মুর্শিদাবাদের ইতিহাস বলতেই আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে গড়ে ওঠা
বাংলার প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম গৌড় রাজ্যের রাজধানী বহরমপুর থেকে মাত্র আট
কিমি দূরে কর্ণসুবর্ণ নগরী, আবার এখানেই বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতার
সূর্যােস্তর সূচনা হয় ১৭৫৭ সালে। ১৮৫৭ সালে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের
অর্থাৎ সিপাহি বিদ্রোহের সূচনা হয় এখানেই। ফকির, ফরাজী, নীল, সাওতাল,
তেভাগা প্রভৃতি কৃষক-স্বাধীনতা-অসহযোগ-ভারত ছাড়ো আন্দোলন-সহ সশস্ত্র
বিপ্লবীদের গোপন পদচারণায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠা মুর্শিদাবাদের মাটি।
মুর্শিদাবাদ শহরে হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। ভাগীরথীর পূর্বতীরে অনেকটা জায়গা নিয়ে কিল্লা নিজামত, প্রাক্তন নবাবদের বাসস্থান ও কার্যালয়। কিল্লা নিজামতের উত্তর অংশে এই হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। এই তিন তলা বিশাল অট্টালিকা বড়কুঠি নামে পরিচিত। প্রাসাদটি নির্মাণ করেন নাজিম হুমায়ুন জা (১৬২৪-১৮৩৮)। প্রাসাদের নির্মাণ কাল ১৮২৯ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ। জেনারেল ডানকান ম্যাকলিয়ড-এর পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে ইতালীয় স্থাপত্যের এই বিশাল প্রাসাদটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে ১৩০, ৬০ ও সাড়ে ২৪ মিটার। প্রাসাদে এক হাজার দরজা থাকায় এর নাম হাজারদুয়ারি। অবশ্য এই হাজার দরজার মধ্যে বেশ কিছু নকল দরজাও রয়েছে।
প্রাসাদের নানা কক্ষে বিশেষ দর্শনীয় পৃথিবীর বিখ্যাত শিল্পীদের আকা নানা আকার ও বর্ণের ছবি, কালানুক্রমিক বিভিন্ন নবাবদের চিত্র, নানা বিষয়ে সংগৃহীত মূল্যবান তৈজসপত্র ও বিলাসদ্রব্যাদি, গ্রন্থাগার এবং অস্ত্রাগার। গ্রন্থাগারে বহু বিচিত্র ও বিস্ময়কর কোরানের পুথি, আইন-ই-আকবরি আকবরনামা, শাহনামা সমেত বহু মূল্যবান পুথিও এখানে রক্ষিত আছে। আকবরনামার পুথিটি আবুল ফজলের স্বহস্তলিখিত। তবে গ্রন্থাগার সকলের জন্য উন্মুক্ত নয়। দরবার কক্ষটি সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয়। এই কক্ষের অভ্যন্তরে একটি বিশাল ঝাড়বাতি উল্লেখযোগ্য।
হাজারদুয়ারি ছাড়াও কিল্লা নিজামতের মধ্যে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান আছে। কেল্লার দক্ষিণপ্রান্তে দক্ষিণ দরওয়াজা, পূর্বতন প্রবেশদ্বার। কেল্লায় প্রবেশের আরও দুটি প্রধান প্রবেশদ্বার, পূর্ব দিকে চক দরওয়াজা ও উত্তর দিকে ইমামবাড়া দরওয়াজা। এখন চক দরওয়াজা প্রধান প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণ পথ। ডক দরওয়াজা দিয়ে প্রবেশ করে দক্ষিণ দিকে নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জা নির্মিত নতুন প্রাসাদ ওয়াসিফ মিঞ্জল। এখানেও নবাবি আমলের কিছু দর্শনীয় বস্তু রয়েছে।
