Wednesday, July 2, 2014

মেঘনা-সুরমা-কুশিয়ারার রূপের মহিমা

কুশিয়ারার জলের বুকে রাতদিন থাকা। সূর্য ডোবা আর সূর্যাস্ত দেখা। এভাবেই কাটল কয়েক দিন। সেই যাত্রার কথা বলি এবার।
চার দিনে মেঘনা-সুরমা-কুশিয়ারা নদীপথে কত-শত রূপের মহিমায় হারিয়েছে মন! যাত্রাপথে দেখা হয়েছে হাওড়ের বিশাল ও বিস্তীর্ণ জলরাশি সঙ্গী করে বেঁচে থাকা মানুষের জীবন, জলমাখা জেলেদের মাছ ধরা, হাওড়ের জলে সবুজ গাছের মাথাটুকু তুলে থাকা। রাতের নির্জনে শিয়ালের হাক, লক্ষ্মীপেঁচার ডাকাডাকি, আরও কত দৃশ্য।
দক্ষিণের মেঘনাকে দেখা হয়েছে অনেক অনেকবার। কিন্তু মেঘনার যেখানে শুরু সেই পথে এবার যাত্রা। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা সিইজিআইএসের নদী-গবেষকদের দলে জায়গা হয়েছিল আমার।
রাত নয়টা ত্রিশে পৌঁছে গেলাম ভৈরব সেতুর কাছে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষারত গাইড টুরসের জলযান এমভি ছুটি। স্পিডবোটে করে আমরা সবাই উঠে পড়লাম ছুটিতে।
নদীর বুকে রাতের বাতাস দারুণ লাগছে।
মেঘনায় ভোর হলো সোয়া পাঁচটায়। সারি সারি নৌকা, ট্রলার, কার্গো জাহাজ চলছে মেঘনার বুকে। এসব ট্রলার যাবে সুরমা হয়ে হাওড়ের নানা জনপদে কয়লা, পাথর পরিবহন করতে। কোনোটাতে আছে হাওড়বাসীর দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস। কোনোটিতে শুধুই মাছ।
ভৈরব বাজার পার হয়ে একসময় এমভি ছুটি চলে আসল মিঠামইনের দিকে। নদীতে তখন ঢেউটা একটু বেশিই ছিল। চারদিক যেন সাগরের মতো। নদী-হাওড়ে একাকার।
নদী-গবেষণার কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছিল নদীবিষয়ক ক্লাস ও গাঙ্গেয় শুশুক গণনার কাজ। আমরা তারপর সুরমা নদীর একটি চ্যানেল হয়ে কুশিয়ারা নদীতে পড়ি। তার আগে দেখা গেল হাওড়বাসীর জীবনধারার নানা রূপ। কীভাবে তারা ঘরবাড়ি, স্কুল রক্ষাব্যবস্থা নিয়েছেন পাহাড়ি এ জলরাশি ও ওয়েভ ভূমিক্ষয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। এরই মধ্যে রাত নেমে পড়লে নোঙর ফেলল আমাদের জলযান।
অনেক রাত, একঝাঁক নিশিবক উড়ে যাচ্ছে কোথাও। লক্ষ্মীপেঁচার কর্কশ ডাক শুনলাম রাতজুড়ে। সকালের আলো ফুটলে তাদের আর সাড়াশব্দ নেই। নীল আকাশের বুকে দেখলাম সাদাবকের উড়ে যাওয়া। প্রতিদিনের মতো আজও ছুটি ছাড়ল ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে। একমুখী স্রোতের বিপরীতে অনেক সময় লাগে, তাই সকাল সকালই যাত্রা শুরু। আমাদের গন্তব্য শেরপুর।
তারপর আবার একই পথ ধরে ভৈরবে ফিরে আসা। আমরা যতই উজানের দিকে যাই, নদীর দু-কূল স্পষ্ট হয়। কাটখাল হয়ে আজমেরিগঞ্জ আসার পর দেখা গেল জেলেদের নানা রকম মাছ ধরার কারসাজি। ১০ জন জেলে বড় একটি নৌকার গুণ টানছে কুশিয়ারাতে জাল ফেলে। জেলেদের কাছে গিয়ে পাওয়া গেল বিশাল রুই, ইলিশ আর রানি মাছ।
সন্ধ্যা নামল কুশিয়ারার বুকে। বিকেলের সূর্যডোবা এবারই প্রথম দেখা হলো কুশিয়ারার মাঝখানে বসে। আমরা বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের কাছাকাছি। নদীতে তখন গাঢ় অন্ধকার। একঝাঁক শিয়ালের হাঁক শোনা গেল।
সকালে শেরপুর গিয়ে নদীগবেষণার কাজ শেষে আবার সেই একই পথেফেরার পালা। আর সেটি ছিল আরও স্বপ্নময়।
কীভাবে যাবেন
আগ্রহী পর্যটক থাকলে গাইড টুরস মেঘনা থেকে কুশিয়ারা কিংবা হাওড় এলাকায় ভ্রমণ প্যাকেজ পরিচালনা করে। সাধারণত সুরমা-কুশিয়ারাতে নদীপথে ভ্রমণ করতে চাইলে ভৈরব সেতু অথবা নারায়ণগঞ্জ থেকে জলযানে উঠতে হবে। আবার ঢাকার সদরঘাট থেকেও উঠতে পারবেন। তবে কয়েক দিন সময় নিয়ে বের হওয়াই ভালো। অন্যান্য বেসরকারি পর্যটন সংস্থাও এমন ভ্রমণ আয়োজন করতে পারেন।

No comments:

Post a Comment