Tuesday, July 22, 2014

নীলবসনা দেবীর গড়

অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি চিল্কিগড়ের সামন্ত রাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে তার তিন রানির হাতের কঙ্কন দিয়ে তৈরি করেন দেবী কনকদুর্গার মূর্তি। দেবী চতুর্ভুজা, অশ্ববাহিনী। দেবীর ওপরের বাম হাতে খর্পর, নীচের বামহাতে অশ্বের লাগাম। উপরের দক্ষিণ হেস্ত খড়্গ, নীচের দক্ষিণ হেস্ত বরাভয়। সালঙ্কারা দেবীর অঙ্গে নীলবস্ত্র।

আশ্বিন মাসের শুক্লা সপ্তমীতে চিল্কিগড়ের জঙ্গলে কনকদুর্গার মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। রাজা গোপীনাথ ও তার পাটরানি গোবিন্দমণির কন্যা সুবর্ণমণির বিয়ে হয় ধলভূম পরগনার সপ্তম জগন্নাথ দেও ধবলদেবের সঙ্গে। পরে সপ্তম জগন্নাথ দেও ধবলদেব ও সুবর্ণমণির জ্যেষ্ঠ পুত্র কমলাকান্ত দেও ধবলদেব চিল্কিগড়ের রাজা হন। তার পর থেকে বংশানুক্রমে ধবলদেব বংশের উত্তরসূরিরা মন্দিরের সেবার দায়িত্ব পান। দেবীর প্রতিষ্ঠাতা রাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ ওড়িশা থেকে রামচন্দ্র ষড়ঙ্গী নামে এক ব্রাহ্মণকে দেবী পূজার দায়িত্ব দেন। অদ্যাবধি রামচন্দ্র ষড়ঙ্গীর বংশধরেরা মন্দিরের পূজারীর দায়িেত্ব আছেন। তবে, ১৯৬০ সালে কনকদুর্গার সোনার মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়। এর পর তিন দশকেরও বেশি সময় মূর্তিহীন মন্দিরেই দেবীর পুজো হতে থাকে। রাজ বংশের উত্তরসূরিদের
উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে অষ্টধাতুর কনকদুর্গার একটি মূর্তি (রেিপ্লকা) মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই মূর্তিতেই এখন পুজো চলছে।
কনকদুর্গার মন্দিরের চারপাশে ৬৪ একর এলাকা জুড়ে শ্যামল অরণ্যানী সত্যিই মনোরম। রয়েছে বহু পুরনো শাল, মহুল, কেঁদ, বট, অশ্বত্থ, ঁসিদুর, রুদ্রাক্ষ, আমলকি, হরতুকি, বহেড়া, চালতা, হাড়ভাঙা গাছ। আছে ১০৮ রকমের দুষ্প্রাপ্য ভেষজ গাছ-গাছড়ার সমারোহ। মন্দিরের ধারে ছোট ডুলুং নদীর জল একেবেকে সাপের ফনার মতো ফুসে চলেছে।
যাতায়াত
মূলত ঝাড়গ্রাম থেকেই চিল্কিগড় যাওয়া ভাল। ঝাড়গ্রাম থেকে চিল্কিগড়ের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার।
– ঝাড়গ্রাম থেকে রুটের অনেক ট্রেকার চিল্কিগড় যায়। জনপ্রতি ভাড়া আট টাকা।
– ঝাড়গ্রাম থেকে ভাড়ার গাড়ি বুক করে চিল্কিগড় বেড়ানোর খরচ ৪০০ টাকা।
আস্তানা
– চিল্কিগড় রাজবাড়ির কাছেই থাকার জায়গা
যোগাযোগ: বিজয়েশ চন্দ্র ধবলদেব, মোবাইল: ৯৪৭৪৪৪৫৯৯৬ অথবা ৯৭৩৫৭৯৩৪৫০
এখানে কোনও ঘরেই অ্যাটাচড্‌ বাথরুম নেই। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা একসঙ্গে। জনপ্রতি খরচ দৈনিক ২৫০ টাকা।
দৃষ্টি আকর্ষণ
ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৪২ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিশদ তথ্য সম্বলিত সচিত্র পর্যটন সহায়িকা ‘অরণ্যের আহ্বান’
নামে একটি বই আছে। এটির প্রকাশক ঝাড়গ্রাম পুরসভা। ঝাড়গ্রাম পর্যটন অনুসন্ধান কেেন্দ্র বইটি পাওয়া যায়।
আগ্রহী পর্যটকরা ডাকযোগেও বইটি সংগ্রহ করতে পারেন।
যোগাযোগ:
প্রদীপ কুমার সরকার, পুরপ্রধান, ঝাড়গ্রাম পৌরসভা,
পো: ঝাড়গ্রাম, জেলা: পশ্চিম মেদিনীপুর, পিন: ৭২১৫০৭
ফোন: ০৩২২১-২৫৫০৯৮ মোবাইল: ৯৪৩৪৩২০৪৭২

No comments:

Post a Comment