রঙের মন্দিরে অধিষ্ঠিত কৃষ্ণের বিগ্রহ। নানা রঙে রাঙানো ভেতরের দেওয়ালে আকা কৃষ্ণলীলার বিভঙ্গ।
সারা দিনের ঘোরাঘুরি সেরে ক্লক টাওয়ারের কাছে গাড়ি থেকে নামলাম বিকেল পাচটায়। ক্লান্ত শরীর টেনে হোটেলের পথ ধরতে যাব, এমন সময় নাকে এল সসেজ ভাজার মোহিনী সুঘ্রাণ। খোজ নিয়ে দেখি ফুটপাথের ওপর ঠেলাগাড়ি নিয়ে নেপালি কিশোর কড়াইয়ের ফুটন্ত তেলে বিঘতখানেক লম্বা সসেজ ভেজে চলেছে একের পর এক। তবে গোটা নয়, খণ্ডাকারে কেটে। হলপ করে বলতে পারি, কলকাতার বিভিন্ন শীতাতপনিয়িন্ত্রত বাজারে বিকোনো ককটেল অথবা ফ্র্যাঙ্কফার্টারের তুলনায় তার স্বাদ অমৃতসমান। এ ছাড়া ভাজা হচ্ছে ফালে। এ জিনিস আগে খেয়েছি সিকিমে তবে সেখানে তার নাম ‘শেফ্যালাক’। ময়দার দুটো লেচির মাঝে কিমার পুর ঠাসা। কিন্তু ময়দায় ময়ান না দেওয়ায় ঠাণ্ডা হলেই শক্ত হয়ে যায় এই খাবার। পেটপুজো সেরে হাটা দিলাম হোটেলের দিকে। আজ তাড়াতাড়ি ঘুমোতে হবে, কারণ কাল সকালে আমরা যাব রেশম-পথের সন্ধানে।
No comments:
Post a Comment