শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি বঙ্গবন্ধু সেতু পেরিয়ে সিরাজগঞ্জ চৌরাস্তা
থেকে বাঁয়ের রাস্তাটা গেল নগরবাড়ী। এ রাস্তায় প্রথমেই পড়ে উল্লাপাড়া।
উল্লাপাড়ায় ঢুকতেই রাস্তার দুই পাশে দেখা যায় নানা রঙের সুতা। শুকাতে দেওয়া
হয়েছে বাড়ির দাওয়ায় বা রাস্তার পাশে। সিরাজগঞ্জের তিন উপজেলা—উল্লাপাড়া,
শাহজাদপুর আর বেলকুচি। তাঁতশিল্পের বিশালবলয় এ অঞ্চলে। জানা গেল, প্রায়
পাঁচ লাখ তাঁতে এ অঞ্চলে তৈরি হয় শাড়ি, লুঙ্গি, ওড়না, গামছা—যার বাজার দেশে
তো বটেই, ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও আছে।
আমাদের গন্তব্য শাহজাদপুর। দিনটি ছিল রোববার। হাটের দিন। এটা পাঁচমিশালি হাট নয়, শাড়ির হাট। স্থানীয়দের মতে, দেশের সবচেয়ে বড় শাড়ির হাটটিই হলো এই শাহজাদপুরে। আশপাশের সোহাগপুর, এনায়েতপুর ও পাবনার আতাইকুলায়ও বসে শাড়ির হাট। শাহজাদপুরের এ হাটে হাতের তাঁত আর যান্ত্রিক তাঁতে (মেশিন লুম) তৈরি লুঙ্গি, থ্রিপিস, ওড়না ও গামছা নিয়ে আসেন তাঁতি আর ব্যবসায়ীরা। শনিবার রাত থেকেই শুরু হয় তাঁদের আনাগোনা। রোববার ভোর থেকে শুরু হয় হাট। এরপর হাট বসে বুধবারে। এই হাট যেখানটায় বসে, সেটি হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের কাছারিবাড়ির দেয়ালসংলগ্ন জায়গা।
শাহজাদপুর বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত। সাধারণ লোকজনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর কাছারিবাড়ির ব্যাপারে খুঁটিনাটি সব তথ্যই জানে। কাছারিবাড়ির সামনে থাকা দুটি তালগাছ দেখেই ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে…’ কবিতাটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই জোড়া তালগাছ এখনো এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে। বয়স সার্ধশত বছরেরও বেশি। সেই সময়ের নিমগাছটাও আছে এখন।
শাহজাদপুর ঘেঁষে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। করতোয়ার একটা শাখা যুক্ত হয়েছিল বড়ালনদীর সঙ্গে।এই শাখা নদী খোনকারের জোলা কুঠিবাড়ির সামনে দিয়েই বহমান ছিল। সেটি এখন ভরাট। এ এ নদী দেখেই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে’।
কাছারিবাড়িটি ১৯৬৯ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণ করছে। এটা একসময় ছিল নাটোরের রানি ভবানীর জমিদারির একটি অংশ। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরে রানি ভবানীর জমিদারি নিলামে উঠলে বিশ্ব কবির পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র ১৩ টাকা ১০ আনায় তা কিনে নিয়েছিলেন। ১৮৯০ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাঝেমধ্যে জমিদারি দেখতে আসতেন এবং থাকতেন। আগের দোতলা কাছারিবাড়িটাকেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। দোতলায় রবীন্দ্র স্মৃতিজাদুঘর। এখানে কবির ব্যবহূত খাট, সোফা, টেবিল-চেয়ার, টেবিল বেসিন, বাসনকোসন ইত্যাদি রয়েছে। রোববার বাদে এ জাদুঘর খোলা থাকে দর্শকদের জন্য। কাছারিবাড়ির প্রাঙ্গণে নতুন করে একটি মিলনায়তন তৈরি করা হয়েছে। ‘সামনেই ২৫ বৈশাখ। এবারে রবীন্দ্র সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে। তাই এখন পুরো কাছারিবাড়ি সাজানো হচ্ছে। এখান থেকে ২৫ বৈশাখের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে টেলিভিশনে।’ জানালেন রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ান জহুরুল হক।