হাজারদুয়ারির উত্তরে কেল্লার উত্তর সীমানায় ২০৭ মিটার দীর্ঘ বাংলার বৃহত্তম ইমামবাড়া। হাজারদুয়ারি এবং ইমামবাড়ার মধ্যে বিস্তৃত প্রাঙ্গণে একটি ঘড়িঘর ও সিরাজউদ্দৌলা নির্মিত ইমামবাড়ার ‘মেদিনা’ বা ‘মদিনা’ অংশটি এখনও বর্তমান। সিরাজউদ্দৌলার এই একটি কীর্তিই এখন অবশিষ্ট রয়েছে।
মদিনার কাছেই বাচ্চাওয়ালি তোপ। বিশেষজ্ঞেদর মতে, এই কামানটি সম্ভবত, ১৩-১৪ শতকে গৌড়ের কোনও সুলতানি আমলের।
কেল্লার বাইরে চক দরওয়াজার দক্ষিণে ‘চক মসজিদ’ বা ‘বেগম মসজিদ’। মুর্শিদকুলি খার (১৭০৪-১৭২৫) নির্মিত পূর্বতন ‘চেহেল সেতুল’ (৪০ স্তেম্ভর প্রাসাদ) নামে দরবার হলের স্থানে মোগল স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন এই মসজিদ ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন নবাব মিরজাফরের পত্নী মণি বেগম।
চক বাজারের উত্তরে মুর্শিদকুলি খার জামাতা নবাব সুজাউদ্দৌলা (১৭২৮-৩৯) ‘ত্রিপোলিয়া তোরণ’ নির্মাণ করেন।
হাজারদুয়ারি থেকে এক কিমি দূরে শ্যামপুর-হায়দারগঞ্জ অঞ্চলে মুর্শিদকুলি খার কন্যা আজিমউেন্নসার সমাধি। প্রাসাদ থেকে দেড় কিমি দূরে জাফরাগঞ্জ। এখানে রাস্তার পূর্ব দিকে মিরজাফর ও অন্যান্য নবাব নাজিমদের সমাধিস্থল জাফরাগঞ্জ সমাধি ক্ষেত্র।
জাফরাগেঞ্জর সমাধির বিপরীতে মিরজাফরের দাফরাগঞ্জ প্রাসাদ। জাফরাগঞ্জ দেউড়ি (লোকমুখে নিমকহারাম দেউড়ি) নামে সুন্দর কারুকাজ করা তোরণের মধ্যে এখানে প্রবেশ করতে হয়। এখানে মিরজাফরের পুত্র মিরনের বংশধরগণ বাস করেন। বিস্তৃত আঙিনার উত্তর-পূর্ব অংশে যে গৃহের মধ্যে সিরাজেদ্দৗলাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল, সেটি এখন লুপ্ত। এই প্রাসাদেই সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং পলাশির যুদ্ধের পূর্বে মিরজাফর ও ইংরেজদের মধ্যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়।
জাফরাগঞ্জ প্রাসাদ থেকে এক কিমি উত্তরে নশিপুর রাজবাড়ির কাছে রাস্তার পশ্চিম দিকে রামানুজ সম্প্রদায়ের নশিপুর আখড়া। ১৭৬১ সালে এই আখড়ার প্রাসাদোপম মন্দিরে লক্ষ্মীনারায়ণ ও অন্যান্য বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত।
ওই রাস্তার পূর্ব দিকে নশিপুর রাজপ্রাসাদ। নশিপুরের রাজা কীর্তিচাদ বাহাদুর উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পাশ্চাত্য স্থাপত্য রীতিতে এই বৃহৎ প্রাসাদ নির্মাণ করেন। প্রাসাদ সংলগ্ন ঠাকুর বাড়িতে সুউচ্চ পচিশ চূড়া বিশিষ্ট রামচন্দ্র মন্দির। প্রাসাদ এখন জীর্ণ ও ধ্বংসপ্রায়।
নশিপুরের এক কিমি দক্ষিণপূর্বে কাঠগোলা। জিয়াগেঞ্জর ধনকুবের রাজা ধনপৎ সিংহ দুগার ও লক্ষ্মীপৎ সিং দুগার ১৮৭৩ সালে এখানে একটি সুরম্য প্রাসাদ ও আদিনাথের বিখ্যাত মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
কাঠগোলার এক কিমি দক্ষিণে রেলপথের পূর্ব দিকে কুমারপুর অঞ্চলে অসমাপ্ত ‘ফুটি মসজিদ’ অবিস্থত। মুর্শিদকুলি দৌহিত্র নবাব সরফরাজ খা (১৭৩৯-৪০) মসজিদটি নির্মাণ করেন। অসমাপ্ত হলেও স্থাপত্যের দিক দিয়ে এটি একটি উল্লেখযোগ্য মসজিদ।
