পুঠিয়ার শিবমন্দির। সারা দেশে শীত তখন জেঁকে বসেছে। এর মধ্যে বেড়াতে এসেছি
নাটোর। ভোর পাঁচটায় হোটেলে নেমে মনে হলো, ঠান্ডায় শরীর জমে গেছে। কোনো রকমে
ঘরে গিয়ে ঢুকলাম কম্বলের নিচে। ঘুম ভাঙল দুপুর ১২টায়। বারান্দায় গিয়ে দেখি
তখনো চারপাশ কুয়াশার চাদরে মোড়া। ঘনঘোর কুয়াশা যাকে বলে! আস্তেধীরে তৈরি
হয়ে বের হলাম। কোথায় যাব করতে করতে ফারুকের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চড়ে
বসি। এখানে এলেই ফারুকের খোঁজ নিই। আজ আমরা চলেছি পুঠিয়া রাজবাড়িতে।
পথের দুই ধারে আখখেত। একটু পর পর আখবোঝাই গাড়ি। পথ চলছি, ছবি তুলছি। আখখেতে আখের মাথায় চোখে পড়ল সাদা ফুল। অনেকেই হয়তো আগে দেখেছেন। তবে আমার চোখে এই প্রথম।
আখখেতে দেখি দুই শিশু মহা আনন্দে আখ চিবোচ্ছে। আখফুলের ছবি তুলতে চাইলে যৌথ আবদার—‘আগে আমাগো ছবি তুইলা দেন।’ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে গেল তারা ক্যামেরার সামনে।
কথা হয় খেতের মালিক সলিম মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানালেন, এই আখ চলে যায় চিনিকলে। এ থেকে চিনি তৈরি হয়, তৈরি হয় গুড়।
সেখান থেকে বেরিয়ে আবার যাত্রা শুরু। গন্তব্য পুঠিয়া রাজবাড়ি।
নাটোর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রাজশাহীর পুঠিয়ায় এই রাজবাড়ির অবস্থান। যাত্রাপথটা চমৎকার পিচঢালা। দুই পাশে আখখেত, সরিষাখেত। এই শীতকালেও দেখা হয়ে গেল বিবর্ণ কিছু কাশফুলের সঙ্গে।
আধা ঘণ্টার মধ্যে ফাঁকা রাস্তা, খেত আর ছোট ছোট গঞ্জ পেরিয়ে পুঠিয়া বাজারে পৌঁছাই। এখান থেকেই শুরু পুঠিয়া রাজবাড়ির পথ। এই পথে প্রবেশের পরপরই পুকুরের পাশে শিবমন্দিরটির অবস্থান। চমৎকার কারুকার্যময় পুকুরঘাট পেছনে ফেলে দাঁড়িয়ে মন্দিরটি। মন্দিরের কক্ষ একটি, সেই কক্ষে রয়েছে শিবলিঙ্গটি। কিন্তু তাতে দেখি তালা দেওয়া। মন্দিররক্ষক বিশ্বনাথ দাসের বাড়ি দেখিয়ে একজন বললেন, ‘আপনি ডাকলেই তিনি চলে আসবেন।’ সত্যি তা-ই হলো, বিশ্বনাথ বাবু এসে মন্দিরের কক্ষটি খুলে আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন। এখানে আমরা নকশাখচিত শিবলিঙ্গ দেখলাম, আর ঘুরে দেখলাম পুরো মন্দির এলাকা। ৬৫ ফুট দীর্ঘ বেদির ওপর শিবমন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের দুই দিক দিয়েই সিঁড়ি আছে। চারদিকে বিশাল বারান্দা। বারান্দার দেয়ালের গায়ে হিন্দু পুরাণের নানা চিত্র। এর অনেক অংশ ভেঙে গেছে। তবে এখনো এখানে শিবপূজা হয় প্রতিবছর; দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ ছুটে আসে। চমৎকার গম্বুজশোভিত শিবমন্দির দর্শন শেষে বিশ্বনাথ বাবুকে বিদায় জানিয়ে হেঁটে পুঠিয়া রাজবাড়ি চলে আসি।
আমাদের সামনে এখন পুঠিয়া রাজবাড়ির বিশাল মাঠ, রাজবাড়ি আর তার পেছনে দোলমঞ্চ। পিরামিড আকৃতির দোলমঞ্চটি চমৎকার। আমরা দোলমঞ্চ ঘুরে দেখে রাজবাড়ির দিকে যাই। রাজবাড়ির মাঠে এলাকার ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে; গরু চরতেও দেখা গেল। এক পাশে বিয়েবাড়ির প্যান্ডেল করা, বরযাত্রী এসেছে। ১৯৭৩ সালে এই বিশাল রাজবাড়িটিতে পুঠিয়া ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা লস্করপুর ডিগ্রি বিদ্যানিকেতন নামে পরিচিত। ডিগ্রি কলেজের সাইনবোর্ডটি এখন আর নেই। রাজবাড়িটির সংস্কারকাজ চালানো হয়েছে, গায়ের নতুন রং দেখেই তা বোঝা যায়। ইট আর সুরকির তৈরি রাজবাড়িটি ঘুরে দেখি। চমৎকার দোতলা বাড়িটির সুন্দর কারুকার্যময় কাঠের দরজা-জানালা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
বিশাল পুঠিয়া রাজবাড়ি চত্বর। এখানে রয়েছে চারদিকে পরিখাবেষ্টিত পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দির, জগদ্ধাত্রী মন্দির, কালীমন্দির ও গোপাল মন্দির। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ভান্ডার এই পুঠিয়া রাজবাড়িটি দেখলেই বোঝা যায়, চরম অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে। পুঠিয়া রাজবাড়িতে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের কৌতূহল মেটাতে নেই কোনো গাইডের ব্যবস্থা বা কোনো তথ্যকেন্দ্র। তবে এত সব সমস্যা থাকলেও মন ভরে যাবে এখানে এলে। একা একাই কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যান না ইতিহাস আর ঐতিহ্যের জগতে।