আবার ফিরে আসা যাক হাটে। শাড়ির রঙে, নকশায় এ হাট যেন বাণিজ্যের রঙিন এক ভুবন। শাহজাদপুরের তাঁত ব্যবসায়ী আজমল কবীর জানালেন, প্রতিটি হাটে প্রায় ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ৩০০ থেকে শুরু করে তিন হাজর টাকা জোড়া দামের শাড়ি বিক্রি হয় এ হাটে। সারা দেশ থেকেই ক্রেতারা আসেন এখানে। হাট ঘুরে দেখা গেল, শাড়ির পাশাপাশি লুঙ্গি, ওড়না ও গামছার সংখ্যাও কম নয়।
হাটের পাশে কাছারিবাড়ি রোডে আছে সুতার মার্কেট। রং-সুতা বিক্রি হয় এখানে। সেলিম মার্চেন্ডাইজিংয়ের স্বত্বাধিকারী রকিবুল হাসান জানালেন, সুতার দাম বেড়ে গেছে খুব বেশি। এক বছর আগেও ৮০ কাউন্ট সুতার দাম ছিল বান্ডেলপ্রতি ১৬০০ টাকা। এখন এই দাম ৩৫০০ টাকা। নারয়াণগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন মিলে তৈরি হয় এসব সুতা। সেখান থেকে আসে এখানে। এরপর তাঁতিরা কিনে নেন। প্রতি সপ্তাহে এ মার্কেটে আসে ৫০ ট্রাক সুতা। প্রতি ট্রাকে ৬০ বেল করে সুতা আটে। প্রতি বেলে থাকে ৪০০ পাউন্ড সুতা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ইমরান খানও বললেন, সুতার দাম বেশি হওয়ায় তাঁতশিল্প বেশ সংকটের মধ্যেই পড়েছে। অনেকেই ঝুঁকছেন মেশিন লুমের দিকে। সিরাজগঞ্জ আর পাবনার তাঁতে বোনা কাপড়ের সুনাম সব সময়ই আছে। তাই চাহিদা এখনো ভালো। কিন্তু সুতার দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদকেরা দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আজমল কবীরের কাছ থেকে জানা গেল, সুতি, হাফসিল্ক, জামদানি সব ধরনের শাড়িই বোনা হয় এখানে। নিজের ডিজাইনে তো হয়ই, পাশাপাশি কে ক্র্যাফট, রঙের মতো প্রায় সব ফ্যাশন হাউসের নকশা অনুযায়ী বোনা হয় কাপড়। সেগুলো আর হাটে তোলা হয় না।
ইদানীং নতুন একধরনের পাটের সুতা আসে ভারত থেকে। বাংলাদেশের পাট যায় ভারতে। সেই পাট থেকে সোনালি ও রুপালি চকচকে সুতা তৈরি হয়ে আসে এ অঞ্চলে। এই সুতা দিয়েও শাড়ি বোনা হয়। যেগুলো জুটের শাড়ি নামে পরিচিত।
গোটা শাহজাদপুরেই তাঁতের খটখট আওয়াজ। ঘুরে ঘুরে দেখা হয় কাপড় তৈরির প্রক্রিয়াগুলো। সুতা কিনে তা নানা রঙে রাঙানো হয়। ডাই করার কাজটি চলে হাতে হাতেই। এরপর শুকানোর পালা। ছোট ছোট ববিনে ভরা হয়। তারপর কাপড়ের জমিনের নকশা অনুযায়ী সুতা সাজানো হয় ড্রামে। অনেক জায়গায় ‘টানা’ দিয়ে এ কাজটা করা হয়। কিন্তু শাহজাদপুরে বেশি কাপড় তৈরি করতে হয় বলে ড্রামপদ্ধতি সহজ। ড্রামে ৪৮ ইঞ্চি প্রস্থ জুড়ে সাজানো হয় সুতা। এরপর চলে যায় তাঁতে। সেখানো বুননের মধ্যেই ফুটে ওঠে নকশা। তৈরি হওয়ার পর কাপড়ের প্রস্থ দাঁড়ায় ৪৬ ইঞ্চিতে।
তাঁতিরা জানালেন, এ অঞ্চলে চিত্তরঞ্জন তাঁত আর পিটলুমের ব্যবহার বেশি। কাপড়ে সুতার নকশা ফুটিয়ে তুলতে ‘জ্যাকার্ড’ পদ্ধতিই চলছে।
বাড়ি বাড়ি তাঁতের খটাখট শব্দ, রঙের গন্ধ নাকে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে একবার ইচ্ছে করে করতোয়ার পাড়ে যেতে। নদীভাঙন থেকে শাহজাদপুরকে বাঁচাতে এখানে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধের পাড়েই বটগাছ। তার নিচে বসার জায়গা। মে মাসের ভরদুপুরেও শীতল বাতাসের পরশ মেলে এখানে। আর এর পাশেই হজরত মখ্দুম শাহ্ দৌলা শহীদ ইয়ামেনী (রহ.)-এর মাজার। সাড়ে ৭০০ বছর আগে তিনি ইয়েমেন থেকে এসেছিলেন এ অঞ্চলে।