মুর্শিদাবাদ রেলেস্টশন থেকে দেড় কিমি উত্তর-পূর্বে বহরমপুর-লালগোলা রাজ্য সড়কের পাশে বিশাল ‘কাটরা মসজিদ’। নবাব মুর্শিদকুলি খা ১৭২৩ সালে ৫টি সুবৃহৎ গম্বুজ ও দুটি উচ্চ মিনার বিশিষ্ট বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশাল মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের সম্মুখে বিরাট চত্বরে উঠবার ঁসিড়ির নিচে নবাব মুর্শিদকুলি কার অনাড়ম্বর সমাধি।
কাটরা থেকে এক কিমি দক্ষিণ-পূর্বে গোবরা নালার তীরে তোপখানা। মুর্শিদাবাদের প্রতিরক্ষার জন্য এখানে যে অস্ত্রাগার ছিল, তারই নিদর্শন জাহানকোষা (জগজ্জয়ী) কামান। সাড়ে ১৭ ফুট লম্বা এই কামানটি সুবেদার ইসলাম খার আমলে (১৬০৮-১৩) ঢাকার কারিগর জনাদ্দর্ন কর্মকার নির্মাণ করেন।
লালবাগ কোর্ট থেকে এক কিমি দক্ষিণে লালবাগ-বহরমপুর সড়কের কিছু পূর্বে মতিঝিল। আলিবর্র্দি খার জ্যেষ্ঠ জামাতা ঘসেটি বেগমের (মেহেরুেন্নসা) স্বামী নবাব নওয়াজেস মহম্মদ খা এই অতি সুদৃশ্য ঝিল এবং তার তীরে ‘সাংহী দালান’ নামে এক প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এখন তা অবলুপ্ত। নওয়াজেস খা (১৭৫০-৫১) ‘কালা মসজিদ’ নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যা মতিঝিল মসজিদ নামেও পরিচিত। মসজিদ চত্বরে নওয়াজেস মহম্মদ খা ও সিরাজের কনিষ্ঠ ভ্রাতা এক্রামউদ্দৌলার সমাধি রয়েছে।
লালবাগ সদর ঘাট থেকে এক কিমি দক্ষিণে ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে খোশবাগ। এখানে নবাব আলিবর্র্দি (১৭০৪-৫৬) ও সিরাজউদ্দৌলার সমাধি ছাড়াও সিরাজের বেগম লুৎফুেন্নসা, সিরাজের অনুজ মির্জা মহম্মদের সমাধি রয়েছে।
ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে ডাহাপাড়ায় অতীতের আর কিছু নেই। তবে এখন জগদ্বন্ধু আশ্রমটি ডাহাপাড়ার অতীত গৌরব রক্ষা করছে।
ডাহাপাড়া থেকে প্রায় চার কিমি পশ্চিমে কিরীটেশ্বরী মন্দির মুর্শিদাবাদের প্রাচীনতম দেবস্থান। এখানে দেবীর কিরীট পড়েছিল বলে এটি একটি পীঠস্থান বা মতান্তরে উপপীঠ।
লালবাগ সদর ঘাট থেকে প্রায় ৪ কিমি পশ্চিমে ভট্টমাটি বা ভট্টবাটিতে অবিস্থত পোড়ামাটির তৈরি পঞ্চরত্ন রেত্নশ্বর শিব মন্দির।
যাতায়াত
কলকাতা থেকে বহরমপুর ১৯০ কিমি পথ।
– সড়ক পথে কলকাতা এসপ্ল্যানেড থেকে সরকারি বা বেসরকারি বাসে বহরমপুর।
– রেলপথে শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে বহরমপুর স্টেশন।
– বহরমপুর থেকে মুর্শিদাবাদ শহরের দূরত্ব ১৬ কিমি। স্টেশন থেকে মুর্শিদাবাদ শহরে যাওয়ার জন্য অটো-ট্রেকার-বাস রয়েছে।
– মুর্শিদাবাদ শহরে পৌছে ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো যেতে পারে।
আস্তানা
– বহরমপুরে নামী-দামি বিভিন্ন হোটেল ছাড়াও সরকারি ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে।
– মুর্শিদাবাদেও হাজারদুয়ারি লাগোয়া ভাগীরথীর তীরে বেশ কিছু হোটেল রয়েছে।
– এখানে রয়েছে যুব আবাসও। যুব আবাসে থাকার জন্য আগাম ঘর বুকিং করতে হবে।
