Monday, July 21, 2014

মেদিনীপুর জুনপুটের বালুরাশি

যত দূর চোখ যায় শুধুই বালুরাশি। চার পাশের নির্জন ঝাউবনে কানে কানে কথা বলে বাতাস। ঝাউ গাছের ফাক দিয়ে চোখ আটকায় সাগরের নীল জলরাশিতে। সাগরতট জুড়ে ঝিনুকের মেলা। মাঝে হোগলার ঝুপড়ি। ঝুপড়ির সামনে মাটিতে বা বাশের মাচায় মাছ শুকোচ্ছেন জেলেরা। মাইলের পর মাইল এমনই বর্ণনাতীত সৌন্দর্য সম্ভার জুনপুটের সাগরবেলায়। ডাককি, কান্তিপুর, আলাচারপুটের মতো টুকরো টুকরো গ্রাম পেরিয়ে এগিয়েছে পথ।

জুনপুটে ঢোকার মুখেই রয়েছে রাজ্য মৎস্য দফতরের গবেষণাগার। মৎস্য গবেষণাগারের গা ঘেষে কিছুটা মোরাম দেওয়া পথ দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। একটি গিয়েছে ফরেস্ট অফিসের দিকে, অন্যটি সোজা ঝাউবনে। সমুদ্রের তীরেই মৎস্যজীবীদের অকশন সেন্টার, নৌেকা তৈরির ঘর। সমুদ্রচরেই গড়ে উঠেছে মৎস্যজীবীদের এক একটা গ্রাম।
সাগর-সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়ার ফাকেই বেলাভূমি জুড়ে চোখে পড়বে জাল আর মাছ নিয়ে মৎস্যজীবীদের চূড়ান্ত ব্যস্ততা। দম ফেলবার ফুরসত নেই ওঁদের। কেউ প্রস্তুত হচ্ছেন মাছ শিকারে বেরোবেন বলে, কেউ আবার সমুদ্রের তীরে মাছ শুকোতে ব্যস্ত। ছোট-বড় নানা আকারের নানা রকমের মাছ রোদ পড়ে রুপোর মতো চকচক করছে। মূলত মহিলা মৎস্যজীবীরাই মাছ বাছার কাজটা করেন।

মৎস্য দফতরের সুবিশাল হিমঘরে নানা মাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লরি বোঝাই করে শুকনো মাছ রফতানি হয় এখানকার সমুদ্রসৈকত থেকে। জুনপুট এখন মাছ শিকার আর বিক্রির এক বিশাল বাজারে পরিণত হয়েছে।
যাতায়াত
– কাথি থেকে জুনপুটের দূরত্ব ৮ কিমি। বাসে, ট্যািক্সতে এবং রিকশায় যাওয়া যায়।
ট্যািক্স ১৫০ টাকা নেয়, রিকশায় (ট্রলি) মাথাপিছু ৮ টাকা।
– জুনপুট যেতে হলে কলকাতা ও হাওড়া থেকে বাসে অথবা ট্রেনে কাথি আসতে হবে।
১) হাওড়া থেকে কাথির ভাড়া ২৭টাকা (প্যাসেঞ্জার) ও ৫৬ টাকা (এক্সেপ্রস)।
২) বাসের ভাড়া হাওড়া থেকে কাথি ৬০টাকা এবং কলকাতা থেকে ৭০টাকা।
৩) প্রচুর বেসরকারি ও সরকারি বাস চলাচল করে প্রতিদিন।
আস্তানা
– জুনপুটে পর্যটকদের থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। মৎস্য দফতরের ১টি দু’কামরার অতিথিশালা থাকলেও তা শুধুমাত্র দফতরের কর্মীদের জন্য।
– কাথিতে একাধিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা আছে। ঘর ভাড়া ২৫০টাকা থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত আছে।

আশেপাশে
– শুকনো মাছের গন্ধ সহ্য করতে পারলে দলবেধে পিকনিকের জন্য আসার পক্ষে আদর্শ জায়গা হল জুনপুট।
– মকরসংক্রান্তির দিন এখনও হাজার হাজার স্থানীয় মানুষ সাগরস্নান করতে ভিড় জমান। মকরস্নান উপলক্ষে মেলাও বসে। সেই সময় এখানে এলে কিন্তু বোঝা দায় বছরের অন্য সময়টা এখানে পর্যটক প্রায় আসেনই না।

No comments:

Post a Comment