শাহজাদপুর খেলার মাঠে ২৫ বৈশাখে শুরু হয় রবীন্দ্রমেলা। তিন দিন ধরে চলে এ মেলা। তা-ও দেখার মতো এক আয়োজন। কাছারিবাড়ি, শাড়ির হাট, করতোয়া—সবই কিন্তু কাছাকাছি। ঢাকা থেকে সড়কপথে তিন ঘণ্টার পথ শাহজাদপুর। তাই দিনে দিনেই ফিরে আসা যায়। রবীন্দ্রস্মৃতি, ঐতিহ্যের তাঁতশিল্প আপনাকে টানবেই।
আমাদের গন্তব্য শাহজাদপুর। দিনটি ছিল রোববার। হাটের দিন। এটা পাঁচমিশালি হাট নয়, শাড়ির হাট। স্থানীয়দের মতে, দেশের সবচেয়ে বড় শাড়ির হাটটিই হলো এই শাহজাদপুরে। আশপাশের সোহাগপুর, এনায়েতপুর ও পাবনার আতাইকুলায়ও বসে শাড়ির হাট। শাহজাদপুরের এ হাটে হাতের তাঁত আর যান্ত্রিক তাঁতে (মেশিন লুম) তৈরি লুঙ্গি, থ্রিপিস, ওড়না ও গামছা নিয়ে আসেন তাঁতি আর ব্যবসায়ীরা। শনিবার রাত থেকেই শুরু হয় তাঁদের আনাগোনা। রোববার ভোর থেকে শুরু হয় হাট। এরপর হাট বসে বুধবারে। এই হাট যেখানটায় বসে, সেটি হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের কাছারিবাড়ির দেয়ালসংলগ্ন জায়গা।
শাহজাদপুর বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত। সাধারণ লোকজনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর কাছারিবাড়ির ব্যাপারে খুঁটিনাটি সব তথ্যই জানে। কাছারিবাড়ির সামনে থাকা দুটি তালগাছ দেখেই ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে…’ কবিতাটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই জোড়া তালগাছ এখনো এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে। বয়স সার্ধশত বছরেরও বেশি। সেই সময়ের নিমগাছটাও আছে এখন।
শাহজাদপুর ঘেঁষে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। করতোয়ার একটা শাখা যুক্ত হয়েছিল বড়ালনদীর সঙ্গে।এই শাখা নদী খোনকারের জোলা কুঠিবাড়ির সামনে দিয়েই বহমান ছিল। সেটি এখন ভরাট। এ এ নদী দেখেই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে’।
কাছারিবাড়িটি ১৯৬৯ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণ করছে। এটা একসময় ছিল নাটোরের রানি ভবানীর জমিদারির একটি অংশ। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরে রানি ভবানীর জমিদারি নিলামে উঠলে বিশ্ব কবির পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র ১৩ টাকা ১০ আনায় তা কিনে নিয়েছিলেন। ১৮৯০ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাঝেমধ্যে জমিদারি দেখতে আসতেন এবং থাকতেন। আগের দোতলা কাছারিবাড়িটাকেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। দোতলায় রবীন্দ্র স্মৃতিজাদুঘর। এখানে কবির ব্যবহূত খাট, সোফা, টেবিল-চেয়ার, টেবিল বেসিন, বাসনকোসন ইত্যাদি রয়েছে। রোববার বাদে এ জাদুঘর খোলা থাকে দর্শকদের জন্য। কাছারিবাড়ির প্রাঙ্গণে নতুন করে একটি মিলনায়তন তৈরি করা হয়েছে। ‘সামনেই ২৫ বৈশাখ। এবারে রবীন্দ্র সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে। তাই এখন পুরো কাছারিবাড়ি সাজানো হচ্ছে। এখান থেকে ২৫ বৈশাখের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে টেলিভিশনে।’ জানালেন রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ান জহুরুল হক।
আবার ফিরে আসা যাক হাটে। শাড়ির রঙে, নকশায় এ হাট যেন বাণিজ্যের রঙিন এক ভুবন। শাহজাদপুরের তাঁত ব্যবসায়ী আজমল কবীর জানালেন, প্রতিটি হাটে প্রায় ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ৩০০ থেকে শুরু করে তিন হাজর টাকা জোড়া দামের শাড়ি বিক্রি হয় এ হাটে। সারা দেশ থেকেই ক্রেতারা আসেন এখানে। হাট ঘুরে দেখা গেল, শাড়ির পাশাপাশি লুঙ্গি, ওড়না ও গামছার সংখ্যাও কম নয়।