– সরকারি লজে বুকিং-এর জন্য যোগাযোগ করুন:
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম
৩৩/২ বি বা দী বাগ (পূর্ব)
কলকাতা-৭০০ ০০১
ফোন: (০৩৩) ২২৪৩ ৭২৬০, (০৩৩) ২২১০ ৩১৯৯
মোবাইল: ৯৮৭৪০ ২৬৯১৪, ৯৮৩৬৭ ৬৯১৯৬
যুব আবাস ছাড়া সব ক্ষেত্রেই এসি-নন এসি ঘর রয়েছে। ডর্মিটারির সুবিধাও মিলবে।
মুর্শিদাবাদ শহরে হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। ভাগীরথীর পূর্বতীরে অনেকটা জায়গা নিয়ে কিল্লা নিজামত, প্রাক্তন নবাবদের বাসস্থান ও কার্যালয়। কিল্লা নিজামতের উত্তর অংশে এই হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। এই তিন তলা বিশাল অট্টালিকা বড়কুঠি নামে পরিচিত। প্রাসাদটি নির্মাণ করেন নাজিম হুমায়ুন জা (১৬২৪-১৮৩৮)। প্রাসাদের নির্মাণ কাল ১৮২৯ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ। জেনারেল ডানকান ম্যাকলিয়ড-এর পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে ইতালীয় স্থাপত্যের এই বিশাল প্রাসাদটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে ১৩০, ৬০ ও সাড়ে ২৪ মিটার। প্রাসাদে এক হাজার দরজা থাকায় এর নাম হাজারদুয়ারি। অবশ্য এই হাজার দরজার মধ্যে বেশ কিছু নকল দরজাও রয়েছে।
প্রাসাদের নানা কক্ষে বিশেষ দর্শনীয় পৃথিবীর বিখ্যাত শিল্পীদের আকা নানা আকার ও বর্ণের ছবি, কালানুক্রমিক বিভিন্ন নবাবদের চিত্র, নানা বিষয়ে সংগৃহীত মূল্যবান তৈজসপত্র ও বিলাসদ্রব্যাদি, গ্রন্থাগার এবং অস্ত্রাগার। গ্রন্থাগারে বহু বিচিত্র ও বিস্ময়কর কোরানের পুথি, আইন-ই-আকবরি আকবরনামা, শাহনামা সমেত বহু মূল্যবান পুথিও এখানে রক্ষিত আছে। আকবরনামার পুথিটি আবুল ফজলের স্বহস্তলিখিত। তবে গ্রন্থাগার সকলের জন্য উন্মুক্ত নয়। দরবার কক্ষটি সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয়। এই কক্ষের অভ্যন্তরে একটি বিশাল ঝাড়বাতি উল্লেখযোগ্য।
হাজারদুয়ারি ছাড়াও কিল্লা নিজামতের মধ্যে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান আছে। কেল্লার দক্ষিণপ্রান্তে দক্ষিণ দরওয়াজা, পূর্বতন প্রবেশদ্বার। কেল্লায় প্রবেশের আরও দুটি প্রধান প্রবেশদ্বার, পূর্ব দিকে চক দরওয়াজা ও উত্তর দিকে ইমামবাড়া দরওয়াজা। এখন চক দরওয়াজা প্রধান প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণ পথ। ডক দরওয়াজা দিয়ে প্রবেশ করে দক্ষিণ দিকে নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জা নির্মিত নতুন প্রাসাদ ওয়াসিফ মিঞ্জল। এখানেও নবাবি আমলের কিছু দর্শনীয় বস্তু রয়েছে।
হাজারদুয়ারির উত্তরে কেল্লার উত্তর সীমানায় ২০৭ মিটার দীর্ঘ বাংলার বৃহত্তম ইমামবাড়া। হাজারদুয়ারি এবং ইমামবাড়ার মধ্যে বিস্তৃত প্রাঙ্গণে একটি ঘড়িঘর ও সিরাজউদ্দৌলা নির্মিত ইমামবাড়ার ‘মেদিনা’ বা ‘মদিনা’ অংশটি এখনও বর্তমান। সিরাজউদ্দৌলার এই একটি কীর্তিই এখন অবশিষ্ট রয়েছে।
মদিনার কাছেই বাচ্চাওয়ালি তোপ। বিশেষজ্ঞেদর মতে, এই কামানটি সম্ভবত, ১৩-১৪ শতকে গৌড়ের কোনও সুলতানি আমলের।
