যাদুকাটা নদীর শান্ত জলে কিসের যেন মায়া। এই শান্ত নদীর উৎস কোথায়? দূরে
তাকালেই চোখে পড়ে পাহাড়। একটি-দুটি নয়, চারটি। উঁচু, সবুজে মোড়া। মাথার ওপর
সাদা-ধূসর মেঘেরা ওড়াউড়ি করছে। কখনো দলছুট হয়ে একদল গড়াগড়ি খাচ্ছে সেই
সবুজের ওপর। বৃষ্টি হচ্ছে। জলে ধুয়েমুছে পাহাড় যেন আরও সজীব-সতেজ হয়ে উঠছে।
দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে নেমে এসেছে নদী। নাম যাদুকাটা। নদীর গভীরতা কম। যাদুকাটার স্বচ্ছ জলে নিচের বালুকণা পর্যন্ত দেখা যায়। নৌকা নিয়ে বালু তোলায় ব্যস্ত শ শ মানুষ। ছোট ছোট নৌকা ঢেউ তুলে ছুটছে এদিক-সেদিক। নদীর এক পাশে বিস্তীর্ণ বালুচর, অন্য পাশে সবুজ পাহাড়ের হাতছানি।
একদা এই যাদুকাটা নদীতীরেই ছিল প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী। এখন রাজ্য নেই, নেই রাজধানীও। তবে যাদুকাটা নদীর উৎসমুখ, নদীর চারপাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবশ্যই মুগ্ধ হওয়ার মতো। এলাকার নামের সঙ্গে রাজ্যের নামটিও জড়িয়ে আছে, ‘লাউরেরগড়’।
যাদুকাটা নদী দেখতে যাব। সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। বাস-টাসের রাস্তা নেই। যেতে হবে ভাড়া করা বাহনে অথবা নিজের মোটরবাইকে। আগের রাতেই সব ঠিকঠাক হয়েছে। সকাল নয়টায় রওনা হব। চারজন যাব দুই মোটরবাইকে। বাকি তিনজন হলেন সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার গিয়াস, ডিউক আর জুয়েল। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের মোল্লা রেস্টুরেন্টে নাশতা সেরে আমরা প্রথমে যাই সুরমা নদীর সাহেববাড়ির ঘাটে। সেখান থেকে মোটরবাইক নিয়ে উঠি নৌকায়। আধঘণ্টা পর পৌঁছাই মণিপুরি ঘাটে। নৌকা লাগার আগেই ৩০-৪০ জন লোক এসে যাত্রীদের ঘিরে ধরে। সবাই এই এলাকায় ভাড়ায় মোটরবাইকের চালক। আমরা যেহেতু নিজেদের বাইক নিয়ে এসেছি, তাই ভাড়া নিতে হয়নি। ছুটছি গন্তব্যের দিকে। পথে পলাশ বাজার, ধরপুর বাজার পেছনে ফেলে এসেছি। চিনাকান্দি বাজার পেছনে ফেলে বাইক যখন চলছে, তখন যেন পাহাড় হাতের কাছে। ডান দিকে তাকালেই ওপারে মেঘালয়।
দুপুর প্রায় ১২টা বাজে। বাজারে আরেক দফা হালকা চা-নাশতা হলো। এরপর বিজিবি ক্যাম্পের পাশ দিয়ে আমাদের মোটরবাইক নামল যাদুকাটার বালুচরে। আমরা এখন মেঘ-পাহাড়ের কোলে। পায়ের নিচে যাদুকাটার ঠান্ডা জল আর মাথার ওপরে পাহাড়। সেই পাহাড়ের পিঠ থেকে বের হয়ে বাংলাদেশে এসেছে যাদুকাটা নদী। যেন নদীর উৎসমুখে দুই পাশ থেকে পাহাড় ঝুলে আছে। পেছনে আরও একটি পাহাড় উঁকি দিচ্ছে। ছবির মতো লাগছে সবকিছু। পশ্চিমে এপারের বারেকটিলা। পুবে শাহ আরেফিনের (রহ.) আস্তানা ও লাউড়েরগড় গ্রাম। গ্রামের দক্ষিণ মাথায় নদীতীরে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান। প্রতিবছর চৈত্র মাসে প্রায় একই সময়ে শাহ আরেফিনের (রহ.) আস্তানায় ওরস ও যাদুকাটা নদীতীরে পুণ্যস্নান হয়। দুই উৎসব ঘিরে তখন নদীতীরে হিন্দু-মুসলমানের মিলনমেলা বসে। হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।
