প্রাসাদঘেরা পরিখা নাটোর এলেই কেন যেন মন খুব ভালো হয়ে যায়। বনলতা সেনের
শহর বলে নয়, শহরটির নিজের সৌন্দর্যের জন্যই। ঐতিহ্যবাহী নাটোর রাজবাড়ি আর
দিঘাপাতিয়ায় উত্তরা গণভবন খুব প্রিয় জায়গা। এই বর্ষায় কোথাও বেড়াতে মন
চাইলে আপনিও নাটোর বেড়িয়ে আসতে পারেন। নাটোর রাজবাড়ি, দিঘাপাতিয়ার উত্তরা
গণভবনের সঙ্গে চিনির কল আর চলনবিল মনে ভালো লাগার পরশ বোলাবে। অনেকেই নাটোর
রাজবাড়ি আর উত্তরা গণভবন গুলিয়ে ফেলেন। আসলে দুটো আলাদা রাজবাড়ি। এ দুটো
রাজবাড়ি নাটোরের গর্ব বনলতা সেনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। নাটোর রাজবাড়ি
নাটোর শহরে অবস্থিত, আর উত্তরা গণভবন বগুড়া রোডের দিঘাপাতিয়ায়। উত্তরা
গণভবন হলো উত্তরবঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর স্থানীয় কার্যালয় ও
বাসভবন। মাদ্রাসা মোড় থেকে ডান দিকে বগুড়া রোড ধরে ফুলবাগান হয়ে
দিঘাপাতিয়ায় উত্তরা গণভবনে পৌঁছানোর পথ। একই পথে একটু এগিয়ে বাম দিকে সামনে
গেলেই পাবেন নাটোর রাজবাড়ি।
বাংলাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দিঘাপাতিয়ার উত্তরা গণভবন। এর প্রতিষ্ঠাতা দয়ারাম রায়। তিনি ছিলেন নাটোরের রাজা রামজীবনের কর্মচারী। পরবর্তী সময় এ ভবনটি উত্তরা গণভবন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। উত্তরা গণভবন দেখতে হলো জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে।
উত্তরা গণভবনে প্রবেশপথের বিশাল ফটকটা আসলে একটি ঘড়ি। ঘড়িটি দয়ারাম সে সময় ইংল্যান্ড থেকে আনিয়েছিলেন। ঘড়িটির পাশে রয়েছে একটি ঘণ্টা। একসময় এই ঘণ্টাধ্বনি বহুদূর থেকে শোনা যেত। পরে কাছের লোকজনের সুবিধার জন্য শব্দ কমিয়ে ফেলা হয়। ভবনের প্রবেশমুখে মুবারকের সঙ্গে পরিচয়। তিনি এখানকার মালী। রাজপ্রাসাদের ভেতর বহু প্রাচীন ও দুর্লভ প্রজাতির গাছের সমাবেশ। মুবারক গড়গড় করে সেসব বৃক্ষলতার নাম বলে চলেন। এখান থেকেই ব্রাউনিয়া ককেসিয়া ফুল নিয়ে ঢাকায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে রোপণ করা হয়েছিল, যা এখন স্মৃতিসৌধের শোভাবর্ধন করে চলেছে। তা ছাড়া এখানে আছে নীলমণিলতা, হাপরমালি, পারিজাত, রাজ-অশোক, সৌরভী, কর্পূর, যষ্টিমধু, হৈমন্তী, পেয়ালি, বনপুলক, তারাঝরা, সেঁউতি, মাধবী, সাইকাসসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ। প্রবেশপথের সামনে প্রথমেই চোখ যাবে ডান দিকের বিশাল পরিখায়, যা পুরো রাজপ্রাসাদ ঘিরে আছে। একটু এগিয়ে বামে গণপূর্ত অফিস, সে সময়কার গাড়ির গ্যারেজ। আছে গোলাপবাগান, বিশাল মাঠ। এখানে দোতলা হলুদ ভবনটি হলো কুমার প্যালেস, যার নিচতলাটি টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহূত হতো। রয়েছে একতলা তহশিল অফিস। আর আছে সে সময়কার চারটি কামান। বিশাল রাজদরবারটি আছে। রাজপ্রাসাদ-সংলগ্ন বাগানে জমিদার দয়ারামের একটি ভাস্কর্য তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