কেল্লার বাইরে চক দরওয়াজার দক্ষিণে ‘চক মসজিদ’ বা ‘বেগম মসজিদ’। মুর্শিদকুলি খার (১৭০৪-১৭২৫) নির্মিত পূর্বতন ‘চেহেল সেতুল’ (৪০ স্তেম্ভর প্রাসাদ) নামে দরবার হলের স্থানে মোগল স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন এই মসজিদ ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন নবাব মিরজাফরের পত্নী মণি বেগম।
চক বাজারের উত্তরে মুর্শিদকুলি খার জামাতা নবাব সুজাউদ্দৌলা (১৭২৮-৩৯) ‘ত্রিপোলিয়া তোরণ’ নির্মাণ করেন।
হাজারদুয়ারি থেকে এক কিমি দূরে শ্যামপুর-হায়দারগঞ্জ অঞ্চলে মুর্শিদকুলি খার কন্যা আজিমউেন্নসার সমাধি। প্রাসাদ থেকে দেড় কিমি দূরে জাফরাগঞ্জ। এখানে রাস্তার পূর্ব দিকে মিরজাফর ও অন্যান্য নবাব নাজিমদের সমাধিস্থল জাফরাগঞ্জ সমাধি ক্ষেত্র।
জাফরাগেঞ্জর সমাধির বিপরীতে মিরজাফরের দাফরাগঞ্জ প্রাসাদ। জাফরাগঞ্জ দেউড়ি (লোকমুখে নিমকহারাম দেউড়ি) নামে সুন্দর কারুকাজ করা তোরণের মধ্যে এখানে প্রবেশ করতে হয়। এখানে মিরজাফরের পুত্র মিরনের বংশধরগণ বাস করেন। বিস্তৃত আঙিনার উত্তর-পূর্ব অংশে যে গৃহের মধ্যে সিরাজেদ্দৗলাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল, সেটি এখন লুপ্ত। এই প্রাসাদেই সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং পলাশির যুদ্ধের পূর্বে মিরজাফর ও ইংরেজদের মধ্যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়।
জাফরাগঞ্জ প্রাসাদ থেকে এক কিমি উত্তরে নশিপুর রাজবাড়ির কাছে রাস্তার পশ্চিম দিকে রামানুজ সম্প্রদায়ের নশিপুর আখড়া। ১৭৬১ সালে এই আখড়ার প্রাসাদোপম মন্দিরে লক্ষ্মীনারায়ণ ও অন্যান্য বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত।
ওই রাস্তার পূর্ব দিকে নশিপুর রাজপ্রাসাদ। নশিপুরের রাজা কীর্তিচাদ বাহাদুর উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পাশ্চাত্য স্থাপত্য রীতিতে এই বৃহৎ প্রাসাদ নির্মাণ করেন। প্রাসাদ সংলগ্ন ঠাকুর বাড়িতে সুউচ্চ পচিশ চূড়া বিশিষ্ট রামচন্দ্র মন্দির। প্রাসাদ এখন জীর্ণ ও ধ্বংসপ্রায়।
নশিপুরের এক কিমি দক্ষিণপূর্বে কাঠগোলা। জিয়াগেঞ্জর ধনকুবের রাজা ধনপৎ সিংহ দুগার ও লক্ষ্মীপৎ সিং দুগার ১৮৭৩ সালে এখানে একটি সুরম্য প্রাসাদ ও আদিনাথের বিখ্যাত মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
কাঠগোলার এক কিমি দক্ষিণে রেলপথের পূর্ব দিকে কুমারপুর অঞ্চলে অসমাপ্ত ‘ফুটি মসজিদ’ অবিস্থত। মুর্শিদকুলি দৌহিত্র নবাব সরফরাজ খা (১৭৩৯-৪০) মসজিদটি নির্মাণ করেন। অসমাপ্ত হলেও স্থাপত্যের দিক দিয়ে এটি একটি উল্লেখযোগ্য মসজিদ।
মুর্শিদাবাদ রেলেস্টশন থেকে দেড় কিমি উত্তর-পূর্বে বহরমপুর-লালগোলা রাজ্য সড়কের পাশে বিশাল ‘কাটরা মসজিদ’। নবাব মুর্শিদকুলি খা ১৭২৩ সালে ৫টি সুবৃহৎ গম্বুজ ও দুটি উচ্চ মিনার বিশিষ্ট বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশাল মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের সম্মুখে বিরাট চত্বরে উঠবার ঁসিড়ির নিচে নবাব মুর্শিদকুলি কার অনাড়ম্বর সমাধি।