হাটের পাশে কাছারিবাড়ি রোডে আছে সুতার মার্কেট। রং-সুতা বিক্রি হয় এখানে। সেলিম মার্চেন্ডাইজিংয়ের স্বত্বাধিকারী রকিবুল হাসান জানালেন, সুতার দাম বেড়ে গেছে খুব বেশি। এক বছর আগেও ৮০ কাউন্ট সুতার দাম ছিল বান্ডেলপ্রতি ১৬০০ টাকা। এখন এই দাম ৩৫০০ টাকা। নারয়াণগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন মিলে তৈরি হয় এসব সুতা। সেখান থেকে আসে এখানে। এরপর তাঁতিরা কিনে নেন। প্রতি সপ্তাহে এ মার্কেটে আসে ৫০ ট্রাক সুতা। প্রতি ট্রাকে ৬০ বেল করে সুতা আটে। প্রতি বেলে থাকে ৪০০ পাউন্ড সুতা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ইমরান খানও বললেন, সুতার দাম বেশি হওয়ায় তাঁতশিল্প বেশ সংকটের মধ্যেই পড়েছে। অনেকেই ঝুঁকছেন মেশিন লুমের দিকে। সিরাজগঞ্জ আর পাবনার তাঁতে বোনা কাপড়ের সুনাম সব সময়ই আছে। তাই চাহিদা এখনো ভালো। কিন্তু সুতার দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদকেরা দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আজমল কবীরের কাছ থেকে জানা গেল, সুতি, হাফসিল্ক, জামদানি সব ধরনের শাড়িই বোনা হয় এখানে। নিজের ডিজাইনে তো হয়ই, পাশাপাশি কে ক্র্যাফট, রঙের মতো প্রায় সব ফ্যাশন হাউসের নকশা অনুযায়ী বোনা হয় কাপড়। সেগুলো আর হাটে তোলা হয় না।
ইদানীং নতুন একধরনের পাটের সুতা আসে ভারত থেকে। বাংলাদেশের পাট যায় ভারতে। সেই পাট থেকে সোনালি ও রুপালি চকচকে সুতা তৈরি হয়ে আসে এ অঞ্চলে। এই সুতা দিয়েও শাড়ি বোনা হয়। যেগুলো জুটের শাড়ি নামে পরিচিত।
গোটা শাহজাদপুরেই তাঁতের খটখট আওয়াজ। ঘুরে ঘুরে দেখা হয় কাপড় তৈরির প্রক্রিয়াগুলো। সুতা কিনে তা নানা রঙে রাঙানো হয়। ডাই করার কাজটি চলে হাতে হাতেই। এরপর শুকানোর পালা। ছোট ছোট ববিনে ভরা হয়। তারপর কাপড়ের জমিনের নকশা অনুযায়ী সুতা সাজানো হয় ড্রামে। অনেক জায়গায় ‘টানা’ দিয়ে এ কাজটা করা হয়। কিন্তু শাহজাদপুরে বেশি কাপড় তৈরি করতে হয় বলে ড্রামপদ্ধতি সহজ। ড্রামে ৪৮ ইঞ্চি প্রস্থ জুড়ে সাজানো হয় সুতা। এরপর চলে যায় তাঁতে। সেখানো বুননের মধ্যেই ফুটে ওঠে নকশা। তৈরি হওয়ার পর কাপড়ের প্রস্থ দাঁড়ায় ৪৬ ইঞ্চিতে।
তাঁতিরা জানালেন, এ অঞ্চলে চিত্তরঞ্জন তাঁত আর পিটলুমের ব্যবহার বেশি। কাপড়ে সুতার নকশা ফুটিয়ে তুলতে ‘জ্যাকার্ড’ পদ্ধতিই চলছে।
বাড়ি বাড়ি তাঁতের খটাখট শব্দ, রঙের গন্ধ নাকে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে একবার ইচ্ছে করে করতোয়ার পাড়ে যেতে। নদীভাঙন থেকে শাহজাদপুরকে বাঁচাতে এখানে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধের পাড়েই বটগাছ। তার নিচে বসার জায়গা। মে মাসের ভরদুপুরেও শীতল বাতাসের পরশ মেলে এখানে। আর এর পাশেই হজরত মখ্দুম শাহ্ দৌলা শহীদ ইয়ামেনী (রহ.)-এর মাজার। সাড়ে ৭০০ বছর আগে তিনি ইয়েমেন থেকে এসেছিলেন এ অঞ্চলে।
শাহজাদপুর খেলার মাঠে ২৫ বৈশাখে শুরু হয় রবীন্দ্রমেলা। তিন দিন ধরে চলে এ মেলা। তা-ও দেখার মতো এক আয়োজন। কাছারিবাড়ি, শাড়ির হাট, করতোয়া—সবই কিন্তু কাছাকাছি। ঢাকা থেকে সড়কপথে তিন ঘণ্টার পথ শাহজাদপুর। তাই দিনে দিনেই ফিরে আসা যায়। রবীন্দ্রস্মৃতি, ঐতিহ্যের তাঁতশিল্প আপনাকে টানবেই।
No comments:
Post a Comment