পথের দুই ধারে আখখেত। একটু পর পর আখবোঝাই গাড়ি। পথ চলছি, ছবি তুলছি। আখখেতে আখের মাথায় চোখে পড়ল সাদা ফুল। অনেকেই হয়তো আগে দেখেছেন। তবে আমার চোখে এই প্রথম।
আখখেতে দেখি দুই শিশু মহা আনন্দে আখ চিবোচ্ছে। আখফুলের ছবি তুলতে চাইলে যৌথ আবদার—‘আগে আমাগো ছবি তুইলা দেন।’ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে গেল তারা ক্যামেরার সামনে।
কথা হয় খেতের মালিক সলিম মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানালেন, এই আখ চলে যায় চিনিকলে। এ থেকে চিনি তৈরি হয়, তৈরি হয় গুড়।
সেখান থেকে বেরিয়ে আবার যাত্রা শুরু। গন্তব্য পুঠিয়া রাজবাড়ি।
নাটোর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রাজশাহীর পুঠিয়ায় এই রাজবাড়ির অবস্থান। যাত্রাপথটা চমৎকার পিচঢালা। দুই পাশে আখখেত, সরিষাখেত। এই শীতকালেও দেখা হয়ে গেল বিবর্ণ কিছু কাশফুলের সঙ্গে।
আধা ঘণ্টার মধ্যে ফাঁকা রাস্তা, খেত আর ছোট ছোট গঞ্জ পেরিয়ে পুঠিয়া বাজারে পৌঁছাই। এখান থেকেই শুরু পুঠিয়া রাজবাড়ির পথ। এই পথে প্রবেশের পরপরই পুকুরের পাশে শিবমন্দিরটির অবস্থান। চমৎকার কারুকার্যময় পুকুরঘাট পেছনে ফেলে দাঁড়িয়ে মন্দিরটি। মন্দিরের কক্ষ একটি, সেই কক্ষে রয়েছে শিবলিঙ্গটি। কিন্তু তাতে দেখি তালা দেওয়া। মন্দিররক্ষক বিশ্বনাথ দাসের বাড়ি দেখিয়ে একজন বললেন, ‘আপনি ডাকলেই তিনি চলে আসবেন।’ সত্যি তা-ই হলো, বিশ্বনাথ বাবু এসে মন্দিরের কক্ষটি খুলে আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন। এখানে আমরা নকশাখচিত শিবলিঙ্গ দেখলাম, আর ঘুরে দেখলাম পুরো মন্দির এলাকা। ৬৫ ফুট দীর্ঘ বেদির ওপর শিবমন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের দুই দিক দিয়েই সিঁড়ি আছে। চারদিকে বিশাল বারান্দা। বারান্দার দেয়ালের গায়ে হিন্দু পুরাণের নানা চিত্র। এর অনেক অংশ ভেঙে গেছে। তবে এখনো এখানে শিবপূজা হয় প্রতিবছর; দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ ছুটে আসে। চমৎকার গম্বুজশোভিত শিবমন্দির দর্শন শেষে বিশ্বনাথ বাবুকে বিদায় জানিয়ে হেঁটে পুঠিয়া রাজবাড়ি চলে আসি।
আমাদের সামনে এখন পুঠিয়া রাজবাড়ির বিশাল মাঠ, রাজবাড়ি আর তার পেছনে দোলমঞ্চ। পিরামিড আকৃতির দোলমঞ্চটি চমৎকার। আমরা দোলমঞ্চ ঘুরে দেখে রাজবাড়ির দিকে যাই। রাজবাড়ির মাঠে এলাকার ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে; গরু চরতেও দেখা গেল। এক পাশে বিয়েবাড়ির প্যান্ডেল করা, বরযাত্রী এসেছে। ১৯৭৩ সালে এই বিশাল রাজবাড়িটিতে পুঠিয়া ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা লস্করপুর ডিগ্রি বিদ্যানিকেতন নামে পরিচিত। ডিগ্রি কলেজের সাইনবোর্ডটি এখন আর নেই। রাজবাড়িটির সংস্কারকাজ চালানো হয়েছে, গায়ের নতুন রং দেখেই তা বোঝা যায়। ইট আর সুরকির তৈরি রাজবাড়িটি ঘুরে দেখি। চমৎকার দোতলা বাড়িটির সুন্দর কারুকার্যময় কাঠের দরজা-জানালা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
বিশাল পুঠিয়া রাজবাড়ি চত্বর। এখানে রয়েছে চারদিকে পরিখাবেষ্টিত পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দির, জগদ্ধাত্রী মন্দির, কালীমন্দির ও গোপাল মন্দির। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ভান্ডার এই পুঠিয়া রাজবাড়িটি দেখলেই বোঝা যায়, চরম অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে। পুঠিয়া রাজবাড়িতে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের কৌতূহল মেটাতে নেই কোনো গাইডের ব্যবস্থা বা কোনো তথ্যকেন্দ্র। তবে এত সব সমস্যা থাকলেও মন ভরে যাবে এখানে এলে। একা একাই কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যান না ইতিহাস আর ঐতিহ্যের জগতে।
No comments:
Post a Comment