ঢাকা থেকে নাটোর চার ঘণ্টার পথ। গ্রিনলাইন ও হানিফ পরিবহনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসসহ শ্যামলী ও ন্যাশনাল ট্রাভেলসের বাস এ পথে নিয়মিত চলাচল করে। প্রায় দিন-রাতই বাস চলে বলা যায়। বাসের টিকিট আগে থেকেই কেটে রাখুন। অল্প টাকায় খুব ভালোভাবে খাওয়ার জন্য আছে ইসলামিয়া পঁচুর হোটেল। একটু দূরে রেলস্টেশনের কাছে নয়ন হোটেলের খাবারও মন্দ নয়। রাতে থাকার জন্য ভিআইপি হোটেলের কোনো বিকল্প নেই। কাছাকাছি মানের হোটেল আরপিতেও নির্দ্বিধায় রাত যাপন করতে পারেন। থাকতে পারেন হোটেল মিল্লাতেও। তবে যা-ই করুন, কাঁচাগোল্লা খেতে এবং সঙ্গে নিয়ে আসতে যেন ভুল না হয়। তেমনি ভুলবেন না নাটোর রাজবাড়ি, পুঠিয়া রাজবাড়ি, চিনির মিল ও চলনবিল দেখতে।
ইতালিয়ান গার্ডেন
‘ইতালিয়ান গার্ডেন’ উত্তরা গণভবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ। গার্ডেনটির বিভিন্ন আসবাব দয়ারাম ইতালি থেকে আনিয়েছিলেন বলেই এর এমন নামকরণ। এখানে রয়েছে পাঁচটি মার্বেল পাথরের মূর্তি, ঝরনা ও বসার বেঞ্চ। বেঞ্চগুলো অবশ্য কলকাতা থেকে আনা হয়েছিল। গায়ে ‘কলকাতা’ লেখা ট্রেডমার্ক আপনার চোখ এড়াবে না। ‘পাহাড়ি কন্যা’ শিরোনামের মূর্তিটির এক হাত ভাঙা। মুবারক জানান, ‘১৯৭১ সালে এখানে লুটপাট হয়েছিল। এই হাতের কবজিটি স্বর্ণ দিয়ে বাঁধাই করা ছিল। সে সময় পাকিস্তানি সেনারা হাতটি ভেঙে স্বর্ণ লুট করে্ নিয়ে যায়!’ পাহাড়ি কন্যার ভাঙা হাত দেখে মন খারাপ হলেও পরিখার কাছে গিয়ে আপনার মন ভালো হতে বাধ্য। এখানে রানির টি হাউসটি চমৎকার। ছিপ হাতে কালো রঙের মার্বেল পাথরের মূর্তিটি দেখে মন ভরে যাবে। এখানে দুটো হাপরমালি গাছ রয়েছে, সে গাছে ঘিয়ে রঙের ফুল ফুটে আছে। ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকা অন্যান্য গাছ তো রয়েছেই। বাগানটির যত্নআত্তি ভালোই হয়। হাপরমালি থেকে সামনে এগিয়ে বাগানের ভেতরের অংশ ঘুরে দেখতে পারেন। পারেন পরিখার পাশে বসে কিছুটা সময় কাটাতে, মন্দ লাগবে না!
বাংলাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দিঘাপাতিয়ার উত্তরা গণভবন। এর প্রতিষ্ঠাতা দয়ারাম রায়। তিনি ছিলেন নাটোরের রাজা রামজীবনের কর্মচারী। পরবর্তী সময় এ ভবনটি উত্তরা গণভবন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। উত্তরা গণভবন দেখতে হলো জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে।
উত্তরা গণভবনে প্রবেশপথের বিশাল ফটকটা আসলে একটি ঘড়ি। ঘড়িটি দয়ারাম সে সময় ইংল্যান্ড থেকে আনিয়েছিলেন। ঘড়িটির পাশে রয়েছে একটি ঘণ্টা। একসময় এই ঘণ্টাধ্বনি বহুদূর থেকে শোনা যেত। পরে কাছের লোকজনের সুবিধার জন্য শব্দ কমিয়ে ফেলা হয়। ভবনের প্রবেশমুখে মুবারকের সঙ্গে পরিচয়। তিনি এখানকার মালী। রাজপ্রাসাদের ভেতর বহু প্রাচীন ও দুর্লভ প্রজাতির গাছের সমাবেশ। মুবারক গড়গড় করে সেসব বৃক্ষলতার নাম বলে চলেন। এখান থেকেই ব্রাউনিয়া ককেসিয়া ফুল নিয়ে ঢাকায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে রোপণ করা হয়েছিল, যা এখন স্মৃতিসৌধের শোভাবর্ধন করে চলেছে। তা ছাড়া এখানে আছে নীলমণিলতা, হাপরমালি, পারিজাত, রাজ-অশোক, সৌরভী, কর্পূর, যষ্টিমধু, হৈমন্তী, পেয়ালি, বনপুলক, তারাঝরা, সেঁউতি, মাধবী, সাইকাসসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ। প্রবেশপথের সামনে প্রথমেই চোখ যাবে ডান দিকের বিশাল পরিখায়, যা পুরো রাজপ্রাসাদ ঘিরে আছে। একটু এগিয়ে বামে গণপূর্ত অফিস, সে সময়কার গাড়ির গ্যারেজ। আছে গোলাপবাগান, বিশাল মাঠ। এখানে দোতলা হলুদ ভবনটি হলো কুমার প্যালেস, যার নিচতলাটি টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহূত হতো। রয়েছে একতলা তহশিল অফিস। আর আছে সে সময়কার চারটি কামান। বিশাল রাজদরবারটি আছে। রাজপ্রাসাদ-সংলগ্ন বাগানে জমিদার দয়ারামের একটি ভাস্কর্য তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
ঢাকা থেকে নাটোর চার ঘণ্টার পথ। গ্রিনলাইন ও হানিফ পরিবহনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসসহ শ্যামলী ও ন্যাশনাল ট্রাভেলসের বাস এ পথে নিয়মিত চলাচল করে। প্রায় দিন-রাতই বাস চলে বলা যায়। বাসের টিকিট আগে থেকেই কেটে রাখুন। অল্প টাকায় খুব ভালোভাবে খাওয়ার জন্য আছে ইসলামিয়া পঁচুর হোটেল। একটু দূরে রেলস্টেশনের কাছে নয়ন হোটেলের খাবারও মন্দ নয়। রাতে থাকার জন্য ভিআইপি হোটেলের কোনো বিকল্প নেই। কাছাকাছি মানের হোটেল আরপিতেও নির্দ্বিধায় রাত যাপন করতে পারেন। থাকতে পারেন হোটেল মিল্লাতেও। তবে যা-ই করুন, কাঁচাগোল্লা খেতে এবং সঙ্গে নিয়ে আসতে যেন ভুল না হয়। তেমনি ভুলবেন না নাটোর রাজবাড়ি, পুঠিয়া রাজবাড়ি, চিনির মিল ও চলনবিল দেখতে।
ইতালিয়ান গার্ডেন
‘ইতালিয়ান গার্ডেন’ উত্তরা গণভবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ। গার্ডেনটির বিভিন্ন আসবাব দয়ারাম ইতালি থেকে আনিয়েছিলেন বলেই এর এমন নামকরণ। এখানে রয়েছে পাঁচটি মার্বেল পাথরের মূর্তি, ঝরনা ও বসার বেঞ্চ। বেঞ্চগুলো অবশ্য কলকাতা থেকে আনা হয়েছিল। গায়ে ‘কলকাতা’ লেখা ট্রেডমার্ক আপনার চোখ এড়াবে না। ‘পাহাড়ি কন্যা’ শিরোনামের মূর্তিটির এক হাত ভাঙা। মুবারক জানান, ‘১৯৭১ সালে এখানে লুটপাট হয়েছিল। এই হাতের কবজিটি স্বর্ণ দিয়ে বাঁধাই করা ছিল। সে সময় পাকিস্তানি সেনারা হাতটি ভেঙে স্বর্ণ লুট করে্ নিয়ে যায়!’ পাহাড়ি কন্যার ভাঙা হাত দেখে মন খারাপ হলেও পরিখার কাছে গিয়ে আপনার মন ভালো হতে বাধ্য। এখানে রানির টি হাউসটি চমৎকার। ছিপ হাতে কালো রঙের মার্বেল পাথরের মূর্তিটি দেখে মন ভরে যাবে। এখানে দুটো হাপরমালি গাছ রয়েছে, সে গাছে ঘিয়ে রঙের ফুল ফুটে আছে। ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকা অন্যান্য গাছ তো রয়েছেই। বাগানটির যত্নআত্তি ভালোই হয়। হাপরমালি থেকে সামনে এগিয়ে বাগানের ভেতরের অংশ ঘুরে দেখতে পারেন। পারেন পরিখার পাশে বসে কিছুটা সময় কাটাতে, মন্দ লাগবে না!
No comments:
Post a Comment