কাটরা থেকে এক কিমি দক্ষিণ-পূর্বে গোবরা নালার তীরে তোপখানা। মুর্শিদাবাদের প্রতিরক্ষার জন্য এখানে যে অস্ত্রাগার ছিল, তারই নিদর্শন জাহানকোষা (জগজ্জয়ী) কামান। সাড়ে ১৭ ফুট লম্বা এই কামানটি সুবেদার ইসলাম খার আমলে (১৬০৮-১৩) ঢাকার কারিগর জনাদ্দর্ন কর্মকার নির্মাণ করেন।
লালবাগ কোর্ট থেকে এক কিমি দক্ষিণে লালবাগ-বহরমপুর সড়কের কিছু পূর্বে মতিঝিল। আলিবর্র্দি খার জ্যেষ্ঠ জামাতা ঘসেটি বেগমের (মেহেরুেন্নসা) স্বামী নবাব নওয়াজেস মহম্মদ খা এই অতি সুদৃশ্য ঝিল এবং তার তীরে ‘সাংহী দালান’ নামে এক প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এখন তা অবলুপ্ত। নওয়াজেস খা (১৭৫০-৫১) ‘কালা মসজিদ’ নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যা মতিঝিল মসজিদ নামেও পরিচিত। মসজিদ চত্বরে নওয়াজেস মহম্মদ খা ও সিরাজের কনিষ্ঠ ভ্রাতা এক্রামউদ্দৌলার সমাধি রয়েছে।
লালবাগ সদর ঘাট থেকে এক কিমি দক্ষিণে ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে খোশবাগ। এখানে নবাব আলিবর্র্দি (১৭০৪-৫৬) ও সিরাজউদ্দৌলার সমাধি ছাড়াও সিরাজের বেগম লুৎফুেন্নসা, সিরাজের অনুজ মির্জা মহম্মদের সমাধি রয়েছে।
ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে ডাহাপাড়ায় অতীতের আর কিছু নেই। তবে এখন জগদ্বন্ধু আশ্রমটি ডাহাপাড়ার অতীত গৌরব রক্ষা করছে।
ডাহাপাড়া থেকে প্রায় চার কিমি পশ্চিমে কিরীটেশ্বরী মন্দির মুর্শিদাবাদের প্রাচীনতম দেবস্থান। এখানে দেবীর কিরীট পড়েছিল বলে এটি একটি পীঠস্থান বা মতান্তরে উপপীঠ।
লালবাগ সদর ঘাট থেকে প্রায় ৪ কিমি পশ্চিমে ভট্টমাটি বা ভট্টবাটিতে অবিস্থত পোড়ামাটির তৈরি পঞ্চরত্ন রেত্নশ্বর শিব মন্দির।
যাতায়াত
কলকাতা থেকে বহরমপুর ১৯০ কিমি পথ।
– সড়ক পথে কলকাতা এসপ্ল্যানেড থেকে সরকারি বা বেসরকারি বাসে বহরমপুর।
– রেলপথে শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে বহরমপুর স্টেশন।
– বহরমপুর থেকে মুর্শিদাবাদ শহরের দূরত্ব ১৬ কিমি। স্টেশন থেকে মুর্শিদাবাদ শহরে যাওয়ার জন্য অটো-ট্রেকার-বাস রয়েছে।
– মুর্শিদাবাদ শহরে পৌছে ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো যেতে পারে।
আস্তানা
– বহরমপুরে নামী-দামি বিভিন্ন হোটেল ছাড়াও সরকারি ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে।
– মুর্শিদাবাদেও হাজারদুয়ারি লাগোয়া ভাগীরথীর তীরে বেশ কিছু হোটেল রয়েছে।
– এখানে রয়েছে যুব আবাসও। যুব আবাসে থাকার জন্য আগাম ঘর বুকিং করতে হবে।
– সরকারি লজে বুকিং-এর জন্য যোগাযোগ করুন:
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম
৩৩/২ বি বা দী বাগ (পূর্ব)
কলকাতা-৭০০ ০০১
ফোন: (০৩৩) ২২৪৩ ৭২৬০, (০৩৩) ২২১০ ৩১৯৯
মোবাইল: ৯৮৭৪০ ২৬৯১৪, ৯৮৩৬৭ ৬৯১৯৬
যুব আবাস ছাড়া সব ক্ষেত্রেই এসি-নন এসি ঘর রয়েছে। ডর্মিটারির সুবিধাও মিলবে।
No comments:
Post a Comment