নগ্ন পায়ে বালুচরে হাঁটছি। কখনো হাঁটুজলে নেমে ছবি তোলা হচ্ছে। পাহাড়ি নদীর জল ঠান্ডা হয়। একটার পর একটা মোটরবাইক এসে থামছে বালুচরে। খেয়া পার হয়ে যাচ্ছে ওপারে ট্যারেকঘাটে। যেখানে রয়েছে বড়ছড়া-চারাগাঁও শুল্ক স্টেশন ও চুনাপাথর খনি প্রকল্প। এ পথে টাঙ্গুয়ার হাওরেও যাওয়া যায়। ছবি তোলার ধুম পড়েছে। ঘণ্টা খানেক এখানে কাটিয়ে আমরা গেলাম শাহ আরেফিনের (রহ.) আস্তানায়। পাশেই সীমান্তের কাঁটাতার। সেখানে নানা বয়সী মানুষের ভিড়। একটি ঘরে শিরনি বিতরণ চলছে। কলাপাতায় খিচুড়ি শিরনি নিয়ে খাচ্ছে শিশুরা।
এবার যাব পশ্চিম পারে বারেক টিলায়। খেয়া নৌকায় মোটরবাইক নিয়ে উঠলাম। ভালোয় ভালোয় নদী পার হয়েছি। কিন্তু নৌকা থেকে মোটরবাইক নামাতে গিয়ে বিপত্তি ঘটল। গিয়াস বাইকসহ পড়ে গেল বালুতে। ভাগ্যিস, অল্পের জন্য নদীতে পড়েনি।
বারেক টিলা গাছগাছালিতে ভরা। টিলার মাঝখান দিয়ে একটি ছোট্ট পাকা সড়ক আছে। উঁচু-নিচু। টিলার ওপর থেকে মেঘালয়কে আরও কাছে মনে হয়। নিচে নদী দেখা যায় বহুদূর পর্যন্ত। চমৎকার লাগে। ঘন জঙ্গলের ফাঁকে ফাঁকে উপজাতিদের কাঁচা ঘরবাড়ি। বনে-জঙ্গলে ঘুরতে মন্দ লাগে না। টিলার ওপরে একটি পাঠশালা আছে। আধা-পাকা টিনশেড ঘরের একটি গির্জাও চোখে পড়ল। ঘণ্টা খানেক টিলার ওপর কাটিয়ে আমরা গেলাম বড়চড়া-চারাগাঁও শুল্ক বন্দর ও ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পে। মোটরবাইকে পনেরো-বিশ মিনিটের পথ। ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত এই খনি প্রকল্পটি এখন বন্ধ। একসময় নাকি খুবই জমজমাট ছিল। প্রকল্প এলাকায় একটি চমৎকার হ্রদ আছে। হ্রদের পাড়েই সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোড়া একটি ছোট্ট টিলা।
একটি রেস্ট হাউস রয়েছে এখানে। সেটির বারান্দায় দাঁড়ালেই সামনে পাহাড়। বেলা বাড়ছে। শহরে ফিরতে হবে। ফেরার পথে আবার যাদুকাটা। নৌকায় পারাপার। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে। বারেক টিলার ছায়া পড়েছে যাদুকাটার জলে। সেই ছায়া যেন সারা দিনের বয়ে চলা ক্লান্ত জলে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। কেমন মায়া লাগছে আমাদের। যাদুকাটা নদীর এই মায়ার টানেই হয়তো আবার আসতে হবে এখানে।
যেভাবে যাবেন: সুনামগঞ্জ শহর থেকে নৌকায় মণিপুরিঘাটে। পরে মোটরবাইকে। একবারের ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সারা দিনের জন্য ভাড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। খনি প্রকল্পের রেস্ট হাউসে চারজনের থাকার ব্যবস্থা আছে। তাই শহর থেকে যোগাযোগ করে যাওয়া ভালো। ইচ্ছে করলে দিনের আলোতেই আবার জেলা শহরে ফেরা যাবে।
দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে নেমে এসেছে নদী। নাম যাদুকাটা। নদীর গভীরতা কম। যাদুকাটার স্বচ্ছ জলে নিচের বালুকণা পর্যন্ত দেখা যায়। নৌকা নিয়ে বালু তোলায় ব্যস্ত শ শ মানুষ। ছোট ছোট নৌকা ঢেউ তুলে ছুটছে এদিক-সেদিক। নদীর এক পাশে বিস্তীর্ণ বালুচর, অন্য পাশে সবুজ পাহাড়ের হাতছানি।
একদা এই যাদুকাটা নদীতীরেই ছিল প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী। এখন রাজ্য নেই, নেই রাজধানীও। তবে যাদুকাটা নদীর উৎসমুখ, নদীর চারপাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবশ্যই মুগ্ধ হওয়ার মতো। এলাকার নামের সঙ্গে রাজ্যের নামটিও জড়িয়ে আছে, ‘লাউরেরগড়’।
যাদুকাটা নদী দেখতে যাব। সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। বাস-টাসের রাস্তা নেই। যেতে হবে ভাড়া করা বাহনে অথবা নিজের মোটরবাইকে। আগের রাতেই সব ঠিকঠাক হয়েছে। সকাল নয়টায় রওনা হব। চারজন যাব দুই মোটরবাইকে। বাকি তিনজন হলেন সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার গিয়াস, ডিউক আর জুয়েল। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের মোল্লা রেস্টুরেন্টে নাশতা সেরে আমরা প্রথমে যাই সুরমা নদীর সাহেববাড়ির ঘাটে। সেখান থেকে মোটরবাইক নিয়ে উঠি নৌকায়। আধঘণ্টা পর পৌঁছাই মণিপুরি ঘাটে। নৌকা লাগার আগেই ৩০-৪০ জন লোক এসে যাত্রীদের ঘিরে ধরে। সবাই এই এলাকায় ভাড়ায় মোটরবাইকের চালক। আমরা যেহেতু নিজেদের বাইক নিয়ে এসেছি, তাই ভাড়া নিতে হয়নি। ছুটছি গন্তব্যের দিকে। পথে পলাশ বাজার, ধরপুর বাজার পেছনে ফেলে এসেছি। চিনাকান্দি বাজার পেছনে ফেলে বাইক যখন চলছে, তখন যেন পাহাড় হাতের কাছে। ডান দিকে তাকালেই ওপারে মেঘালয়।
দুপুর প্রায় ১২টা বাজে। বাজারে আরেক দফা হালকা চা-নাশতা হলো। এরপর বিজিবি ক্যাম্পের পাশ দিয়ে আমাদের মোটরবাইক নামল যাদুকাটার বালুচরে। আমরা এখন মেঘ-পাহাড়ের কোলে। পায়ের নিচে যাদুকাটার ঠান্ডা জল আর মাথার ওপরে পাহাড়। সেই পাহাড়ের পিঠ থেকে বের হয়ে বাংলাদেশে এসেছে যাদুকাটা নদী। যেন নদীর উৎসমুখে দুই পাশ থেকে পাহাড় ঝুলে আছে। পেছনে আরও একটি পাহাড় উঁকি দিচ্ছে। ছবির মতো লাগছে সবকিছু। পশ্চিমে এপারের বারেকটিলা। পুবে শাহ আরেফিনের (রহ.) আস্তানা ও লাউড়েরগড় গ্রাম। গ্রামের দক্ষিণ মাথায় নদীতীরে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান। প্রতিবছর চৈত্র মাসে প্রায় একই সময়ে শাহ আরেফিনের (রহ.) আস্তানায় ওরস ও যাদুকাটা নদীতীরে পুণ্যস্নান হয়। দুই উৎসব ঘিরে তখন নদীতীরে হিন্দু-মুসলমানের মিলনমেলা বসে। হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।
নগ্ন পায়ে বালুচরে হাঁটছি। কখনো হাঁটুজলে নেমে ছবি তোলা হচ্ছে। পাহাড়ি নদীর জল ঠান্ডা হয়। একটার পর একটা মোটরবাইক এসে থামছে বালুচরে। খেয়া পার হয়ে যাচ্ছে ওপারে ট্যারেকঘাটে। যেখানে রয়েছে বড়ছড়া-চারাগাঁও শুল্ক স্টেশন ও চুনাপাথর খনি প্রকল্প। এ পথে টাঙ্গুয়ার হাওরেও যাওয়া যায়। ছবি তোলার ধুম পড়েছে। ঘণ্টা খানেক এখানে কাটিয়ে আমরা গেলাম শাহ আরেফিনের (রহ.) আস্তানায়। পাশেই সীমান্তের কাঁটাতার। সেখানে নানা বয়সী মানুষের ভিড়। একটি ঘরে শিরনি বিতরণ চলছে। কলাপাতায় খিচুড়ি শিরনি নিয়ে খাচ্ছে শিশুরা।
এবার যাব পশ্চিম পারে বারেক টিলায়। খেয়া নৌকায় মোটরবাইক নিয়ে উঠলাম। ভালোয় ভালোয় নদী পার হয়েছি। কিন্তু নৌকা থেকে মোটরবাইক নামাতে গিয়ে বিপত্তি ঘটল। গিয়াস বাইকসহ পড়ে গেল বালুতে। ভাগ্যিস, অল্পের জন্য নদীতে পড়েনি।
বারেক টিলা গাছগাছালিতে ভরা। টিলার মাঝখান দিয়ে একটি ছোট্ট পাকা সড়ক আছে। উঁচু-নিচু। টিলার ওপর থেকে মেঘালয়কে আরও কাছে মনে হয়। নিচে নদী দেখা যায় বহুদূর পর্যন্ত। চমৎকার লাগে। ঘন জঙ্গলের ফাঁকে ফাঁকে উপজাতিদের কাঁচা ঘরবাড়ি। বনে-জঙ্গলে ঘুরতে মন্দ লাগে না। টিলার ওপরে একটি পাঠশালা আছে। আধা-পাকা টিনশেড ঘরের একটি গির্জাও চোখে পড়ল। ঘণ্টা খানেক টিলার ওপর কাটিয়ে আমরা গেলাম বড়চড়া-চারাগাঁও শুল্ক বন্দর ও ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পে। মোটরবাইকে পনেরো-বিশ মিনিটের পথ। ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত এই খনি প্রকল্পটি এখন বন্ধ। একসময় নাকি খুবই জমজমাট ছিল। প্রকল্প এলাকায় একটি চমৎকার হ্রদ আছে। হ্রদের পাড়েই সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোড়া একটি ছোট্ট টিলা।
একটি রেস্ট হাউস রয়েছে এখানে। সেটির বারান্দায় দাঁড়ালেই সামনে পাহাড়। বেলা বাড়ছে। শহরে ফিরতে হবে। ফেরার পথে আবার যাদুকাটা। নৌকায় পারাপার। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে। বারেক টিলার ছায়া পড়েছে যাদুকাটার জলে। সেই ছায়া যেন সারা দিনের বয়ে চলা ক্লান্ত জলে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। কেমন মায়া লাগছে আমাদের। যাদুকাটা নদীর এই মায়ার টানেই হয়তো আবার আসতে হবে এখানে।
যেভাবে যাবেন: সুনামগঞ্জ শহর থেকে নৌকায় মণিপুরিঘাটে। পরে মোটরবাইকে। একবারের ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সারা দিনের জন্য ভাড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। খনি প্রকল্পের রেস্ট হাউসে চারজনের থাকার ব্যবস্থা আছে। তাই শহর থেকে যোগাযোগ করে যাওয়া ভালো। ইচ্ছে করলে দিনের আলোতেই আবার জেলা শহরে ফেরা যাবে।
No comments:
Post a Comment